• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

দশজন ‘মূর্তি’ নিয়ে মেসি একা কী করবেন


ক্রীড়া ডেস্ক জুন ৩০, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
দশজন ‘মূর্তি’ নিয়ে মেসি একা কী করবেন

ঢাকা: ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় পিএসজি-ইন্টারের ম্যাচটি উত্তাপ ছড়াচ্ছিল আগে থেকেই। এই উত্তাপ যতটা না দুই দলের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে, তার চেয়ে বেশি ছিল মেসিকে ঘিরে। সাবেক ক্লাব পিএসজির সঙ্গে মেসির সম্পর্ক ভালো নয়। ক্লাব ছাড়ার পর পিএসজিকে সমালোচনার তীক্ষ্ণ বাণে বিদ্ধও করেন মেসি। 

যা এই ম্যাচের আগে পিএসজি-ভক্তদের বিশেষভাবে তাতিয়ে দিয়েছিল। তবে মেসি ও মেসিকে ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা সরিয়ে রাখলে এ ম্যাচটা যে একপেশে হতে যাচ্ছে, তা অনুমেয়ই ছিল।

তারপরও মেসি-ভক্তরা মনের গোপন কোণে হয়তো প্রিয় খেলোয়াড়কে ঘিরে স্বপ্ন বুনছিলেন। এই ম্যাচে অদম্য পিএসজিকে থামাতে কিছু করতে হলে মেসিকেই করতে হতো। 

কিন্তু গতকাল কয়েক বছর পর ছাইভস্ম থেকে উঠে এসেছে অনেক দিন আগে আড়াল হয়ে যাওয়া একটি লাইন, ‘মেসি একা কী করবেন!’ হ্যাঁ, সত্যি কথা হচ্ছে, বড় ম্যাচে এককভাবে গতিপথ বদলে দেওয়ার সেসব দিন মেসি আরও আগে পেছনে ফেলে এসেছেন। এখন কিছুটা হলেও সতীর্থদের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তার। যা গতকাল রাতে মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়ামে একেবারেই মেলেনি।

গতকাল প্রথমার্ধের পারফরম্যান্সই ধরা যাক। বিরতির আগেই ইন্টার মায়ামির জালে বল জড়িয়েছে চারবার। তবে গোল সংখ্যা ম্যাচে মায়ামির হতশ্রী দশাকে ঠিক বোঝাতে পারছে না। ম্যাচে পিএসজির ৭৩ শতাংশ বল দখলের বিপরীতে মায়ামির দখলে বল ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে পিএসজি ১০টি শট নিয়ে ৬টি লক্ষ্য রাখে এবং গোল আদায় করে নেয় এক হালি। অন্যদিকে মায়ামির শট, লক্ষ্যে শট, বড় সুযোগ তৈরি এবং কর্নার সবই ছিল শূন্য।

একটি ভাইরাল মিমে দেখা যায়, ম্যাচ চলাকালে গোলপোস্টের নিচে পানীয় নিয়ে বসে বই পড়ছেন পিএসজি গোলরক্ষক দোন্নারুম্মা। এ ছবিটা মজা করে বানানো হলেও কাল প্রথমার্ধে দোন্নারুম্মা চাইলে এমনটা করতেই পারতেন। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময় বল ছিল মায়ামির বক্সের আশপাশেই।

মেসি এ সময় বলের স্পর্শই পেয়েছেন কদাচিৎ। প্রতি-আক্রমণে ওঠার জন্য প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু সতীর্থদের কাছ থেকে কোনো সাহায্যই পাননি। প্রথমার্ধে টানা গোল খাওয়ার একপর্যায়ে ক্যামেরার ক্লোজআপে ধরা পড়েছিল মেসির মুখ। হতাশা, ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব-একসঙ্গে ভেসে উঠেছিল সেই মুখচ্ছবিতে। মেসির এই বিব্রতকর দশার কথা সামনে এনেছে ক্রীড়াভিত্তিক পোর্টাল দ্য অ্যাথলেটিকও।

গতকাল রাতে মেসির অসহায়ত্বকে তারা তুলে এনেছে এভাবে-লিওনেল মেসি সব সময় মাঠে হেঁটে বেড়ান। কিন্তু (স্থানীয় সময়) রোববার বিকেলে প্রথমার্ধে তাকে হাঁটতে দেখা যায় কিছুটা উদ্ভ্রান্তভাবে, আর দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা জেদ নিয়ে। তার সাবেক ক্লাব ও সাবেক কোচ লুইস এনরিকেই তাকে এমন লজ্জায় ফেলেছেন। 

