• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘পুলিশ হেরে গেলে জিতে যায় অমানুষ’


ফেসবুক থেকে ডেস্ক আগস্ট ২৫, ২০১৬, ১০:১৮ এএম
‘পুলিশ হেরে গেলে জিতে যায় অমানুষ’

যানজট, অনেক বছর ধরেই রাজধানীবাসীর জন্য এক জ্যান্ত অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিনই নাগরিকদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা গিলে খাচ্ছে এই যানজট। রাস্তার বের হবেন, আর যানজটে পড়বেন না-এমন সৌভাগ্য নাগরিক এই শহরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল!

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, মাত্র ১০ মিনিটে কাঙ্খিত গন্তব্যে না পৌছানোয় চোরাচালানসহ অপরাধীদের একটি চক্র গোয়েন্দা পুলিশের হাত থেকে ফসকে যায়! শুধু যানজটের কারণেই এমনটি হয়েছে।

সম্প্রতি যানজটে পড়ে সময় নষ্ট হওয়ায় অপরাধীদের ধরতে না পারা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন গোয়েন্দা পুলিশের একজন চৌকস কর্মকর্তা।

বুধবার (২৪ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ বিষয়ে একটি আক্ষেপধর্মী লেখা পোস্ট করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ও নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন

এডিসি মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন-এর সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো :-

‘গুলশান থেকে একটি কাজ শেষ করে আবার অফিসেই ফিরছিলাম। এমন সময় ফোনের মাধ্যমে জরুরী একটি খবর আসল, ‘স্যার, মাজার রোডের দিকে সেই চালানটা আজ ডেলিভারি হবে। এক ঘণ্টার মধ্যে গেলে মালামালসহ চারজনকে ধরতে পারবেন........’

হাতে সময় খুব কম....গত কয়েকমাস ধরেই এই খবরটার অপেক্ষায় ছিলাম। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যাচ......... মিস হয়ে গেলে নিশ্চিতভাবে আগামী তিন মাস মন খারাপ থাকবে ......
তাই, উড়াল দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল......দুর্ভাগ্য,..... কিছুদূর যাওয়ার পর মহাখালীতে আটকে গেলাম.......একটি লোকাল বাস তার পশ্চাৎদেশ বাঁকা করে দাঁড়িয়ে আছে। এরই মধ্যে অনেক জ্যাম সৃষ্টি হয়ে গেছে.........। মনে হচ্ছে ঘর থেকে লোকজনকে ডেকে এনে গাড়িতে তুলবে! আমাদের গাড়ির রং দেখে বুঝা মুশকিল এটা পুলিশের গাড়ি..........তাই কোন সমীহই পেলাম না!

এক সহকর্মী গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বাসের হেল্পারকে কি যেন একটা বলল......তৎক্ষণাৎ সে একটা বোকার মত হাসি দিয়ে ড্রাইভারকে চেঁচিয়ে বলে উঠল, ‘ওস্তাদ, পেছনে প্লাস্টিক না........ লোহা... লোহা........ তাড়াতাড়ি সাইড দ্যান।’ আপদ কেঁটে গেল, ড্রাইভার বাসের পশ্চাৎদেশ সোজা করলো...... আমরাও রওয়ানা দিলাম। কিন্তু রেল লাইনে গিয়ে আবার সিগন্যালে আটকে গেলাম,.... এখন উপায়?....... রেল লাইনের সিগন্যাল তো আর পুলিশ বুঝে না।..... ওর কাছে তো সবই প্লাস্টিক.... যেহেতু সে নিজেই লোহা.....

শের-ই-বাংলা নগর পর্যন্ত যেতে যেতে ৩৫ মিনিট সময় লেগে গেল...... কল্যাণপুর পৌছালাম ৫০ মিনিটে ......... আর গন্তব্যে পৌছালাম মাল ডেলিভারির ১০ মিনিট পর। ....... হতাশার চাদর নেমে আসল আমার পুরো টিমের উপর... মারাত্মক মনোকষ্ট নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে রইলাম মাজার রোডের একটি চায়ের দোকানের সামনে।

..... চালানটি কেন মিস করলাম, মনে মনে তার ১০১টি কারণ খুঁজতে লাগলাম। যদিও এরকম হরহামেশাই হয়। কিন্তু এটা অতি আকাঙ্ক্ষিত একটি অ্যাসাইনমেন্ট ছিল.... তাই আফসোসটা একটু বেশিই অনুভব করছিলাম। ট্রাফিক জ্যামের কারণে জিনিসটা মিস হয়ে গেল!!!!!!!!!!!!!.......

