• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

কে এই আখতারুজ্জামান, যার ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ‘খুন হন’ এমপি আনার


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৩, ২০২৪, ১০:১৫ এএম
কে এই আখতারুজ্জামান, যার ভাড়া করা ফ্ল্যাটে ‘খুন হন’ এমপি আনার

ঢাকা : কলকাতার নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটে ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা, সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

বাংলাদেশে এ বিষয়ে তদন্তে থাকা একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এই আখতারুজ্জামানের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে, এলাকায় তিনি শাহীন মিয়া নামে পরিচিত। তার ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পরে বলেন, আনারকে কলকাতার ওই বাসায় ‘পরিকল্পিতভাবে খুন’ করা হয়েছে। তবে তার মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি।

ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য পওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে খুনিরা বাংলাদেশের বলে তারা জানতে পেরেছেন।

বিকালে নিউ টাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনস নামের ওই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ঘুরে দেখে কলকাতার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে যা তথ্য আছে তাতে এমপি আনোয়ারুলকে সর্বশেষ ১৩ মে এখানে ঢুকতে দেখা গেছে। এর আগে তিনি এখানে এসেছিলেন কিনা সেটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে তার লাশ উদ্ধার করা যায়নি।

লাশ উদ্ধার না করে কীভাবে তাকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন জানতে চাইলে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমাদের কাছে ইনপুট আছে।

পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনারকে খুন করা হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের মালিক সন্দ্বীপ রায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

তবে আখতারুজ্জামান এখনো ধরা পড়েননি। ভারত থেকে নেপাল হয়ে এরইমধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে খবর পেয়েছে ঢাকার পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন বলেন, আপনার মত আমিও শুনেছি যে মেয়র সাহেবের ভাই শাহীন মিয়ার পুরো নাম আখতারুজ্জামান। তবে আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে আগের কোনো অভিযোগ নেই বা কোনো ডকুমেন্ট নেই।

কোটচাঁদপুরের মেয়র সহিদুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওর পুরো নাম আখতারুজ্জামান। ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ওর পরিবার সেখানে থাকে। ও নিজেও সেখানে থাকে। এক সপ্তাহ আগে ও বাড়ি ছেড়েছিলেন।

বাড়ি থেকে আক্তারুজ্জামান কোথায় গেছেন জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সেটা আমি জানি না।

তিনি ভারতে গেছেন কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, যেতে পারে।

কলকাতায় আক্তারুজ্জামানের কোনো ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া আছে কি না প্রশ্ন করলে তার ভাই সহিদুজ্জামান বলেন, ঠিক ভাড়া না, পরিচিত একজনের ফ্ল্যাটেও মাঝে মাঝে গিয়ে থাকত।

কলকাতার পুলিশ বলছে, যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন, সেটি আখতারুজ্জামান ভাড়া নিয়েছিলেন; সে বিষয়ে কিছু জানেন কি না– এই প্রশ্নে মেয়র বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

এদিকে আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা বললেও মৃতদেহের কোনো হদিস এখনও মেলেনি।

বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাননি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

কলকাতার পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ প্রতিদিন লিখেছে, ১৩ মে নিউ টাউনের ওই বাসায় শ্বাসরোধে খুন করা হয় আনারকে। পরে টুকরো টুকরো করে কাটা হয় দেহ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিন দিন ধরে দেহের অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। তবে সেগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

লাশ টুকরো টুকরো করে সরিয়ে ফেলার ওই তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সে রকমই কথা আছে, সেটা আমরাও শুনছি। সব জানি না, এখনো কলকাতা পুলিশ কাজ করছে।

যার ভাড়া করা বাসায় আনার খুন হয়েছেন বলা হচ্ছে, সেই আখতারুজ্জামানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে সব কিছু বলা হবে। আমি সব বলে দিয়েছি, এখন আমরা ফারদার আর কিছু বলব না। আমাদের কাছে সব নিউজ আছে।

এদিকে আনারকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তবে সেখানে আসামি হিসাবে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রুবাইয়াত জামান বলেন,সংসদ সদস্য আনার গত ৯ মে ঢাকার সংসদ ভবন এলাকার এমপি হোস্টেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তিনি ভারতে চলে যান।

সর্বশেষ শেরেবাংলা নগর থানা এলাকা থেকে বের হওয়ার কারণেই এ থানায় মামলা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩৪ ধারায় করা এ মামলা গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ তদন্ত করবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। সূত্র : বিডিনিউজ

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!