• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেমন বিদ্যালয় চায় শিশুরা


নিজস্ব প্রতিবেদক  জুন ২৯, ২০১৬, ০৮:৩৮ পিএম
যেমন বিদ্যালয় চায় শিশুরা

কেউ চায় বিদ্যালয়টি হতে হবে সুন্দর, পরিপাটি, কেউ চায় থাকবে বাগান ও খেলার মাঠ। আবার কারও চাওয়া শিক্ষকরা খুব আদর করে পড়াবেন। একটি বেঞ্চে তিন-চারজন নয়, বসবে দুজন করে শিক্ষার্থী। কেউ বলেছে বিদ্যালয়ে ক্লাসের সময় হতে হবে সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত, যাতে খেলার সুযোগ পাওয়া যায়। কারও চাওয়া শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কমানো ও মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস করানো।

এভাবে নিজেদের স্বপ্নের বিদ্যালয়ের জন্য এমন অনেক কিছুই চায় দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী। বুধবার (২৯ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়ে এমন অনেক কিছুই চেয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এসব শিশুরা। এরা সবাই পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে দেশের ৬৪ জেলার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোট ২৫৬ জন অংশ নেয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিশুদের ‘আমাদের স্বপ্নের স্কুল ও মানসম্মত শিক্ষা’ শীর্ষক অধিবেশনে শিশুরা কথা বলে। শিশুদের এই চাওয়ার উত্তরে অনুষ্ঠানের অতিথিরা বলছেন, শিশুদের এই চাওয়াগুলো পূরণ করতে পারলেই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।

অনুষ্ঠানে নিশাত জাহান নামে পঞ্চগড় সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী বলে, বর্তমানে তাদের বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয়ে বিকেল সোয়া চারটায় শেষ হয়। মাঝে মাত্র ৩০ মিনিট টিফিনের সুযোগ পাওয়া যায়। এতে তারা খেলার সময় পায় না। এ জন্য তার চাওয়া, বিদ্যালয়ের সময় হতে হবে সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পণ বলে, খাবার হিসেবে প্রতিদিন বিদ্যালয় থেকে দেয়া একই ধরনের বিস্কুট তার ভালো লাগে না। এ জন্য মাঝেমধ্যে কেক দেয়ার দাবি তার।

সিলেট থেকে আসা মনীষা রায় নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, তার স্বপ্নের বিদ্যালয়টি হবে সুন্দর, পরিপাটি সাজানো-গোছানো।  শিক্ষককে যেন নির্ভয়ে সবকিছু বলা যায়। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ে মুখস্থ নয়, হবে সৃজনশীলতার বিকাশ।

গাজীপুরের শ্রীপুরের এক ছাত্র বলেন, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হলে তাদের বুঝতে খুব সুবিধা হয়। এ সময় সে কিছুদিন আগে বায়ুদূষণ নিয়ে মাল্টিমিডিয়ার ক্লাসের উদাহরণ তুলে ধরে।

চাঁদপুরের হৃদিতা নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, তার বিদ্যালয়ে আশপাশে থাকা বখাটে ছেলেরা মাঝেমধ্যে বিরক্ত করে। এ জন্য বিদ্যালয়ে দেয়াল দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেয়ার দাবি তার। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের জন্য পুলিশ চায় সে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছে, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকেরা পড়া দিয়ে চলে যান, এ জন্য ঠিকমতো ক্লাস হয় না, মজাও লাগে না। আবার কারও বই পড়ার ইচ্ছা থাকলেও লাইব্রেরির অভাবে পড়তে পারে না। এ জন্য লাইব্রেরি চায় তারা। একজন শিক্ষার্থী জানায়, দুপুরের পর বিশ্রাম নিতে পারে না, এ জন্য তার মাথা ব্যথা করে।

শিক্ষার্থীদের কথা শুনে এই অধিবেশনের প্রধান অতিথি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিশুদের এই কথাগুলোর তালিকা করে ঠিকমতো পূরণ করতে পারলে সেটাই হবে মানসম্মত শিক্ষা। তবে এই মানসম্মত শিক্ষায় যেন বৈষম্য না হয়।

এই অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আকরাম আল হোসেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উপদেষ্টা লায়লা বাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহসান হাবীব।

এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে মানসম্মত শিক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষকদের নিবেদিত হতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হলো ভিত্তি; এটা দুর্বল হলে সবকিছু দুর্বল হয়ে যাবে।

মূল প্রবন্ধে সেন্টার ফর রিচার্স অ্যান্ড ইনফরমেশনের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস বলেন, শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে মন খুলে কথা বলা দরকার।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব হূমায়ুন খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীরসহ কয়েকজন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষক, অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!