• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
টার্গেট রমজান মাস

তৎপর হয়ে উঠেছে ‘ভিক্ষুক চক্র’


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৯:৩৬ এএম
তৎপর হয়ে উঠেছে ‘ভিক্ষুক চক্র’

ঢাকা : আসছে পবিত্র রমজান মাস। রোজা শেষ হলেই ঈদ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ মাসে দান-খয়রাত তুলনামূলক বেশি করেন। আর এ সুযোগটি নিতেই তৎপর হয়ে উঠেছে ‘ভিক্ষুক চক্র’। প্রতি বছরের মতো এবারো তারা মৌসুমি ভিক্ষুকদের ঢাকায় আনছে। তাদের রাখা হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে। তবে এবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ও লকডাউনের কারণে খানিকটা বিপাকে পড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুকরা।

জানা যায়, পবিত্র রমজানের আগেই বিভিন্ন জেলায় এক শ্রেণির দালাল মৌসুমি ভিক্ষুকদের অগ্রিম টাকা দিয়ে চুক্তি করে রাখে। এ টাকার পরিমাণ দুই থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবার পবিত্র শবেবরাতের আগেই এই চক্রটি বিভিন্ন স্থান থেকে ভিক্ষুক এনে  ঢাকায় জড়ো করেছে। ঢাকায় আসতে গাড়ি ভাড়াসহ দেওয়া হয় আরো এক হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর মান্ডা এলাকায় শতাধিক বস্তি ঘরে প্রায় এক হাজারের বেশি ভাড়াটে ভিক্ষুক রয়েছেন। এসব ভিক্ষুকের প্রায় সবাই পঙ্গু। রয়েছে বেশ কিছু শিশুও।
মিরপুর মাজার রোডে আসমা নামে এক ভিক্ষুক জানান, রোজার মাসে তার দৈনিক আয় দেড় হাজার টাকারও বেশি। আর স্বাভাবিক সময়ে ৪শ থেকে ৬শ টাকা হয়। মিরপুর মাজার রোডে বাইরে থেকে আসা কোনো ভিক্ষুক ভিক্ষা করতে পারে না বলে জানান এই এলাকার ভিক্ষুক নিয়ন্ত্রণ চক্রের এক দালাল।

নাম না প্রকাশের শর্তে ওই দালাল বলেন, রাজধানীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাই কোনো না কোনো ভিক্ষুক সরদারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। নতুন করেন কেউ ওইসব জায়গায় ভিক্ষা করতে চাইলে আগে তাকে অনুমতি নিতে হবে।

তিনি আরো জানান, রাজধানীতে দুই ধরনের ভিক্ষুক আছে-স্থায়ী ও অস্থায়ী বা সিজনাল। শবেবরাত, রমজান মাস ও ঈদকে সমনে রেখে ঢাকার বাইরে থেকে বিশেষ করে রংপুর, গাইবান্ধ, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সিজনাল ভিক্ষুকদের নিয়ে আসা হয়। প্রতিটি ভিক্ষুক রমজান মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ‘আয়’ করে। তবে তাদের আয়ের ২৫ শতাংশ দিতে হয় ভিক্ষুক সরদারকে।

রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে প্রতিবন্ধী এক ভিক্ষুক জানান, ওই এলাকায় দালাল চক্র রয়েছে। যারা নিজেরা চলাচল করতে পারে না, তারাই সরদারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। পঙ্গু ভিক্ষুকদের সরদারের লোকজন ট্রাফিক পুলিশ আসার আগেই তাদের রাস্তায় দিয়ে যায়।

এরপর  সারাদিন তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কখন কার কাছে কত টাকা হলো তা নজর রাখে। দিনের একটি পর্যায়ে সরদারের লোকজন টাকাগুলো নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাদের সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়।

অভিযোগ আছে, রাজধানীতে রাস্তার মোড়ে নারী ভিক্ষুকের কোলে থাকা দুগ্ধপোষ্য শিশুদের অধিকাংশকেই ভাড়ায় আনা হয়। বিভিন্ন বস্তি থেকে প্রতিটি শিশুকে ৬০ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে ভাড়া আনা হয়। এসব শিশুর অনেককেই ইনজেকশন দিয়ে অথবা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে কোলে নিয়ে নারীরা ভিক্ষা করে বলে অভিযোগ আছে।

রাজধানীর দুই শতাধিক স্পটে ভিক্ষুকদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—ফার্মগেট, হাইকোর্ট মাজার, শাহবাগ, কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, মিরপুর শাহ আলী মাজার, শাহবাগ, গুলশান ১ ও ২ গোলচত্বর, বায়তুল মোকাররম মসজিদ গেট, কাকরাইল মসজিদ, মহাখালী, চকবাজার মসজিদ, আজিমপুর, মতিঝিল, গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারসহ অনেক স্থানে ভিক্ষুকের আধিক্য লক্ষ করা যায়। এসব স্পট ছাড়াও রয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল।

এদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল রূপসী বাংলা, হোটেল রেডিসন, বেইলি রোড, কূটনৈতিক জোন ও দূতাবাস এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এসব এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করে বিভিন্ন রকমের সাইবোর্ড লাগানো হয়েছে। ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষিত এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি না করার জন্য নিয়মিত মাইকিংও করা হয়।

সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সারা দেশে প্রায় ৭ লাখ ভিক্ষুক রয়েছে। আর রাজধানীতে মৌসুমি ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রায় অর্ধ লক্ষ।

২০১০ সালে দেশে দারিদ্র্য নিরসনে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও ভিক্ষাবৃত্তির মতো অমর্যাদাকর পেশা থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে সরকার একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে আইন থাকলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা নেই। ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি পুনর্বাসন আইনের ১০(৩)(খ) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ভবঘুরে হিসেবে প্রমাণিত হলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের আটকাদেশ দেওয়ার বিধান রয়েছে।

এ ছাড়া ‘পুনর্বাসন’ প্রসঙ্গে আইনটির ১৮(১) ধারায় সংক্ষেপে বলা হয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত ভবঘুরে ব্যক্তির পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!