• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ভুক্তভোগীদের অভিমত

সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন তাৎক্ষণিক শাস্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২২, ২০১৮, ১১:৫৭ এএম
সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন তাৎক্ষণিক শাস্তি

ঢাকা : প্রতিকারের উপায় নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব এবং লোকলজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তবে সাইবার অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে এ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন অপরাধের শিকার বেশিরভাগ ভুক্তভোগী। সাইবার অপরাধ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিকারী সংগঠন ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার (২১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংগঠনটির তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। বালিঘড়ি মডেল কাঠামোর ভিত্তিতে পরিচালিত জরিপে সাইবার অপরাধের শিকার ১৩৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা জানানো হয় অনুষ্ঠানে। ভুক্তভোগীরা কোন ধরনের অপরাধের শিকার, প্রতিকারের জন্য আইনের আশ্রয় নিয়েছেন কি না, না নিয়ে থাকলে তার কারণ, অভিযোগ করার পর তার অভিজ্ঞতা কী এবং প্রতিকারের জন্য কী করা উচিত বলে মনে করেন- এ বিষয়গুলো সামনে আনা হয় সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের।

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মুস্তাফিজ অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, দেশে সাইবার অপরাধের শিকারদের ৫১ দশমিক ১৩ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ পুরুষ।

জরিপের ফলাফল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অপরাধের শিকার হওয়া ৪৪ শতাংশ ভুক্তভোগী মনে করেন, অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ঘুণপোকাখ্যাত এ নীরব ঘাতকের হাত থেকে পরিত্রাণ মিলবে। ২৯ শতাংশ আইনের প্রয়োগ বাড়ানো এবং ২৭ শতাংশ সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নালিশ করে সন্তুষ্ট বলে জানান জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২১ শতাংশের মধ্যে ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী। নালিশ করে উল্টো হয়রানির ভয়ে পুরো বিষয়টি চেপে যান ২৩ শতাংশ।

অন্যদিকে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কায় ঘটনা গোপন রাখেন ১৭ শতাংশ এবং প্রভাবশালীদের ভয়ে নিশ্চুপ থাকেন ৫ শতাংশ ভুক্তভোগী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০ দশমিক ৫২, ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩ দশমিক ৭১, ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ১২ দশকি ৭৭ এবং ৪৫ বছরের বেশি ৩ শতাংশ।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশে আক্রান্ত সাইবার অপরাধের মধ্যে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হন ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ নারী। একই ধরনের অপরাধের শিকার হন ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ পুরুষ। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাকিং/তথ্য চুরির শিকার নারী-পুরুষের অনুপাতে পুরুষের অবস্থান দ্বিগুণের বেশি। এ ক্ষেত্রে ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত হলেও নারীর আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।

অপরাধের ধরনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ছবি বিকৃতির মাধ্যমে অনলাইনে অপপ্রচারে নারী-পুরুষের এ অনুপাত অনেকটাই বিপ্রতীপ বলা চলে। এ অপরাধে আক্রান্ত নারীর হার ১২ দশমিক শূন্য ৩ হলেও পুরুষের বেলায় তা ৩ দশমিক ৭৬। অনলাইনে হুমকিমূলক বার্তাপ্রাপ্তির হার নারীর ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৭৭ এবং পুরুষ ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৭৬।

অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ইলেকট্রনিক সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক যুগ্ম সচিব আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক মঈনউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান এবং সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা একেএম নজরুল হায়দার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আবুল মানসুর মোহাম্মদ সারফ উদ্দিন বলেন, নবম ও দশম শ্রেণির মেয়েরা সাইবার ক্রাইমের শিকার বেশি হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে ১০০টি স্কুলে সচেতনতামূলক বই বিতরণ করেছি। এ বই শুধু মেয়েদের জন্য নেয়, তাদের বাবা-মা ও ভাইদের পড়ার জন্যও। যদি সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়, তাহলে ৫০ শতাংশ অপরাধ এমনিতেই কমে আসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সাইবার ক্রাইম বন্ধে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ সাইবার অপরাধ ফেসবুককেন্দ্রিক। আইসিটি বিভাগকে আহ্বান জানাব তারা যেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে; যাতে কেউ হামলার শিকার হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!