• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

কম খরচে সহজ ভিসা, পাসপোর্ট নিলেই যেতে পারবেন যে দেশে


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
কম খরচে সহজ ভিসা, পাসপোর্ট নিলেই যেতে পারবেন যে দেশে

ফাইল ছবি

ইউরোপের অনেক জনপ্রিয় দেশের তুলনায় এস্তোনিয়া এখনও পরিচিতির দিক থেকে খুব আলোচিত নয়। তবে প্রযুক্তি, শিক্ষা, ডিজিটাল জীবনধারা ও স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমে দ্রুত উন্নতি দেশটিকে নতুনভাবে তুলে ধরছে। তুলনামূলক সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ নীতিমালা এবং কম খরচের কারণে বাংলাদেশিদের জন্য এস্তোনিয়া এখন অন্যতম সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠছে। পর্যটন, পড়াশোনা, ডিজিটাল নোম্যাড বা উদ্যোক্তা- সব ক্ষেত্রেই এস্তোনিয়ার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ বলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ থেকে সাধারণত দুটি ভিসার জন্য আবেদন করা হয়- শেনজেন স্বল্পমেয়াদি টাইপ সি ভিসা, যা সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকার অনুমতি দেয়, এবং দীর্ঘমেয়াদি ডি ভিসা, যা পড়াশোনা, কাজ, গবেষণা বা দীর্ঘস্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেয়। পড়াশোনা বা চাকরির ভিত্তিতে রেসিডেন্স পারমিটও পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে এস্তোনিয়ার দূতাবাস না থাকায় আবেদন জমা দিতে হয় ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত দূতাবাসে বা ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে। কিছু ক্ষেত্রে ঢাকার জার্মান দূতাবাস এস্তোনিয়ার শেনজেন টাইপ সি ভিসা প্রক্রিয়া করে। তবে এটি কেবল সরকারি পাসপোর্টধারী বা অফিসিয়াল ডেলিগেশনের জন্য সীমিত। সাধারণ পর্যটক বা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আবেদন গ্রহণ করা হয় না। তাই অধিকাংশ আবেদনকারীকে নয়াদিল্লির দূতাবাস বা ভিএফএস সেন্টারেই যেতে হয়।

আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় অনলাইনে eelviisataotlus.vm.ee ওয়েবসাইটে ফরম পূরণের মাধ্যমে। এরপর ভ্রমণ পরিকল্পনা, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, ফ্লাইট ও হোটেল বুকিংসহ প্রয়োজনীয় সব নথি প্রস্তুত করতে হয়। সাক্ষাৎকারে যাত্রার উদ্দেশ্য, আর্থিক সামর্থ্য ও অতীত ভ্রমণ ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে। শেনজেন টাইপ সি ভিসা সাধারণত ৭ থেকে ১৫ কর্মদিবসে প্রক্রিয়া হয়, আর দীর্ঘমেয়াদি ডি ভিসা ৩০ দিনের মধ্যে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে অনুমোদনের হারও বেশি।

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথির মধ্যে রয়েছে বৈধ পাসপোর্ট, পূরণকৃত ফরম, দুই কপি বায়োমেট্রিক ছবি, ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও সলভেন্সি সার্টিফিকেট, ৩০ হাজার ইউরো কভারেজের ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং, ইনভাইটেশন বা কাভার লেটার এবং চাকরি বা পড়াশোনার নথি। স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে অ্যাডমিশন লেটার, টিউশন ফি জমার কাগজ ও মোটিভেশন লেটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাংকে প্রদর্শনযোগ্য অর্থও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। স্বল্পমেয়াদি ভিসার ক্ষেত্রে দৈনিক অন্তত ৭০ মার্কিন ডলার দেখাতে হয়। আর স্টুডেন্ট ভিসার জন্য এক বছরের জীবনযাত্রার খরচ হিসেবে কমপক্ষে ৯ হাজার ৬০০ ইউরো বা প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দেখাতে হয়। এতে দেখা যায়, এস্তোনিয়ার ভিসায় আর্থিক প্রমাণ থাকা জরুরি হলেও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় এটি তুলনামূলক সহজ।

ভিসা খরচও বেশ সাশ্রয়ী। শেনজেন ভিসার ফি ৯০ ইউরো, দীর্ঘমেয়াদি ডি ভিসার ফি ১২০ ইউরো এবং ভিএফএস সার্ভিস চার্জ সর্বোচ্চ ৩০ ইউরো। এছাড়া ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, ফ্লাইট বুকিংসহ অন্যান্য খরচ যুক্ত হয়।

কেন এস্তোনিয়ার ভিসা তুলনামূলক সহজ-তার পেছনে আছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক আবেদন ব্যবস্থা, স্বচ্ছ ডকুমেন্ট যাচাই, স্টুডেন্ট ভিসায় কম প্রত্যাখ্যান হার এবং ডিজিটাল নোম্যাড ও স্টার্ট-আপ ভিসায় ইতিবাচক নীতিমালা। সাময়িক বা রিফান্ডেবল বুকিং গ্রহণযোগ্য হওয়াও আবেদনকারীদের জন্য সুবিধার।

বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য এস্তোনিয়ার আকর্ষণের আরেকটি কারণ হলো ডিজিটাল ই-গভর্ন্যান্স, আন্তর্জাতিক শিক্ষার কম খরচ, ভিসা এক্সটেনশনের সুবিধা, গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরি খোঁজার সুযোগ এবং শেনজেন ক্লিয়ারেন্স থাকলে ইউরোপের অন্য ২৬ দেশে সহজ যাতায়াতের সুযোগ। জীবনযাত্রার খরচও ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলক সাশ্রয়ী।

তবে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শুধু টাকার অস্তিত্ব নয়, নিয়মিত লেনদেন থাকতে হবে। ভ্রমণ পরিকল্পনা স্পষ্ট হতে হবে এবং সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী উত্তর দিতে হবে। ভুয়া বুকিং বা জাল কাগজপত্র দিলে ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি থেকেও যায়।

সঠিক ডকুমেন্ট, পরিষ্কার উদ্দেশ্য আর নিয়ম মেনে আবেদন করলে এস্তোনিয়া বাংলাদেশি ভ্রমণকারী, শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও সম্ভাবনাময় ইউরোপীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

এসএইচ 

Wordbridge School
Link copied!