• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
এলডিসি থেকে উত্তরণ সংলাপ

মূল চ্যালেঞ্জ সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১১, ২০১৮, ০২:১২ পিএম
মূল চ্যালেঞ্জ সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

ঢাকা : স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জে পড়বে। এ বাধাগুলো অপসারণে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। শনিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ : ফাঁদ ও প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক নানা সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে গত কয়েক দশকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সূচকে নির্ধারিত মান অর্জন করে এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এটি আমাদের জাতীয় জীবনের একটি বড় ঘটনা বলে অভিহিত করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা। তারা বলেন, এখনো আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো অর্জনে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা, দক্ষ মানবসম্পদের উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।

সংলাপে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় চট্টাচার্য, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ৫টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শিল্প শ্রমিক এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) ব্যাপক অবদান রয়েছে। এদের কারণে বাংলাদেশ আজ এলডিসি থেকে বের হচ্ছে। আরো ৬ বছর বাংলাদেশ এলডিসির সব সুবিধা পাবে। আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গুণগত বিনিয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। তবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আমাদের গুণগতমান বাড়বে। তবে আমাদের জন্য সুশাসন একটি বড় ইস্যু। দুর্নীতি কমাতে হবে। যদিও কোনো দেশ একেবারেই দুর্নীতিমুক্ত নয়। চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাও আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

আগামী ১২-১৬ মার্চ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সভায় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য মনোনীত হচ্ছে। বাংলাদেশ তিনটি সূচকে জাতিসংঘের নির্ধারিত মান অর্জন করেছে। বাংলাদেশকে পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনটি সূচকে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হবে। এরপর উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাংলাদেশ চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করবে। তখন উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করবে ইকোসোক। সেই সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ সভায় অনুমোদন হলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর হবে ২০২৪ সালে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য ঘটনা। উত্তরণকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। বাংলাদেশ এমন সময় এলডিসি থেকে উত্তরণ হচ্ছে যে সময় বাংলাদেশ নিম্নমধ্যআয়ের দেশ। বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মধ্য দিয়ে উন্নত দেশ হতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুক‚লে নেই।

সংলাপে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার পথে মাত্র প্রাথমিক মাইলফলক অতিক্রম করতে যাচ্ছি আমরা। তবে আমাদের প্রতি চারজনের একজন এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। প্রতি তিনজনে দুইজন অর্থনৈতিক সঙ্কটপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। কোনো রকম অর্থনৈতিক দুর্যোগ হলেই এরা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসে। প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশ নিচের দিকে রয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণে বৈদেশিক ঋণে সুদের হার বাড়বে। আগামী দুই-এক বছরেই সুদের হার আরো ১.৫ শতাংশ বাড়বে। তবে এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি ঋণ পাওয়ার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, সরকারকে এমন নীতি তৈরি করতে হবে যাতে বেসরকারি বিনিয়োগ সহজে এগিয়ে আসে। রফতানি বাড়াতে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের পক্ষে মত দেন তিনি। নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনায় এনজিও, উন্নয়ন সহযোগী, মিডিয়াসহ সবাইকে যুক্ত করতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে কৌশল নিতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ এক বছর ধরে স্থির হয়ে আছে। এফডিআই বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এক গবেষণার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ৩০০-এর মতো পণ্য রফতানি করি। কিন্তু ৮০ শতাংশ রফতানি হয় একটি পণ্য থেকে। এ অবস্থায় রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ ছাড়া আমাদের ঋণপ্রবাহ যাতে শুধু উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলে আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সিপ্পো বলেন, বাংলাদেশের রফতানির ৯০ শতাংশই আসে অগ্রাধিকার বাজার সুবিধার মাধ্যমে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ৫.৫ শতাংশ রফতানি কমবে। তবে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে। এর জন্য শক্তিশালী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, উন্নয়নে আমাদের বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি বিশ্ব রাজনৈতিক বিষয়ের উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্ব রাজনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তারাই অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আঞ্চলিক ফোরামগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের পাশাপাশি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!