• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে‘ ভাই-বোনের বিয়ের আশঙ্কা


আদালত প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৪:৩৫ পিএম
‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে‘ ভাই-বোনের বিয়ের আশঙ্কা

ঢাকা : বাংলাদেশে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের ফলে ভবিষ্যতে ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা চরমভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করবে উল্লেখ করে দুধের শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণে ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের বিরোধিতা করে একটি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

নোটিশে ধর্ম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ), নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো), নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।

 নোটিশে ‘মিল্ক ব্যাংক’ ইস্যুতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, “ইসলাম ধর্মমতে, কোনো শিশু কোনো মহিলার দুধ পান করলে ওই মহিলা ওই শিশুর দুধমাতা হয়ে যায় এবং উক্ত মহিলার সন্তানরা উক্ত শিশুর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হয়। ফলে বাংলাদেশে উক্ত ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের ফলে একই মায়ের দুধ পানের কারণে ভবিষ্যতে ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা চরমভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, ভাই ও বোনের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ এবং তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন ‘মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন, ১৯৩৭’-এর সরাসরি লঙ্ঘন।”

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করেছে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’। মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণের এ ব্যাংকটি ১ ডিসেম্বর চালু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউয়ের (এনআইসিইউ) নিজস্ব উদ্যোগ। বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকটি স্থাপন করা হয়েছে।

জানা গেছে, যে মায়েদের সন্তান জন্মের পর মারা গেছে বা নিজের সন্তানকে খাওয়ানোর পরও মায়ের বুকে অতিরিক্ত দুধ আছে, সেই মায়েরা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে দুধ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। যে নবজাতকের জন্মের পরই মা মারা গেছেন বা যাদের মা অসুস্থতার জন্য দুধ খাওয়াতে পারছেন না, সেই নবজাতকরা এই দুধ খেতে পারবে।

আইসিএমএইচ ক্যাঙারু মাদার কেয়ারে মা ছাড়া খালা, নানি বা অন্যদের সঙ্গে যে নবজাতকদের রাখা হচ্ছে, তারাও এই দুধ খেতে পারবে। স্ক্যানো ও এনআইসিইউতে থাকা অপরিণত বয়সে জন্ম নেয়া ও অসুস্থ নবজাতকদের সংরক্ষণ করে রাখা দুধ খাওয়ানো হবে।

৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া ২ হাজার গ্রামের কম ওজনের নবজাতকদের মা বা অন্য অভিভাবকদের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাকে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার বলে।

আইসিএমএইচ স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান। এর যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালে। সরকার, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা ব্যক্তির অনুদান এবং ইনস্টিটিউটের নিজস্ব অর্থ মিলিয়ে এটি পরিচালিত হচ্ছে।

আইসিএমএইচের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ মান্নান বললেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে, তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ এবং অন্য নবজাতকদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যাতে ইসলামী শরিয়ার কোনো লঙ্ঘন না হয়, সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।’

ব্যক্তি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় মিল্ক ব্যাংকটি স্থাপনে এখন পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক মান্নান বলেন, ‘ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের ব্যাংক পরিচালনা ব্যয়বহুল হলেও সরকারের জন্য এ খরচ তেমন বেশি নয়। আর নবজাতকদের বাঁচাতে এ ব্যাংক যে ভূমিকা রাখবে, সে তুলনায় এ খরচ কিছুই নয়।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!