• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

পুরান ঢাকায় সকরাইন উৎসব

পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করেই উড়েছে ফানুস


লাইজুল ইসলাম জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম
পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করেই উড়েছে ফানুস

ঢাকা: রাজধানীতে পুরোনো যে কয়েকটি উৎসব রয়েছে তার মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা এই উৎসব খুব জাঁকজমক ভাবে পালন করে থাকেন। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পৌষের শেষ দিন শনিবার (১৪ জানুয়ারি)। পুরান ঢাকার বাসিন্দারা এ উপলক্ষে পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবটি তাদের কাছে সাকরাইন উৎসব নামে পরিচিত। এ উপলক্ষে দিনভর ছাদে ছাদে চলে ঘুড়ি ওড়ানো। গানবাজনার অনুষ্ঠান।

সন্ধ্যার পর সেই উৎসবই পরিণত হয় আলোর খেলায়। আতশবাজি, ফানুসের আর ডিজে লাইটিংয়ের আলোক ছটায় রঙিন হয়ে ওঠে পুরান ঢাকা।
 
তবে এই উদযাপনের পেছনেও তৈরি হয় অনেক দুর্ঘটনার গল্প। আতশবাজি এবং ফানুস ওড়ানোর কারণে প্রতিবছরই অগ্নিকাণণ্ডের ঘটনা ঘটে। এজন্য এ বছর সাকরাইন উৎসবে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। সাকরাইন উৎসবে রাজধানীবাসী যাতে ফানুস ওড়াতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ বেশ তৎপর। এ ছাড়া দোকানিদের ফানুস বিক্রি বন্ধে চলানো হচ্ছে বিশেষ অভিযান।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ঢাকাবাসী যাতে সাকরাইন উৎসব সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে পালন করতে পারে, এজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে; এজন্য নজরদারি থাকবে পুলিশের। এ ছাড়া এই রাতে সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস উড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে থানাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে শাখারিবাজার, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, বংশাল ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে ফানুস বিক্রি করতে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও বেশির ভাগই লুকিয়ে বিক্রি করেছে ফানুস। পুরান ঢাকার অনেক বাসিন্দা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। তারাও সঙ্গে করে ফানুস নিয়ে এসছেন এই উৎসব উপলক্ষে। সাকরাইন মানেই লাইটিং করা। এর সঙ্গে ফানুস উড়ানো আরেকটি বিশেষ আয়োজন। 

কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা রায়হান সোনালীনিউজকে বলেন, এই দিনে বেশ কয়েকটি আয়োজন থাকে। প্রথমটি ঘুড়ি ওড়ানো। আমরা সবাই বিভিন্ন রংয়ের ঘুড়ি উড়াই। সকাল থেকে এই আয়োজন চলে বিকেল পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর শুরু হয় লাইটিং ও গানবাজনা। কে কত বেশি পেয়ার সাউন্ড সিস্টেম আনতে পারে সেটাই বড় বিষয়। এটা এক ধরনের প্রতিযোগিতা। এর পাশাপাশি আমরা ফানুসও উড়াই। এবারও উড়াবো।

লালবাগের বাসিন্দা সিয়াম আহমেদ জানান, এবার পুলিশের কিছু নির্দেশনা এসেছে। কিন্তু এই নির্দেশনা পালন করা কঠিন। গান বাজানো বা ফানুস উড়ানো বন্ধ করা সম্ভব না। প্রয়োজনে আমরা বাড়ির গেট আটকে দিয়ে ফানুস উড়াবো। 

আজিমপুরের এক দোকানী বলেন, ফানুস আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে বিক্রি করছি। এগুলো আমরা কিনে এনেছি বেশি দামে। এখন বিক্রি করতে না পারলে লস হবে। তাই আমরা এগুলো বিক্রি করছি। আর এগুলোতে আগুনের ঘটনা খুবই কম।  

লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জাফর হোসেন জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর আমরা পুরো পুরান ঢাকায় নজরদাড়ি বৃদ্ধি করবো। যাতে কোথাও ফানুস ওড়াতে না পারে। যারা এটি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি সাধারণ নাগরিক কোনো কারণে ফানুসে আক্রান্ত হয় তবে যারা এটার সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

তিনি বলেন, সাকরাইন পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এই উৎসবের সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িত। আমরা চাই সবাই যেন সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্য দিয়ে এ দিনটি উদযাপন করতে পারে। প্রতিবছরই দেখা যায় আতশবাজি ও ফানুসের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এ বছর আমরা এর পুনরাবৃত্তি চাই না। ইতোমধ্যে পুরান ঢাকার বেশ কিছু দোকানে অভিযান করেছে পুলিশ সদস্যরা।

তিনি আরও বলেন, বর্ষপূর্তি উদযাপনেও মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক লাইনে ফানুস পড়ে রেল চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তাছাড়া প্রতিবছর আগুনের ঘটনা ঘটে। এবার আমরা এটা চাই না বলেই এতটা কড়াকড়ি। হয়তো এক সময় মানুষ বুঝবে। তখন আর ফানুস উড়াবে না। শুধু অনুষ্ঠানের মধ্যেই আনন্দ আবদ্ধ থাকবে।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!