ঢাকা : পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব নিয়ে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে ৬ দিনব্যাপী শুনানি শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এই শুনানির দ্বিতীয় দিনে অংশ নেয় বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সামনে এক ঐতিহাসিক বিবৃতি প্রদান করেন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মৌখিক শুনানিতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, দীর্ঘ ২৩ বছর লড়াই করার পর ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জন করে। ওই যুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। স্বাধীন বাংলাদেশের জনক, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘... পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের দলে।’
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, আমাদের সংবিধান আমাদের বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত জনগণকে সমর্থন করতে বাধ্য করে- যারা সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এটি আমাদের সংবিধানের ২৫(গ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য গুরুতর মানবিক সহায়তা এবং রাফা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি প্রত্যাশা করে, যেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শিশু। রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, চলমান যুদ্ধ আধুনিক যুগের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক ও বিপর্যয়কর অধ্যায়।
হাজার হাজার নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে শিশুদের হত্যা, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস, তাদের পূর্বপুরুষের জমি দখল এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের খাদ্য ও পানির প্রবেশাধিকারের প্রতিবন্ধকতা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিগত নির্মূলের নিকৃষ্ট উদাহরণ।
বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সাধারণ পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত প্রশ্নগুলির উপর একটি উপদেষ্টা মতামত নিঃসন্দেহে অবৈধ দখলদারিত্বের অবসানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং যৌক্তিক পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হবে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর ইসরায়েলের সহিংস পদক্ষেপের মূল কারণের সমাধান সম্ভব।
ইসরায়েলের চালানো সহিংস সামরিক পদক্ষেপ কেবল জাতিসংঘ সনদেরই লঙ্ঘন করে না বরং সাধারণ আন্তর্জাতিক আইনেরও লঙ্ঘন। ইসরায়েলের এই পদ্ধতিগত লঙ্ঘনগুলি ফিলিস্তিনি জনগণ এবং তাদের অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করে। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং প্রাসঙ্গিক জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুসারে একটি ন্যায্য এবং স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে বাধা দেয়।
আইনের ভিত্তিতে কূটনৈতিক মীমাংসার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ১৯৪৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় ছিলো বলে বাংলাদেশ বিবৃতিতে উল্লেখ করে।
রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য তার নিজস্ব সংগ্রামের কথা স্মরণ করে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ধারাবাহিক এবং চূড়ান্তভাবে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।
বাংলাদেশ চায়, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করা হোক। এই অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে- আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিজ ভূখণ্ডে প্রত্যাবর্তনের অধিকার, ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করা এবং ইসরায়েলের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হিসেবে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে সহাবস্থান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পাশাপাশি সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, চিলিসহ ১১টি দেশ আদালতে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। সূত্র: ইউএনবি
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :