• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জেনে নিন রোজার উপকারিতা


ধর্মচিন্তা ডেস্ক মার্চ ২৫, ২০২৩, ০৩:২৫ পিএম
জেনে নিন রোজার উপকারিতা

ঢাকা : আর কদিন পরেই শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিবছর এই মাসে সংযমের সঙ্গে রোজা রাখেন। এই মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা রাখা হয়।

কয়েক বছর ধরে তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে রোজা রাখতে হচ্ছে মুসলমানদের। ইউরোপের কোনো কোনো দেশে বিশ ঘণ্টাও রোজা রাখতে হচ্ছে। তবে দীর্ঘ একমাস রোজা রাখায় কী প্রভাব পড়ছে শরীরে, সেই সব জেনে নেয়া যাক এবার।

শুরুর কয়েকদিন কষ্টকর: সর্বশেষ খাওয়ার পর আট ঘণ্টা অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত শরীরে খুব একটা রোজা রাখার প্রভাব পড়ে না। যেসব খাবার খাওয়া হয় তা পাকস্থলীতে পুরোপুরি হজম হতে এবং পুষ্টি শোষণ করতে অন্তত আট ঘণ্টা সময় নিয়ে থাকে শরীর। খাদ্য যখন সম্পূর্ণ হজম হয় তখন শরীর যকৃৎ এবং মাংসপেশিতে সঞ্চিত যে গ্লুকোজ তা থেকে শক্তি নেয়ার চেষ্টা করে।

শরীর যখন চর্বি খরচ করতে শুরু করে তা সাধারণত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।

এছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় বলে শরীর কিছুটা দুর্বল হতে পারে এবং ঝিমুনির ভাব আসতে পারে। কারো কারো মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব বা নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। আর এই সময় বেশি ক্ষুধাভাব জাগে।

০৩-০৭ রোজা পর্যন্ত পানি শূন্যতার বিষয়ে সতর্কতা: প্রথম কয়েকদিন পর শরীর রোজায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে। সেই সময় শরীরে চর্বি গলে গিয়ে রক্তের শর্করায় পরিণত হতে থাকে তা। কিন্তু রোজায় যেহেতু সারাদিনে কিছু খাওয়া হয় না তাই ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত সেই ঘাটতি পূরণে প্রচুর পানি পান করতে হবে।

ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে পানি শূন্যতাজনিত সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্মে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। আর রোজায় ইফতার ও সেহেরিতে অবশ্যই শক্তিদায়ক খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এবং চর্বি। এছাড়া পুষ্টি, প্রোটিন বা আমিষ, লবণ এবং পানি থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

০৮-১৫ রোজায় অভ্যস্ত হয় শরীর: রোজার এই ক’দিনে শরীর অভ্যস্ত হয়ে উঠে, মনও বেশ স্বতঃস্ফূর্ত থাকে। এ বিষয়ে ক্যামব্রিজের এডেনব্রুকস হাসপাতালের ‘অ্যানেসথেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের’ কনসালট্যান্ট ড. রাজিন মাহরুফ রোজার সুফল রয়েছে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, সাধারণত দৈনিক জীবনে অনেক বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকি আমরা। এ জন্য অন্যান্য অনেক কাজ ঠিকমত করতে পারে না শরীর। তবে রোজায় উপোস থাকায় অন্যান্য কাজের দিকে মনোযোগ দিতে পারে শরীর। এ জন্য রোজা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। শরীরের ক্ষত বা সংক্রমণ রোধে সাহায্য করতে পারে রোজা।

১৬-৩০ রোজায় ভারমুক্ত শরীর: রমজানের এই সময় শরীর পুরোপুরি রোজার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে থাকে। এই সময় শরীরের পাচকতন্ত্র, যকৃৎ, কিডনি এবং দেহত্বক এক প্রকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবে। সেখান থেকে সব দূষিত বস্তু বের করে শরীরকে শুদ্ধ করে তুলবে।

এ বিষয়ে ড. মাহরুফ বলেন, রমজানের এই সময় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পাবে। মানুষের স্মৃতি এবং মনোযোগের উন্নতি হবে এবং শরীরে অনেক শক্তি সঞ্চার হবে।

তিনি আরও বলেন, শরীরে শক্তি সঞ্চারের জন্য আমিষের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ঠিক নয়। শরীর ক্ষুধার্ত থাকা অবস্থায় এটি শক্তির জন্য মাংসপেশিকে ব্যবহার করে থাকে। আর আপনি যখন কয়েক সপ্তাহ বা দীর্ঘদিন ধরে রোজা থাকছেন ঠিক সেই সময় হয়ে থাকে এমনটা।

ড. মাহরুফ আরও বলেন, রমজানের সময় দিনের বেলায় যেহেতু না খেয়ে থাকতে হয় তাই শরীরের চাহিদা মেটানোর জন্য ইফতারের পর যথেষ্ট খাবার, তরল বা পানীয় গ্রহণের সুযোগ থাকছে। এটি মাংসপেশিকে রক্ষা করে এবং একই সঙ্গে শরীরের অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন কমাতেও সহায়তা করে।

রোজা রাখা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: ড. মাহরুফ এই বিষয়ে বলেছেন, রোজা রাখা শরীরের জন্য ভালো। কেননা, আমরা কী খাই এবং কখন খাওয়া হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে সহযোগিতা করে। একমাস রোজা রাখা হয়তো ভালো। তবে একটানা রোজা রাখার পরামর্শ দেয়া যাবে না।

তিনি বলেন, ওজন কমানোর জন্য একটানা রোজা রাখা কোনো সমাধান হতে পারে না। একটা সময় শরীর চর্বি গলিয়ে তা শক্তিতে পরিণত করার প্রক্রিয়া বন্ধ করবে। সেই সময় শক্তির জন্য মাংসপেশির ওপর নির্ভর করবে। আর এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এতে শরীর ক্ষুধায় ভুগবে।

ড. মাহরুফ পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, রমজান মাসের পর অন্য-ধরনের রোজা রাখা যেতে পারে। যেমন ৫:২ ডায়েট। অর্থাৎ, পাঁচদিন কম খেয়ে দু’দিন ঠিকমত খাওয়া। যেখানে ক’দিন রোজা রেখে ফের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার খাওয়া যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!