ঢাকা: এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সাবিনা খাতুন। বাংলাদেশের নারী ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই নাম। দেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশের কোনো ক্লাবের হয়ে খেলতে গিয়ে আগেই ইতিহাস গড়েছেন তিনি। আর এখন ফুটবল বিশ্বে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলকে নিয়ে যাচ্ছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সহ-অধিনায়ক সাবিনা খাতুন প্রতিটি ম্যাচেই উদ্ভাসিত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে প্রতি পক্ষের জালে বল পাঠাচ্ছেন অসংখ্যবার। ঘরোয়া ফুটবল মানে সাবিনার গোল উৎসব। ইতিহাস সৃষ্টি করে বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশের কোনো ক্লাবে খেলতে গিয়েছিলেন জাতীয় প্রমীলা দলের এই ফুটবলার।
মালদ্বীপস উইমেন্স ফুটসাল ফিয়েস্তা’নামের এই টুর্নামেন্টে রেকর্ড সংখ্যক গোল করেছেন সাবিনা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৭ গোল করেছেন তিনি। টুর্নামেন্টে তার দলের ৬ ম্যাচের সবগুলোতেই ‘কুইন অব দ্য ম্যাচ’হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন দেশসেরা এই নারী ফুটবলার।
তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন না সাবিনা খাতুন। সেই আক্ষেপ ঘোচানের মঞ্চ হিসেবে ভারতের শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের সব থেকে বড় টুর্নামেন্টে আগফানিস্তানের জালে গুনে গুনে পাঁচটি গোল করেছিলেন বাংলাদেশের গোল মেশিনখ্যাত এই প্রমীলা স্ট্রাইকার। প্রতি ম্যাচেই তার পা থেকে এসেছে গোলের ফুলঝুরি। দাপটের সঙ্গে তার দলও উঠে যায় ফাইনালে। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পারলেন না সাবিনা খাতুন। স্বাগতিক ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশী এই প্রমীলা ফুটবলারের।
সাতক্ষীরার মেয়ে সাবিনার অর্জন শুধু মালদ্বীপ পুলিশ দলের হয়ে ফুটসাল খেলতে যাওয়াই নয়। বরং অনেক কিছু প্রমানেরও। একজন বাঙালী নারীর ফুটবল হয়ে ওঠার যেমন তেমনি বাঁধ ভেঙে সেই নারীর ভীনদেশিদের মন জয় করারও। অথচ এক সময় বাংলাদেশের এই মেয়েদেরই ঘর থেকে বেরুনোর অনুমতি ছিল না। মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা শুরুর পরও এই সাবিনার পূর্বসূরীদের ওপরই পড়েছে খড়গ। মিছিল, প্রতিবাদ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হুমকি এসেছে ‘কতল’-এরও!
বাংলাদেশি মুসলিম ঘরের মেয়ে হয়ে মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা? এই নারীদের জন্য তাই মাঠ ছিলো নিষিদ্ধ। সেই সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে সাবিনা খাতুন। যুদ্ধে জয় নিয়ে দৌর্দণ্ড প্রতাপে মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাবিনা। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিজেকে প্রমান করেছেন। দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই এশিয়ান পর্যায়েও দেখিয়েছেন, প্রমান করেছেন নিজের সক্ষমতার। পুরুষের পাশাপাশি প্রমীলারাও যে ক্রীড়াজগতে নিজেদের নাম তৈরি করেছেন, সেটা এখন প্রমানিত।
১৯৯৩ সালের ২৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা সদরের পলাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাবিনা খাতুন। তার পিতা মো: সৈয়দ গাজী ও মা মমতাজ বেগম। সাবিনা তাদের চতুর্থ সন্তান। ২০০৯ সালে অস্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে ফুটবলের সাথে সাবিনার সম্পর্ক। সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল কোচ আকবরের মাধ্যমেই ফুটবলের হাতেখড়ি হয় তার। স্কুল পর্যায়ে, আন্তঃস্কুল ও আন্তঃজেলা পর্যায়েও।সেখানে ভাল খেলার সুবাদে ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে। ২০০৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে সাবিনার। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
সাতক্ষীরার এই তরুণী ২০১৩ সালে ফিফা উইমেন্স কোচিং কোর্স ও একই বছর এএফসি ‘সি’ সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন। সাবিনার শখ ভ্রমণ করা। দেশি ফুটবলারদের মধ্যে তার আদর্শ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হক। আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার আদর্শের স্থানটি দখল করে নিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বসেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি ও ব্রাজিলের খ্যাতিমান নারী ফুটবলার মার্তা ডা সিলভা।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই







