পিএসজি যে ধরনের গোল করেছে, একই রকম গোল মেসি বার্সলোনার হয়ে নিজের সোনালি সময়ে করেছেন। এটা ছিল মূলত মেসির জন্য ঝলমলে অতীতের একটি ফ্ল্যাশব্যাক। আর দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ভাগ্য নির্ধারণ যখন শেষ, তখন মেসি নিজের কিছু ঝলক দেখিয়েছেন বটে। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত এমন ম্যাচ, যা মেসি মনে রাখতে চাইবেন না।

দ্বিতীয়ার্ধে মেসি অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন ম্যাচটাতে মনে রাখার মতো কিছু করতে। চেয়েছিলেন খড়কুটো আঁকড়ে ঘুরে দাঁড়াতে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে জাদুকরি এক পাসে লুইস সুয়ারেজকে বলও বাড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গোলরক্ষকের সামনে একা দাঁড়িয়ে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি সুয়ারেজ। যখন সতীর্থদের দিয়ে হচ্ছিল না, নিজেও চেষ্টা করেছেন ড্রিবল করে ঢুকে একা কিছু করার।

কিন্তু পিএসজির মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে একা একা কিছু করে ম্যাচের গতিপথ বদলে দেওয়ার সেই দিন যে পেছনে ফেলে এসেছেন মেসি! এরপরও আশপাশ থেকে সামান্য সঙ্গ পেলে কিংবা কেউ যদি ৯০ মিনিট জুটি বেঁধে খেলতে পারতেন, তবে মেসি হয়তো পারতেন! কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এই প্রসঙ্গ টেনে এনে মেসির সতীর্থদের ধুয়ে দিয়েছেন সুইডিশ কিংবদন্তি জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচও।

ফুট মারকেটোর সঙ্গে আলাপচারিতায় মেসির সতীর্থদের ‘মূর্তি’ উল্লেখ করে ইব্রা বলেছেন, ‘মেসির হার? না না, এটা মেসির দোষ নয়। ম্যাচটা হেরেছে ইন্টার মায়ামি, মেসি নয়! আপনি কি দলটা দেখেছেন? মেসি খেলছে পাথরের মূর্তির সঙ্গে, সতীর্থদের সঙ্গে নয়! যদি সে সত্যিকারের কোনো দলে থাকত, যেমন প্যারিস, ম্যানচেস্টার বা বড় কোনো ক্লাবে, তাহলে দেখা মিলত আসল সিংহের। মেসি খেলে, কারণ সে খেলাটাকে ভালোবাসে। সে এমন কিছু করতে পারে, যা ৯৯ শতাংশ খেলোয়াড়ের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু তার চারপাশে যারা আছে, তারা যেন সিমেন্টের বস্তা কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছে!’

ইব্রার কথা অনেকের কাছে ‘অতি মেসি-প্রেম’ মনে হতে পারে, রূঢ় মনে হতে পারে। কিন্তু এই বাস্তবতাকে অস্বীকারেরও সুযোগ নেই। ফেদেরিকো রেদোনদো ছাড়া আর কেউই সেভাবে পিএসজির বিপক্ষে ভালো খেলতে পারেননি। মাঠে নামার আগে পিএসজির নামের নিচেই যেন চাপা পড়ে যান তারা। যার ফলাফলস্বরূপ প্রথমার্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়াই একের পর এক চার গোল হজম করে বসে মায়ামি।

তবে খেলায় কোণঠাসা মেসিই ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন। নিজেদের উদ্‌যাপন বাদ দিয়ে সবাই মেসির কাছেই একে ছুটে আসছিলেন। উসমান দেম্বেলে, খিচা কাভারাস্কেইয়া, মার্কিনিউস এবং ভিতিনিয়ারা মাঠে ও ড্রেসিংরুমে মেসির সঙ্গে দেখা করেছেন। এর মধ্যে ব্যালন ডি’অর দাবিদার দেম্বেলে তো মেসির জার্সির পাশাপাশি শর্টস এবং বুটও নিয়ে নিয়েছেন। মেসির এই প্রভাব নিয়ে মায়ামি কোচ হাভিয়ের মাচেরানো বলেছেন, ‘পিএসজি দারুণ ছন্দে আছে। তারা সবকিছুর চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু মানুষ এখনো মেসিকে দেখতে টিকিট কেনে, এমনকি ৩৮ বছর বয়সেও।’

মেসির দলকে বিধ্বস্ত করেও মেসিকে নিয়ে মুগ্ধতা গোপন করতে পারেননি পিএসজির ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার লুকাস বেরলাদোও। ২১ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘লিও (মেসি) আলাদা একজন মানুষ। তার সঙ্গে খেলতে পারাটা অসাধারণ। টিভিতে আমি শিশু হিসেবে তার খেলা উপভোগ করেছি। ফলে এটা অভিনব একটা বিষয় ছিল।’

এআর

Wordbridge School
Link copied!