• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭৩তম জন্মদিনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ


মানিক বৈরাগী জানুয়ারি ১১, ২০২১, ১০:৪৮ এএম
৭৩তম জন্মদিনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

ঢাকা: কৈশোর তারুণ্যে একজন স্বপ্নমুখর তরুণ শিক্ষার্থী তার জৈবিক মানসিক তাড়নায় প্রাকৃতিক নিয়মেই ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী চঞ্চল চপলা তরুণী তন্বীর প্রেমে হাবুডুবু খায়, স্বপ্ন দেখে, রাত জেগে আবেগাপ্লুত হয়ে চিঠি লেখে।

আমার সহপাঠীদের মধ্যে খুব বেশি মেধাবী যে ছাত্রটি সে তার পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য দিন-রাত বই নিয়ে বিভিন্ন স্যারের বাসায় গিয়ে কোচিং ক্লাস করছে, যে প্রেমিক তরুণটি প্রতিদিনকার ক্লাসে খুব পরিপাটি ড্রেসিং করে ক্লাসে আসত, শৌখিন হাতে থাকত জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন অথবা মাইকেল জ্যাকসনের ছবি প্রিন্ট করা টি-শার্ট পরত, বিরতির সময়ে ক্যান্টিনের সবচেয়ে নীরব জায়গায় গোলাপ হাতে বসে অপেক্ষা করত কোনো লাইলির জন্য অথবা লাইব্রেরির বইয়ের আলমিরার পেছনের টেবিলে বসে বই পড়ার ছলে কোনো পার্বতীর জন্য অপেক্ষা করত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই খোলা রেখে, নয়তো কলেজদিঘির আমতলায় পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন বই নিয়ে-এসব কোনো কিছুই আমি কিংবা আমাদের জীবনে আসেনি। যে তরুণ ছাত্র রাত জেগে তার প্রেমিকার জন্য চিঠি লিখছে, তখন হয়তো আমরা রাত জেগে দেয়ালে চিকা মারছি ‘মুজিব হত্যার পরিণাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম’।

আমরা যখন কলেজে পড়ি, তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় স্বৈরাচার লেজেহুমু এরশাদ, চারদিকে অবরোধ হরতাল, ছাত্রধর্মঘট, মিছিল, পুলিশ, টিয়ারগ্যাস। কখনো মনের অজান্তেই ক্লাসের অবসরে কলেজ ক্যাম্পাসে স্লোগানমুখরিত মিছিল করছি, গগনবিদারী স্লোগান ধরছি ‘দৌলতের রক্ত বৃথা যেতে পারে না, শিক্ষা শান্তি প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি’। এমন কত হাজারো স্লোগানে মুজিব-প্রেমে সময় গড়িয়ে গেল টেরই পাইনি, যে প্রেম অক্ষয় অমর। আজ সেই প্রেমেরই খানিক স্মৃতি গদ্যে লিখতে বসে কত চেনামুখ ভিড় করছে মনের ক্যাম্পাসে।

আমার পড়ার টেবিলের সামনে মুলিবাঁশের দোয়ানা বেড়ার খুঁটিতে পেরেকঠোকা একটি ছবি ঝুলে আছে, সেই ছবিজন আর কেউ নন-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পাশে আছে তেজগাঁও বিমানবন্দর মাটিলগ্ন কান্নারত দু’হাতে মোনাজাতের একটি নারীর ছবি, সেই ছবিজন আর কেউ নন-দেশরত্ন শেখ হাসিনা, আজকের প্রধানমন্ত্রী। যখন সন্ধ্যাবেলায় পড়ার টেবিলে বসতাম বাড়ির সামনে আরাকান সড়ক, আরাকান সড়কে চলছে মশাল মিছিল, স্লোগান হতো— ‘শেখ হাসিনার কিছু হলে/জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে/চেতনার অগ্নিবীণা/ জননেত্রী শেখ হাসিনা’।

