• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মজলুমের দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা


মাওলানা এসএম আরিফুল কাদের জুন ২৪, ২০২১, ১২:৫৫ এএম
মজলুমের দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা

ঢাকা : বর্তমানে চারদিকে একটি দৃশ্য ফুটে উঠেছে-‘দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার’। জালেম যে ধর্মের বা যে-ই হোক না কেন, আল্লাহর হাত থেকে সে রেহাই পাবে না। যদিও জালেম কিছুকালের জন্য নিজেকে ক্ষমতাবান বা বড় শক্তিশালী ভেবে থাকে। মূলত সে বোকার স্বর্গে বাস করে। কারণ এ দুনিয়ায় কারো ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। অত্যাচারী যখন দুর্বলের প্রতি তার অত্যাচার চালায় তখন তার মনে হয়, সে-ই বুঝি অনেক ক্ষমতাবান। তার শক্তি ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী। কিন্তু সে ভুলে যায়-ওই অসহায় লোকটির পক্ষে কেউ না থাকলেও আল্লাহ সবই দেখেন ও হিসাব রাখেন।

জুলুম আরবী শব্দ। যার অর্থ হলো- অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, বঞ্চনা, প্রবঞ্চনা, উৎপীড়ন, ভারাক্রান্ত কাজ, ভারসাম্য রক্ষা না করা ইত্যাদি। সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা যে কোনো পন্থায় অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে। যাকে জুলুম করা হয় তাকে মজলুম বলে। জুলুম বা অত্যাচার হারাম, যা মহাক্ষমতাবান আল্লাহ করেন না এবং বান্দাদেরকেও করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে কুদসীতে এসেছে, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার ওপর জুলুমকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৬৪৬৬)

জুলুম একটি জঘন্যতম অপরাধ, যার ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। সব ধর্ম মতেই জুুলুম মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য। কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জালেমের ব্যাপারে কঠোর বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন-‘জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো বেখবর মনে করো না। তাদেরকে তো ওই দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহ্বলচিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে। মানুষকে ওই দিনের ভয় প্রদর্শন করুন, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। তখন জালেমরা বলবে-‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে সামান্য মেয়াদ পর্যন্ত সময় দিন, যাতে আমরা আপনার আহ্বানে সাড়া দিতে এবং পয়গম্বরগণের অনুসরণ করতে পারি। তোমরা কি ইতোপূর্বে কসম খেতে না যে, তোমাদেরকে দুনিয়া থেকে যেতে হবে না? তোমরা তাদের বাসভূমিতেই বসবাস করতে, যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে এবং তোমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল যে, আমি তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছি এবং আমি তোমাদেরকে ওদের সব কাহিনীই বর্ণনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে ভীষণ চক্রান্ত করে নিয়েছে এবং আল্লাহর সামনে রক্ষিত আছে তাদের কু-চক্রান্ত। তাদের কুটকৌশল পাহাড় টলিয়ে দেওয়ার মতো হবে না। অতএব আল্লাহর প্রতি ধারণা করো না যে, তিনি রাসুলগণের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত : ৪২-৪৭)

মজলুম ব্যক্তি যদিও কিছু সময়ের জন্য জালেমের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে আল্লাহর কালাম এবং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী অনুযায়ী আল্লাহপাক স্বয়ং তাকে সাহায্য করেন। জালেমকে তার জুলুমের শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে ব্যর্থ করে দেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা জালেমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, সে আর ছুটে যেতে পারে না।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস নং- ৪৬৮৬) বাস্তবিকভাবে যদিও মজলুমের কিছু করার থাকে না, কিন্ত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করা উচিত। কেননা, মজলুমের দোয়া কবুলের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর তারা হলেন- নির্যাতিত (মজলুম) ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া আর সন্তানের প্রতি পিতামাতার বদ-দোয়া।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস নং-৩৫০৯) অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহতায়ালা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ! কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস নং- ৩৫৯৮)

একজন মানুষ অবশ্যই মজলুমের বদদোয়া থেকে সাবধান হওয়া উচিত। হোক সে যে কোনো ধর্মের। পরকালীন শাস্তি তো অনিবার্য। দুনিয়াতেও জুলুমের ফল পাবে। কেননা, মজলুমের পক্ষে কেউ না থাকলেও আল্লাহ তার এমন সহায় হোন যে, তার দোয়া কবুলের মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা পর্দা থাকে না। হাদিসের ভাষায়, ‘মজলুমের বদ দোয়াকে ভয় করো। তার মাঝে (বদদোয়া) আল্লাহর মাঝে (কবুলের) কোনো পর্দা থাকে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-১৪৯৬)

জালেমের পতন কেমন হবে আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। অন্যান্য পাপের শাস্তির নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু জালেমের শাস্তির পরিনাম এমনই হয় যার ছিন্নভিন্ন পর্যন্ত থাকে না। এমন কঠোরতম শাস্তি দুনিয়ায় পেয়ে থাকে। আসমান ও জমিনের সবপ্রাণীই ঘৃণার সাথে ছি ছি করে। আর পরকালীন শাস্তি তো বাকিই রইলো। তাই আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামেপাকে ইরশাদ করেন, ‘অচিরেই জালেমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত নং- ২২৭) পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন জালেমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে আমাদের রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিসম্পাত থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।

লেখক : আলেম, খতিব, শিক্ষক ও গবেষক

 

Wordbridge School
Link copied!