• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হতাশ হয়ো না


মাহফুজ আরেফীন জুলাই ৩০, ২০২১, ০২:১৭ পিএম
হতাশ হয়ো না

ঢাকা : প্রত্যেক মানুষের অনেক স্বপ্ন থাকে। থাকে স্বপ্নপূরণের চেষ্টা। কিন্তু দুনিয়াতে কারো সব স্বপ্নপূরণ হয় না। আর স্বপ্নপূরণ না হলে অথবা কাজের ইচ্ছামতো ফল না পেলে মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয়, এটাই হতাশা। জয়-পরাজয়, পাওয়া-না পাওয়া, সাফলতা-ব্যর্থতা মানুষের জীবনে আসতেই পারে। তাই বলে কি হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করতে হবে! আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আর আত্মহত্যাকে কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়া যাবে না। ব্যর্থতার পরই আসবে সফলতা। যেমনিভাবে রাত পোহালেই আসে দিন। আর ব্যর্থতায় মর্মাহত লোকদের সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৯)

মানুষের জ্ঞান সীমিত। মানুষ জানে না, সে যে দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন তা তাকে কত বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। উদাহরণত, কোনো ব্যক্তির জ্বর হয়েছে, সে জ্বরের কষ্ট অনুভব করছে। কিংবা কোনো ব্যক্তি চাকরির জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু সে চাকরি পায়নি, চাকরি না পাওয়ার কষ্ট সে অনুভব করছে। কিংবা ঘরের মালামাল চুরি হয়ে গেছে, এ কষ্ট সে অনুভব করছে। কিন্তু সে জানে না যে, যদি তার এ কষ্ট না আসত, তা হলে অন্য কি কষ্ট আসত? সেই কষ্টটি এর চেয়ে বড় ছিল। যেহেতু বিষয়টি তার জানা নেই, তাই যে কষ্ট সে অনুভব করছে তাই তার কাছে বড় মনে হচ্ছে। কিন্তু সে যদি মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাহলে মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনে সে ভাবে, সে তুলনায় আমার কষ্টটি কিছুই নয়। অনেক সময় মানুষ নিজেই বলে, বিপদ অল্পের ওপর দিয়ে গেল, তা না হলে কত বড় বিপদ ছিল আল্লাহই জানেন। আল্লাহ বলেন, ‘হয়তো তোমার যা অপছন্দ করো তা-ই তোমার কল্যাণকর আর তোমরা যা পছন্দ করো, সেটা হতে পারে অকল্যাণকর বস্তুত আল্লাহ জানেন। কিন্তু তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২১৬)

আল্লাহতায়ালার আশ্রয় ছাড়া এবং তাঁর রহমতের ছায়াতলে পানাহ নেওয়া ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। অর্থাৎ তাঁর ফয়সালা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। মানুষের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-মসিবত, ঘটনা-দুর্ঘটনা সবই আল্লাহতায়ালার তাকদিরের ফয়সালার তীর। এসব তীর থেকে বাঁচার যদি কোনো জায়গা থাকে তা হলে তা আছে আল্লাহতায়ালার রহমতের ছায়াতলে। এ ছাড়া অন্য কোনো জায়গা নেই।  ছোট বাচ্চাকে  যখন মা  মারে সে মাকে আরো জড়িয়ে ধরে। অথচ সে দেখছে মা তাকে মারছে। কেন? কারণ বাচ্চা জানে, যে মা তাকে মারছে, স্নেহ ও ভালোবাসাও আমি তার কাছেই পাব। তাই যখনি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তখন ভাব যে, এটি আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হয়েছে এবং তার রহমতের কোলেই আমি আশ্রয় পেতে পারি। হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন বান্দার প্রতি কল্যাণ ও মঙ্গলের ইচ্ছা করেন তখন তাকে তার ভাগ্যের ওপর সন্তুষ্টি দান করেন এবং তার ভাগ্যে তার জন্য বরকত দান করেন। আর যখন কারো মঙ্গলের ইচ্ছা করেন না তখন তাকে তার ভাগ্যের ওপর সন্তুষ্টি দান করেন না। ফলে তার ভাগ্যে যা কিছু থাকে তাতে বরকত হয় না।’ (কানযুল উম্মাল)।

প্রতিটি লাভক্ষতির মালিক প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালা। সত্যিকারভাবে কোনো ব্যক্তি কারো সামান্য উপকারও করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না। আল্লাহ যদি কারো লাভ করতে চান তবে তা বন্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই। অনেকে হতাশ হয়ে হরেক রকম নেশায় জড়ায়। এতে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যায় কিন্তু হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। নেশা করা ইসলাম ধর্মে হারাম। তাই যারা পাওয়া, না-পাওয়া জীবনে হতাশ হয়ে পড়েছে তাদের উচিত নেশা না করে ধৈর্য ধারণ করা এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। কেননা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন আল্লাহরাব্বুল আলামিন। এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৫৩) আমাদের উচিত সাময়িক ব্যর্থতা, বাধা-বিপত্তি ও না পাওয়ার বেদনায় হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহরাব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা করা। আল্লাহ আমাদের হতাশামুক্ত জীবন দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, তামীরুল মিল্লাত  কামিল মাদরাসা

 

Wordbridge School
Link copied!