হঠাৎ সাইরেন বাজিয়ে একদল পুলিশ লাঠি হাতে তাড়া করছে মিছিলের সংগ্রামীদের, মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল, এসব আমি দেখি কাছারি ঘরের জানালা দিয়ে। এসব দেখতে দেখতে আর মন বসত না পড়ার টেবিলে। আমি খুব ছোট, প্রাইমারি স্কুলে পড়ি, স্বৈরাচার খুনি জেনারেল জিয়া ক্ষমতায়, সারা দেশে ঘরোয়া রাজনীতির আবহ চলছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জহুরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে চকরিয়া পাইলট (সরকারি) উচ্চবিদ্যালয়ের বারান্দায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পুনর্গঠন সভা হলো, ঢাকা থেকে উপর্যুক্ত নেতারা এসেছিলেন, সেই মিটিংয়ে আমার মেজো-সেজো দুই ভাই যোগদান করালো, উভয়ই পড়ত শাহ উমরাহবাদ উচ্চবিদ্যালয়ে। সেই মিটিংয়ে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন হলো, ওই কমিটিতে আমার সেজো ভাই জহির আলমকে যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত করা হলো, সম্ভবত অকাল প্রয়াত সাংবাদিক সিরাজুল হক (হাজিয়ান বাড়ি)-কে আহ্বায়ক অথবা বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল।

এখন ঠিক মনে পড়ছে না, সেদিন রাতেই ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরে পুলিশ এলো, ঘুম থেকে ডেকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেল, আমি নাকি সেদিন পুলিশ দেখে ভয়ে মূর্ছা গিয়েছিলাম। এসব কথা আমার মা-ভাইদের মুখ থেকে শোনা। তো যে কথা বলতে চেয়েছি, সেই শৈশব থেকেই পুলিশ, গ্রেপ্তার, মিছিল মিটিং, হরতাল, পিকেটিং, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, কামাল, জামাল, রাসেল, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, সিপিবি, ন্যাপ, আটদলীয় জোট দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে কখন যে মনের অজান্তেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি নিজেই বুঝতে পারিনি।

আমার যৌবন-কৈশোরে প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা আবেগের ধমনিতে মিশে একাকার হয়েছে নিজেরই অজান্তে তা সন-তারিখ গুনে বলা সম্ভব নয়। সেই পবিত্র আবেগ-প্রেমের অবিচ্ছেদ্য ছাত্র সংগঠনটির নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। যে প্রেম শুধু কাছে টানে, আবেগে বিরহে বেদনায় জড়িয়ে ভালোবাসতে জানে কিন্তু দূরে ঠেলে দিতে জানে না, তার কারণ এই ছাত্রসংগঠনের আছে শিক্ষা শান্তি প্রগতি তিনটি মূলনীতি। যে সংগঠনের দার্শনিক পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর চেতনায় শাণিত সাংগঠনিক নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বৃহত্তম ছাত্র সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার ৭৩তম জন্মদিন পালন করেছে। ছাত্রলীগের জন্মদিন এলেই ভুলে যাই না পাওয়ার বেদনা, মনে থাকে না ফেরারি পুলিশি রিমান্ড জেলের কথা, ভাসি আবেগ-উচ্ছ্বাসে। তাই আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি— ‘আমার তারুণ্যের প্রেমের ঠিকানা ছাত্রলীগের নিশানা/আমার প্রেম বিরহের বেদনার ভাষা শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি/পিতা মোদের শেখ মুজিব নেত্রী মোদের শেখ হাসিনা’।

বাংলাদেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা, মুক্তির শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্মদিনে অফুরান ভালোবাসা, প্রাণোচ্ছল শুভেচ্ছা। এই ছাত্রলীগের চরম দুর্দিনের একজন নগণ্য প্রেমিক কর্মী হিসেবে ভাসছি আবেগ-উচ্ছ্বাসে। আর তাই নিজেকে ধন্য মনে করছি।

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা

 

 

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!