• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘাতের শঙ্কা নাসিক নির্বাচনে


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৪, ২০২২, ১২:৪৭ পিএম
সংঘাতের শঙ্কা নাসিক নির্বাচনে

ঢাকা : নারায়ণগঞ্জ সিটি করোপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র দুইদিন বাকি। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন ভোটাররা।

তাদের আশঙ্কা, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে কিছু ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারেন।

আলোচনার শীর্ষে থাকা দুই মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভি ও তৈমুর আলম খন্দকারও নির্বাচনি সহিংসতার আশংকা প্রকাশ করেছেন। এবার নারায়ণগঞ্জ শহরের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ১৪৮ জন কাউন্সিলর পদের জন্য লড়ছেন।

এছাড়া ৯টি সংরক্ষিত আসনের জন্য ৩৪ জন নারী প্রার্থীও নির্বাচনে লড়বেন।

এদিকে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বন্দর এলাকার একভোটার জানান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সবাই নির্বাচনে জেতার জন্য জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই কাউন্সিলর নির্বাচন ঘিরে গোলযোগের আশঙ্কা রয়েছে। একজন প্রার্থীর সমর্থকরা ইতোমধ্যে তাদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন।

এক নম্বর ওয়ার্ডের এক ভোটার জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনি প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে এই ওয়ার্ডের ২ মূল কাউন্সিলর প্রার্থী ওমর ফারুক ও মাহমুদুর রহমানের সমর্থকরা বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। তাই এ ধরনের দ্বন্দ্বের কারণে ভোটের দিন গোলযোগের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

পনেরো নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অশির বরণ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, কয়েকজন প্রার্থী ভোট কেনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। একদল মানুষ গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারেন। আমি নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার উদ্বেগের বিষয়ে লিখিতভাবে জানাবো।

বাইশ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদপ্রার্থী ইশরাত জাহান খান স্মৃতি জানান, যেহেতু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, কিছু গোলযোগের সম্ভাবনা তো রয়েছেই। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু প্রার্থী ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তাদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন এবং প্রতিপক্ষের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন।

এদিকে, শহরের বেশ কিছু এলাকায় নির্বাচনি সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বলছেন, হয়রানির কারণে নির্বিঘ্নে প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না তিনি।

গতকাল আইভী নগরীর দেউভগ এলাকায় ভোট প্রচার শুরু করেন। এসময় তিনি সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখার কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, প্রশাসন তার পক্ষে কোনো দিন ছিল না। জনতাই তার ভালোবাসার পয়গাম।

তিনি বলেন, আমি সব সময় জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। জনগণ যেহেতু আমার পাশে, আমি কেন বাড়তি সুবিধা নিতে যাব।

আইভী আরো বলেন, তিনি তো জনবিচ্ছিন্ন কেউ নন। কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে সেটি নিশ্চয় প্রশাসন দেখবে। এটা তার দেখার বিষয় নয়। তাকে জনগণের কাছে যেতে হবে, জনতার কাছে ভোট চাইতে হবে। আইনশৃঙ্খলার যদি কোনো সমস্যা হয়, সেটা প্রশাসন দেখবে।

এ সময় ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে নগরবাসী ভোট দিতে যাবেন। গত দুটি সিটি নির্বাচনেও টান টান উত্তেজনা ছিল। কিন্তু ভোটের দিন নগরবাসী শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছে। পরিবেশ সুন্দর ছিল। নির্বাচনের পরিবেশ যেন সুন্দর থাকে, প্রশাসনের প্রতি সেই আহ্বান জানান তিনি।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, আমি জানি না কাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি তাদের নাম বলুক। আমি একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানি, যাকে হেফাজতের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আর কাকে ধরেছে, কী করেছে, সেটি আমি জানি না। শহরে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সেটি দেখভালের দায়িত্ব প্রশাসনের। আমি কোনো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নই। আমি কাউকে বলিওনি, ওকে ধরেন।

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী উল্লেখ করে আইভী বলেন, মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তারা কাকে ভোট দেবেন। নারায়ণগঞ্জে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার দ্বিগুবাবুর বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।

এসময় নির্বাচনের আগে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার হয়রানির বন্ধের দাবি জানানতিনি। নির্বাচন কমিশনার ও পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নির্বাচনকে আপনারা দয়া করে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।

তৈমুর আলম অভিযোগ করেন, তার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি ও হয়রানি করছে। তার নির্বাচনি এজেন্ট ও যারা তার সমর্থনে কাজ করছেন, তাদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার রাতে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য তার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা তো আছেই। এখনো গায়েবি মামলার হয়রানি কাটেনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তৈমুর আলম বলেন, আপনার পুলিশ হয়রানি করছে। ১৬ তারিখে ভোটের পর আইন যা বলে, আপনি তা করবেন। কিন্তু নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হতে দেন। সুষ্ঠুভাবে যে নির্বাচন হচ্ছিল, সেটা বাধাগ্রস্ত হতে দেবেন না।

নির্বাচনে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে তৈমুর বলেন, সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে হয়ে কাজ করছে পুলিশ। অন্যদিকে তার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হয়রানি করছে। এটা অব্যাহত থাকলে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট হবে। গত কয়েক দিনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কসহ ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিদেশি দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তৈমুর বলেন, ‘বিদেশি দূতাবাসে যারা আছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করব, আপনারা নির্বাচনের দিন মাঠে থাকেন।

দেশি-বিদেশি মিডিয়ার উদ্দেশে বলেন, আপনারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।

পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ১৬ জানুয়ারি জনগণ ভোট দেবেন। জনগণের রায়ে তিনি জয়ী হবেন।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৭ শূন্য আসন ও বিভিন্ন জেলার পাঁচটি পৌরসভার নির্বাচনের কারণে আগামী রোববার এলাকাগুলোয় সব তফসিলি ব্যাংকের শাখা-উপশাখা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে সার্কুলার জারি করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, জাতীয় সংসদের ১৩৬ টাঙ্গাইল-৭ শূন্য আসন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী, যশোর জেলার ঝিকরগাছা, নাটোর জেলার নাটোর ও বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট হবে।

ভোটের দিন নির্বাচনি এলাকাধীন যেসব স্থাপনা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার বা নির্বাচনি কার্যক্রমের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেসব স্থাপনায় ব্যাংকের কোনো শাখা বা উপশাখা থাকলে তা বন্ধ থাকবে।

সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকাধীন ব্যাংকের শাখা-উপশাখাগুলোয় কর্মরত ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগদানের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!