• ঢাকা
  • রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কোনো বিধিনিষেধ মানতে চায় না রাজধানীবাসী


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৭, ২০২১, ০৩:৩৬ পিএম
কোনো বিধিনিষেধ মানতে চায় না রাজধানীবাসী

ঢাকা : কঠোর বিধিনিষেধেও রাজধানীতে বাড়ছে যানবাহন। সেইসাথে বাড়ছে সাধারণ মানুষের চলাচল। করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিলেও কোনো বিধিনিষেধই মানতে রাজি নয় নগরবাসী। উল্টো প্রতিদিন রাজপথে বাড়ছে মানুষ আর যানবাহনের সংখ্যা। ‘কঠোর’ বিধিনিষেধে রাজধানীতে দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। যানবাহনের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার গত ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী জারি করে কঠোর বিধিনিষেধ। দ্বিতীয় দফায় গত সোমবার বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বৃদ্ধি করা হয়। ‘কঠোর’ বিধিনিষেধের শুরুতে যতখানি কঠোরতার কথা গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচার পেয়েছিল আদতে তা হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেকে, যদিও সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ নিয়মিত তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

রাজধানীর প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। নিয়মিত তল্লাশি করা হচ্ছে যানবাহন। পথচারীদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

এছাড়া পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। করা হচ্ছে গ্রেপ্তার, মামলা, জরিমানা। দেওয়া হচ্ছে লঘু দণ্ড। নগরীর মোড়ে মোড়ে, সড়কে টহলের পাশাপাশি মাইকিং করে নগরবাসীকে সচেতনও করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

কিন্তু মামলা, গ্রেপ্তার, জরিমানা কোনো কিছু দিয়েই যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না নগরবাসীর চলাচল । এমনটা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।

কঠোর বিধিনিষেধের ৬ষ্ঠ দিনে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় তীব্র যানজট। গত কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা যানবাহনের চাপ গতকাল সীমা ছাড়ায়। রাজধানীর কোথাও দেখা দেয় দীর্ঘ যানবাহনের জট। এই চিত্র দেখে কারো পক্ষেই এটা বিশ্বাস করা সম্ভব ছিল না যে, মাত্র একদিন আগেই গত সোমবার দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। দেশে চলছে ‘কঠোর’ বিধিনিষেধ।

মঙ্গলবার নগরীর সড়কগুলোতে ছিল ব্যক্তিগত যানবাহন আর রিকশার দাপট। একসঙ্গে এত মানুষের উপস্থিতিতে বিধিনিষেধ মনিটরিংয়ে হিমশিম খেতে হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। সকালে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি চেকপোস্টে ২০ পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়ায় সৃষ্টি হয় এই পরিস্থিতির।

এ সময় প্রতিটি গাড়ি চেক করার কারণে রামপুরা ব্রিজ পার হয়ে মালিবাগগামী সড়কে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও রিকশার দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। চেকপোস্ট পার হতে লাগে দীর্ঘ সময়।

এই চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পরিদর্শক মশিউর রহমান বলেন, আজকে (গতকাল) গাড়ির সংখ্যা গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তিনি বলেন, তবে যেসব পেশার মানুষের চলাচলের অনুমতি আছে, তারাই বের হচ্ছেন। আমরা যেসব গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, তারা সবাই অফিসমুখী। যথাযথ আইডি দেখে তারপর ছাড়া হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশমুখ গাবতলীতে সকাল থেকেই অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ছিল বলে জানান দারুস সালাম জোনের (ট্রাফিক) সহকারী কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সকাল থেকে ঢাকায় ইনকামিংয়ে চাপ বেশি ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আউটগোয়িং বাড়ে। তবে চলাচলের অনুমতি নেই এমন একটি গাড়িও ঢাকার বাইরে যেতে বা ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা।

হাতিরঝিল এবং সংলগ্ন এলাকাগুলোতেও গতকাল যানবাহনের চাপ বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন এই এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা কাজী মিজানুর রহমান।

প্রতিনিয়ত মানুষের অযৌক্তিক চলাচলের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের মতে, একমাত্র গনসচেতনতাই পারে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে। তা না হলে বড় ধরনেসর মূল্য দিতে হবে সবাইকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমিন বাজার ব্রিজের কোনায় গাবতলী চেকপোস্টে দায়িত্বরত এক পুলিশ সার্জেন্ট বলেন, এখনো অনেকেই অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হচ্ছেন যা বর্তমান সময়ে করোনার ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এছাড়া অনেকেই আবার নানা ধরনের অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায় যেতে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো বেসামাল হবে। শুধু শাস্তি আর জরিমানা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

র‌্যাব-৪-এর সিইও মোজাম্মেল হক বলেন, যতই দিন যাচ্ছে মানুষ ততই অকারণেই বের হচ্ছেন, যা করোনা পরিস্থিতি অবনতির জন্য মারাত্ম সহায়ক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এক্ষেত্রে গণসচেতনতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যেমন অনেকে আছেন প্রতিদিন কাঁচাবাজার করেন, এটা না করলেও হয়। একটু বেশি করে কিনে রাখলে সেটা তো রাখা যায়। মূলত নিজে থেকে সচেতন হতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!