• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইবাদতে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০৯:৪৪ পিএম
ইবাদতে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া

ঢাকা : রমজানের প্রথম দিন কোরআন তেলাওয়াত আর ইবাদত-বন্দিগী করে সময় কাটাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বুধবার (১৪ এপ্রিল) খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম এ কথা জানিয়ে বলেন, রমজান মাস বুঝতেই পারেন, এখন কোরআন তেলোয়াত, তজবীহ তাহরিমা, দোয়া দরুদ, নামাজ পড়ে সময় কাটছে তাঁর (খালেদা জিয়া)।

সেলিমা ইসলাম বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা চলছে। এটুকু বলতে পারি যে, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল, ভালো ইম্প্রুভ করছে। আপনারা ওনার জন্য দোয়া করবেন। টেলিফোনে আমরা কথা-বার্তা বলছি নিয়মিত।

ছোট ভাইয়ের বাসা থেকে ইফতারি যাচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আত্মীয়-স্বজন কেউ বাসায় আসছেন না। তারা টেলিফোনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন নিয়মিত। ভাইদের বাসা থেকে তার জন্য খাবার নিয়ে আসা হয়।

গত রোববার খালেদা জিয়ার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক একটি টিম চিকিৎসা করছেন।

কেমন আছেন করোনা আক্রান্ত খালেদা জিয়া : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তার (খালেদার) শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। স্বাভাবিকভাবেই তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। শুধু তিনি নন, করোনা আক্রান্ত তার অন্য স্টাফদের অবস্থাও ভালো।

সোমবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে ডা. জাহিদ বলেন, ২৪ ঘণ্টাই ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনি সুস্থ আছেন। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় দ্বিতীয় তলার একটি রুমে আছেন তিনি। রাতে লন্ডনে অবস্থানরত ছেলে তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সদস্যরা অনলাইনে ভিডিওকলে তার সার্বিক শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। এছাড়া ফিরোজায় অবস্থানরত খালেদার ব্যক্তিগত স্টাফদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দর ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।

ডাক্তারদের একটি সূত্র জানায়, এখন প্রতিদিন নিয়ম করে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী ও ড. মামুন। আর লন্ডন থেকে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বড় ছেলের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। এছাড়া খালেদা জিয়ার অন্যান্য ডাক্তার এবং ড্যাবের চিকিৎসকরাও তার খোঁজ রাখছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ডাক্তাররা জানিয়েছে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। তার জ্বর, গলা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট কোনো উপসর্গই নেই।

রোববার (১১ এপ্রিল) রাতে খালেদা জিয়াকে দেখে এসে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. মামুন জানান, খালেদা জিয়ার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। তার বাসার অন্য স্টাফরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে বাড়তি সর্তকতার জন্য তার করোনা টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

তিনি আরও বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার বাসা ফিরোজাকে একটি মিনি হাসপাতাল বানানো হয়েছে। সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে দরকারি সব চিকিৎসা-সরঞ্জাম আছে। তারপরও বাড়তি সর্তকতা হিসেবে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার জন্য আইসিইউসহ কেবিন বুকিং দেওয়া আছে।

রোববার (১১ এপ্রিল) খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে দলের পক্ষ থেকে স্বীকার হয়নি। পরে বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত বলে জানান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি ভালো আছেন।

খালেদা জিয়ার জন্য হাসপাতালে আইসিইউ বুকিং : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী ফাতেমাসহ ৯ জন করোনায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তার ভাগ্নে ডা. মামুন। রোববার (১১ এপ্রিল) খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে দেখে এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

মামুন জানান, খালেদা জিয়ার কোনো উপসর্গ নেই। কিন্তু তার গৃহকর্মী ফাতেমাসহ ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তারও পরীক্ষা করা হয়। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে প্রথমদিকে তার করোনা আক্রান্তের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল।

তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার কোনো উপসর্গ না থাকলেও জরুরি পরিস্থিতির জন্য রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিইউসহ কেবিন বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে আইসিডিডিআরবি’র পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রোববার তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান নিশ্চিত করেন।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, কয়েকদিন ধরে খালেদা জিয়া জ্বর-ঠান্ডায় ভুগছিলেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল আইসিডিডিআরবি’র একটি প্রতিনিধি দল তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। আজ তার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এক চিকিৎসক বলেন, আসলে বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক যে অবস্থা তাতে হাসপাতালেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কিন্তু এটা তো আর আমি চাইলে হবে না, কারণ তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে আছেন বড় ছেলের বউ। তাকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া সাধারণত ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এখনও যদি তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়, তাহলে এই হাসপাতালেই নেবেন। সেই অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করা আছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!