• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ক্ষমতাহীন পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ, কতটা প্রয়োজন?


মো: পলাশ সেপাই, সাংবাদিক আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম
ক্ষমতাহীন পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ, কতটা প্রয়োজন?

ঢাকা : দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার। মানুষের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসলেও শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট আখ্যা নিয়ে দেশে থেকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। 

ক্ষমতার দাপট, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নিপীড়ন আর নির্যাতনের পাশাপাশি নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি তো আছেই। এছাড়াও অল্প টাকায় দেশের জনগণের মাঝে ভোগ্যপণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি তো সেই ৯৬ সালে সরকার গঠনের আগেই দিয়েছিলেন। গুম, খুন, নিপীড়ন আর নির্যাতন বাস্তবায়ন করতে পারলেও জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কার্যত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

আর এসবের শেষ পরিণতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে দেশে থেকে পালিয়ে পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নেওয়া। হাসিনার পালানোর পর দেশের প্রয়োজনে, দেশের মানুষের প্রয়োজনে সরকার প্রধানের দায়িত্বে আসেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সামলাতে কাজ শুরু করেন। 

দাবি উঠে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের। রাষ্ট্র বির্নিমাণে গঠন করে হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। এখানেই কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি তোলে।

রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ৩১ জুলাই জানায়, পিআর পদ্ধতিতে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্তের কথা। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই তথ্য জানান।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘উচ্চকক্ষ গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। দীর্ঘ আলোচনার পরও ঐকমত্য না হওয়ায় উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতি নির্ধারণের দায়িত্ব কমিশনের ওপর ন্যস্ত হয়। সেই অনুসারে কমিশন পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।’
 
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। তবে অর্থবিল বাদে সংসদে উত্থাপিত সব বিল উচ্চকক্ষে পাঠাতে হবে। উচ্চকক্ষ ওই বিলগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। কোনো বিল যদি এক মাসের বেশি সময় আটকে থাকে, তবে সেটি অনুমোদিত বলে গণ্য হবে।

উচ্চকক্ষ যদি কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তবে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠানো হবে। নিম্নকক্ষ চাইলে সেই সংশোধন আংশিক বা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারবে, আবার সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যানও করতে পারবে।

কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণার সময় উচ্চকক্ষের প্রার্থীও চূড়ান্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের ১০ শতাংশ নারী কোটা বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে পদ্ধতিতে সংসদে সরাসরি ৩০০ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এরপর দলগুলোর আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রেক্ষিতে সংরক্ষিত ৫০ জন নারীকে সংসদে আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যা কিছুটা পিআর পদ্ধতির মতোই। তবে এক্ষেত্রে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যরা সংসদের সব বিলে সরাসরি অংশ নিতে পারেন।

কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্যের কাছে নিম্নকক্ষের অর্থ বিল বাদে সব বিল প্রেরণ করা হবে। উচ্চ কক্ষের সদস্যরা এসব বিল গ্রহণ করতে পারবেন আবার প্রত্যাখ্যানও করতে পারবেন। তবে সময় পাবেন এক মাস। এই এক মাসের মধ্যে তারা কোনো বিল গ্রহণ না করলে তা অনুমোদিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। এছাড়া উচ্চ কক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না। অর্থাৎ ক্ষমতাহীন উচ্চকক্ষ। 

বিষয়টি কেমন যেন হয়ে গেল না। আমার প্রয়োজন না থাকতেও আমি ঘরে বাড়তি কাজের লোক রেখে কোনো কাজ না করিয়েই বেতন, বোনাস, গাড়ি, বাড়ি দিচ্ছি। অর্থাৎ আমার পকেটের টাকা বিনা কারণেই খরচ করছি। বিষয়টা এমন হয়ে যাচ্ছে কি? 

পিআর পদ্ধতির উচ্চ কক্ষের সদ্যসরা যদি সরাসরি নিম্ন কক্ষের কোনো বিলে আস্থা বা অনাস্থায় অংশ নিতে পাররেন সে ক্ষেত্রে সংসদে তাদের ভূমিকা জোরালো হতো। নিম্ন কক্ষের যে কোনো অনৈতিক কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন। কিন্তু তাদের তো ক্ষমতাহীন করে রাখা হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাক্ষ্মিত নয়।

এছাড়াও ক্ষমতাহীন উচ্চ কক্ষের প্রতি সদস্যেদের জন্য দেশের জনগণের দেয়া রাজস্ব থেকে লাখ লাখ টাকা বেতন দিতে হবে। তাদের জন্য গাড়ি, বাড়ি বরাদ্দ রাখতে হবে। গাড়ির চালক, পিএস, এপিএস, গাড়ির জ্বালানি খরচ, বাসার কাজের লোক এছাড়া আরও কত কি। 

এসবের পিছনে সরকারের প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। এই টাকা সরাসরি জনগণের কাছ থেকে আদায় করা ট্যাক্স বা রাজস্ব আয় থেকে ব্যয় করা হবে। এটা অপচয় ছাড়া কোনো উপকারে আসবে বলে মনে হচ্ছে না।

সুতারাং আমাদের ভালো করে ভেবে চিন্তে সংসদে উচ্চ কক্ষের বিধান বা উচ্চ কক্ষ চালু করতে হবে। যাতে করে দেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ বিনা প্রয়োজনে ব্যয় হয়।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!