নিত্যদিনের ট্রাফিম জ্যাম ঠেলে সবাই যার যার গন্তব্যে যায়। জ্যামের কারণে অনেকেরই হয়তো অনেক কিছু মিস হয়...... কিন্তু আমাদের সেদিনের মিসটি ছিল ১৭ কোটি মানুষের মিস।.......অস্ত্রের যে চালানটি সেদিন মিস হলো সেগুলো দিয়ে যে কেউ মারা যেতে পারে... যে কেউ.....

....একইভাবে পুলিশের দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে মাদক, বিস্ফোরক, পেশাদার ডাকাত-ছিনতাইকারী-চোর, জঙ্গি... এরকম হাজারও রকমের চালান বা আসামি ধরতে ব্যর্থ হয় ট্রাফিক জ্যামের কারণে..... এটা পুলিশের না, এটা দেশের ব্যর্থতা......তাই, পুলিশ হেরে গেলে জিতে যায় অমানুষ.....

নিয়মিতভাবে এরকম অনেক কিছুই মিস হচ্ছে.... কিছু মেনে নেয়া যায়, কিছু মেনে নেয়া যায় না.....যেমন, তিন ধরনের যানবাহন রয়েছে, যা সঠিক সময় সঠিক জায়গায় না পৌছালে অনেক বড় কিছু মিস হয়ে যায়:
১. মুমূর্ষু রোগীর অ্যাম্বুলেন্স
২. ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং
৩. দায়িত্বরত পুলিশের গাড়ি

.....এই তিন ধরণের গাড়ি মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ গুরুতর প্রয়োজন মেটায়...পৃথিবীর অনেক দেশ এই তিন ধরনের গাড়ির যাতায়াত নিরবিচ্ছিন্ন রাখার জন্য আইনগতভাবে রাস্তায় অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা রেখেছে।.... কেউ অবহেলা, অমান্য বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হয়।

ভার্জিনিয়া-ওয়াশিংটন ডিসিতে কখনও কখনও দেখেছি পাশ দিয়ে চলাচলকারী অন্যান্য গাড়ি এই তিন ধরণের গাড়ি দেখলে অনেক সময় ইঞ্জিন বন্ধ করেও দাঁড়িয়ে যায়। রাস্তার প্রশস্ততার ওপর ভিত্তি করে কোনও কোনও দেশে এই গাড়িগুলোর জন্য আলাদা লেন রিজার্ভ রাখতেও দেখা যায় .......যেমন: প্রাগ, চেকোস্লোভাকিয়া।

অনেক দেশে স্কুল পরিবহনগুলোর ক্ষেত্রেও রাস্তায় চলাচলে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার প্রতিবিধান রয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই এদেশেও আমরা এসব সেবামূলক পরিবহনের জন্য #Priority_Lane দেখবো। আসুন,.... যে পর্যন্ত না আমরা সেটা দেখি সে পর্যন্ত এই চার প্রকার গাড়িকে আমরা নিজেরাই Priority দেই....

কেননা, কে বলবে কোন একদিন হয়ত:
- এই অ্যাম্বুলেন্সের মুমূর্ষু রোগীটি আপনি কিংবা আপনার কোনও প্রিয়জন হতে পারে
- এই ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটি আপনারই বাসায় যেতে পারে
- এই পুলিশের গাড়িটি আপনাকে যে অস্ত্রে মারা হবে সেটাই উদ্ধারে যাচ্ছে.....

মানবতা ‘নগর ভবন’-এ পরে ঢুকে.......আগে ঢুকে মানুষের মনে।........ কারণ মানবিকতা থাকে মানুষের অভ্যাসে, বোধে এবং ত্যাগে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!