• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জুননুরাইন হজরত উসমান (রা.)


মুহাম্মদ হাবীব আনওয়ার মার্চ ৬, ২০২১, ০১:৩২ পিএম
জুননুরাইন হজরত উসমান (রা.)

ঢাকা : হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)। জাহিলি ও ইসলামী উভয় যুগেই তার নাম ছিল উসমান। উপনাম ছিল আবু উমর এবং আবু আব্দুল্লাহ। তাঁর বংশধারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আবদে মানাফ পর্যন্ত গিয়ে মিলিত হয়েছে। উসমান (রা.) এর জন্ম সন ও তারিখ নিয়ে বেশ মতপার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশের মতে তার জন্ম ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ হস্তীসনের ছয় বছর পর। এ হিসেবে তিনি হজরত  মোহাম্মদ (সা.) থেকে ছয় বছরের ছোট। অধিকাংশ বর্ণনামতেই তাঁর জন্ম সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। অনেকে তায়েফ নগরীতে বলেছেন। হজরত উসমান (রা.) কে বলা হয় জুননুরাইন (দুই নুরের মালিক)। অনেকে এর ব্যাখ্যা হিসেবে বলেন, তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই কন্যা ছাড়া অন্য কোনো নারীকে বিবাহ করেননি। আবার কেউ বলেন, তিনি জান্নাতে প্রবেশকালে দুবার নুরের আলোকচ্ছটা প্রকাশিত হবে বলে তাকে জুননুরাইন বলা হয়।

হজরত উসমান (রা.) ছিলেন দয়ালু ও মহানুভাব একজন সাহাবি। তাকে খলিফা নির্বাচিত করা হলে তার নম্রতা ও বিনয় আরো বৃদ্ধি পায়। তিনি নিজ সম্পদ থেকে জনগণের খাদ্যের ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু নিজে সিরকা ও যায়তুনের তেল ব্যবহার করতেন। হজরত হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার তাকে প্রেরণ করেছিলেন যুদ্ধফান্ড তৈরি করতে। তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হস্ত মুবারকে দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা তুলে দেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত উসমান (রা.)-এর হাতে চুমু দিয়ে বলেন, হে উসমান! কিয়ামত পর্যন্ত ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যা কিছু কর, আল্লাহ তোমায় ক্ষমা করুন!

মদিনা শরিফে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সবাই কষ্টে দিনযাপন করতে লাগলো। শিশুরা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। তখন মদিনার ব্যবসায়ী ছিলেন হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)! সিরিয়ার সঙ্গে তার ব্যবসা-বাণিজ্য। এই দুর্ভিক্ষের সময় একশো উট খাদ্যদ্রব্য আনতে সিরিয়ায় পাঠান। যখন খাদ্যবোঝাই উট মদিনায় পৌঁছল, মদিনার সব ব্যবসায়ী হজরত উসমান (রা.)-এর উঠানে হাজির। সোজা প্রস্তাব; আপনি যত দেরহাম দিয়ে খাদ্য এনেছেন আমরা ঠিক সেই পরিমাণ লাভ দেব। খাদ্যগুলো আমাদের দিয়ে দিন। হজরত উসমান বললেন, এরচে বেশি দাম আগেই হয়েছে। তাহলে দ্বিগুণ লাভ দেবো! তিনি বললেন, না আরো বেশি হয়েছে। তাহলে তিনগুণ দেই। তিনি বললেন, না। তাহলে চারগুণ, পাঁচগুণ বা আরো বেশি লাভ দেবো। হজরত উসমান (রা.) বললেন আরো বেশি পেয়েছি। ব্যবসায়ীরা অবাক! তারা বলল, এই মদিনায় আমারা ছাড়া তো আর কোনো ব্যবসায়ী নাই! কে আমাদের চেয়ে বেশি দাম হাঁকিয়েছেন? তখন হজরত উসমান (রা.) মুখ খুললেন। তিনি বললেন। আমার আল্লাহ আমাকে দশগুণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন! তোমরা কি এরচে বেশি দিতে পারবে?

হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) এমন ঘোষণা দিলেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যা বলতে ও শুনতে গর্ববোধ করবে। যুগের পর যুগ যা থেকে শিক্ষা নেবে। তিনি বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো; এই সব খাদ্য আমি মদিনার গরিবদের দান করে দিলাম! তারপর পুরো একশ উট মদিনার অভাবী দরিদ্রদের মাঝে ভাগ করে দেন! (সোনার হরফে লেখা, পৃষ্ঠা; ২৬-২৭) এমন শত শত ঘটনা ইতিহাস গেঁথে রেখেছে পরম যত্নে। আর শতাব্দীর পর শতাব্দী তা থেকে শিক্ষা রয়েছে জীবন সাজাতে। এমনি বদান্যতা ছিলেন হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)! তিনি ছিলেন, নবী পরশে ধন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কলিজার টুকরা দুটি কন্যাকে তুলে দিয়েছেন উসমান (রা.) হাতে।

ইবনে কুতাইবা (রা.) বলেন, হজরত উসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে মিশর, ইরান, আফ্রিকা, তিবরিস, রোম উপকূল, শেষ উস্তাখার, প্রথম পারস্য, তিবরিস্তান, কিরমান, সিজিস্তান, আল আসাবিয়াহ, জর্দানের উপকূলীয় এলাকা, মারভ ইত্যাদি এলাকা বিজয় হয়। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) সম্পর্কে আল্লাহর নবী বলেন, যাকে দেখে ফেরেশতাগণ লজ্জা পায়, আমি তাকে দেখে কেন লজ্জা পাব না? তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। তার শাহাদাতের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে হজরত উসমান (রা.) ৮৮ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন। তার খিলাফাত কাল ছিল, ১১ বছর ১১ মাস ৪ দিন। রাজিআল্লাহ তায়ালা আনহু।

লেখক : শিক্ষার্থী, হাটহাজারী মাদরাসা চট্টগ্রাম

 

Wordbridge School
Link copied!