• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কারা আসছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৯:৩৬ পিএম
কারা আসছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে

ঢাকা : আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাত বছর পর শনিবার (১৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর সংগঠনটিতে আসছে নতুন নেতৃত্ব।

শুদ্ধি অভিযানের মতো বড় ধাক্কা ও ভিন্ন রকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছে। সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অভিযোগের কারণে নতুন কমিটিতে তাদের স্থান হচ্ছে না— এমনটি নিশ্চিত করেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা।

বিতর্কিতদের সরিয়ে দেওয়া হবে নেতৃত্ব থেকে— এমন খবরে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর থেকে দৌড়ঝাঁপ ও নানাভাবে তদবির করে আসছেন পদপ্রত্যাশীরা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে এক ডজন নেতা এগিয়ে আছেন। তাদের মধ্য থেকে দুজনকে বসানো হবে শীর্ষ দুই পদে। শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন, সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। শীর্ষ দুই পদে দায়িত্বে কে আসছেন, সম্মেলনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সঙ্গে সেই আলোচনা ও বিশ্লেষণ বেশি চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

সূত্র বলছে, চলমান শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ বিতর্কিত, অভিযুক্ত ও দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে রক্ষা পাবে। সংগঠনের নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আসার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত অনেকেই বাদ পড়ছেন। সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্ব ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে দুটি পদে আনার সম্ভাবনা দেখছেন পদপ্রত্যাশীরাও।

এ সংগঠনের নেতাদের বয়সের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবার তরুণ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার আলোচনা চলছে। নানা কারণে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে অতীতে আন্দোলন ও সংগ্রামে ভালো ভূমিকা রয়েছে— এমন নেতারাই গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পাবেন বলেও তাদের প্রত্যাশা। দল গত প্রায় ১১ বছর ধরে টানা সরকারে থাকলেও যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে ছিলেন ও অতীতে দলের দুর্দিনে রাজনীতির মাঠে সাহসী ভূমিকা আছে যাদের, শীর্ষ দুটি পদে এমন প্রার্থীরাই এগিয়ে আছেন।

ক্যাসিনোকাণ্ডে খড়্গ নেমে আসার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সরকারি দলের চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর নানা অভিযোগের কারণে ২৩ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।


এর একদিন পর সংগঠন ও সম্মেলনের সব কার্যক্রম থেকে সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথকেও বিরত থাকার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিন কেন্দ্র ও দুই মহানগরের নেতা নির্বাচন হবে।

সংগঠন সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগের পরে ক্যাসিনো ঝড়ের ঝাপটা বেশি লেগেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগে। চলমান শুদ্ধি অভিযান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই নেতাকেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। দুজনেই আছেন অভিযোগের কাঠগড়ায়।

শুধু কেন্দ্রীয় কমিটিই নয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অনেক নেতার দখলবাজি, টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও অনিয়ম সংগঠনের পাশাপাশি মূল দল আওয়ামী লীগকেও সমালোচনার মুখোমুখি করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকারকেও ‘বিব্রত’ করে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ড।

কঠোর শুদ্ধি অভিযান চলাকালীন কেমন হতে পারে সংগঠনটির নতুন কমিটি, কারা আসছেন নেতৃত্বে, বিতর্কিত নেতৃত্বের গন্তব্য কোথায়— আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের কাছেও একই প্রশ্ন ও নানা কৌতূহল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ‌কে নতুনভা‌বে ঢে‌লে সাজা‌নোর লক্ষ্যে এবার ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজের স‌ঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে যোগ্য, সৎ, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ও রাজনীতিতে দীর্ঘ পথপরিক্রমা রয়েছে— এমন নেতারাই স্বেচ্ছা‌সেবক লীগের নতুন নেতৃ‌ত্বে ঠাঁই পাবেন।

অভিযুক্তরা চলমান অভিযানের পাশাপাশি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়ছেন। প্রবীণ ও নবীন মিলিয়ে নতুন মুখ উঠে আসার সম্ভাবনাই বেশি। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতির ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, ইমেজ নষ্ট, এমন কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের অবশ্যই সৎ, অভিজ্ঞ ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষ হতে হবে।’

এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, মঈন উদ্দিন মঈন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম নুরু, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, কাজী শহিদুল্লাহ লিটন, তাপস কুমার পাল ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জি প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, আবদুল আলীম বেপারী, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, দপ্তর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, প্রচার সম্পাদক ওবায়দুল হক খান এবং সহ-পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক এম এ হান্নান প্রমুখ।

অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ জানান, ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী’।

তিনি জানান, ‘আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। এবারের সম্মেলনে ১৯৭৫ জন কাউন্সিলর এবং প্রায় ১৮ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। অতিথি থাকবেন প্রায় ১৫ হাজার। সম্মেলন সুন্দর করতে ১৩টি উপকমিটি করা হয়েছে।’

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক ড. উৎপল কুমার সরকার, সদস্য সচিব কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুুল আলিম বেপারী, সহ-প্রচার সম্পাদক ওবায়দুল হক খান প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!