• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
বস্তিতে আগুন

তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে ৩০০ পরিবার


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০২:৪০ পিএম
তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে ৩০০ পরিবার

ঢাকা : তীব্র শীতে যখন সবাই জবুথবু তখন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মোল্লাবাড়ি বস্তিতে শুক্রবার দিবাগত রাতে লাগা আগুনে পুড়েছে ৩০০ ঘর। এতে প্রায় হাজারখানেক মানুষ এখন এক কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে। এই তীব্র শীতে কী করবেন সেই বিষয়ে কিছু জানা নেই তাদের।

মাছের আড়তে কাজ করা মোহাম্মদ মুছা তার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তার শেষ সম্বল কিছু পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখছিলেন।

তিনি বলেন, রাতে তার দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। এরমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কাজ করা লোকজন ইট পাটকেল ছুড়ে মারে টিনের চালে ও চিৎকার করতে থাকে আগুন আগুন বলে। দ্রুত তিনি ও তার পরিবার নিয়ে বের হয়ে আসেন। সঙ্গে কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। এখন এক কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাই হয়েছে তাদের।

তিনি বলেন, সংসারে সব কিছু ছিল তার। খাট, ওয়ারড্রব, ফ্রিজ সব পুড়ে শেষ। ব্যবসার জন্য ধারদেনা করে ও জমিয়ে রাখা প্রায় দেড় লাখ টাকা ছিল তার। সেগুলো সব শেষ।

স্বামী নেই; দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে একাই ওই বস্তির একটি ঘরে থাকতেন স্বপ্না বেগম।

তিনি বলেন, তিনি মাছ কাটার কাজ করেন। শব্দ শুনে উঠে দেখেন ঘরের কাছেই আগুন। কেন কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রাণে বাঁচতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এত মানুষের মাঝে বের হতে গিয়ে কয়েকবার পড়ে যান। তারপরও কোনো রকমে বের হয়ে আসেন। কিছু নিয়ে বের হতে পারেননি। তার সব পুড়ে শেষ।

স্থানীয়রা জানান, এফডিসি ঘেঁষা এই বস্তির বয়স ২৫/৩০ বছর। এখানে বর্তমানে অন্তত সাড়ে তিনশ থেকে চারশর মত ঘর আছে। প্রতিটি ঘর ৮ ফিট বাই ১০ ফিটের মত। প্রতিটি ঘরের ভাড়া ছিল সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা।

তারা আরও জানান, শুক্রবার রাতের আগুনে পুড়ে গেছে কমপক্ষে তিনশ ঘর। ভয়াবহ এই আগুন থেকে বেশিরভাগ বস্তিবাসীই পরনের কাপড় ছাড়া জিনিসপত্র কিছুই রক্ষা করতে পারেননি।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুনের খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে আসেন এবং ১৩টি ইউনিটের প্রায় দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় রাত ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এ ঘটনায় দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন জানান, কাঠ, বাঁশ আর টিনের তৈরি একতালা-দোতলা আনুমানিক তিনশ ঘরবাড়ি পুড়েছে। ঘরগুলো কাঠ ও বাঁশের হওয়ায় আগুনটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত বস্তিতে শর্টসার্কিট বা গ্যাসের লাইন থেকে আগুন লাগে। কীভাবে এই আগুন লেগেছে সেটা আমরা তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে জানাবো।

কাঁচামালের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারা সাধারণত মালামাল কেনার জন্য রাতে বের হন। ঘটনার সময় তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। শব্দ শুনে বের হয়ে দেখেন আগুন ধেয়ে আসছে। কোন রকমে প্রাণ নিয়ে পালান তারা।

ওয়ালিল্লাহ ও তার স্ত্রী হাওয়া বেগম বলছিলেন মাছ কাটার কাজ করেন তারা। রাতে কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই আগুন দেখে প্রাণে বাঁচতে ঘর ছাড়েন। তারাও কোন কিছু বের করতে পারেননি।

ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, এই তীব্র শীতে তারা এখন খোলা আকাশের নিচে এক কাপড়ে। সকাল থেকে এখনও কিছু খাননি। কেউ সহায়তার জন্য আসেনি। তবে তাদের আশা করেন সরকার তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!