• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিকাফের ফজিলত ও তাৎপর্য


আ শ ম বাবর আলী জুন ২৪, ২০১৬, ০৩:৫৪ পিএম
ইতিকাফের ফজিলত ও তাৎপর্য

আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ও সহানুভূতির মাস রমজান। অন্য ১১টি চান্দ্র মাসের তুলনায় এ মাসটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অন্য মাসগুলোর প্রত্যেকটিতে রয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি রহমতময় দিন অথবা রাত। কিন্তু মাহে রমজানের প্রতিটি দিবস এবং রাতই অত্যন্ত রহমত ও বরকতময়। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তের ইবাদতের ফজিলত বহুগুণ বেশি, যা অন্য কোনো মাসে নেই। এ মাসের একটি ফরজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমতুল্য।

একটি সুন্নত অন্য মাসের একটি ফরজের সমান। একটি নফল অন্য মাসের একটি সুন্নতের সমান। এ মাসে আল্লাহর ইবাদতে সাধকের চোখের অশ্রু আল্লাহর রাহে জিহাদি আত্মার শহীদি রক্তের সমান মর্যাদাশীল। এমনকি রোজাদারের শান্তির নিদ্রা রাব্বুল আলামিনের দরবারে পবিত্র ইবাদতরূপে মঞ্জুর হয়ে যায়।

এছাড়া এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত, যার মর্যদা অফুরন্ত। সে রাতের নাম ‘শবেকদর’। এ রাতেই রহমাতুল্লিল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দার পথ নির্দেশক হিসেবে জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহম্মদ মোস্তফা (সা.) এর কাছে প্রেরণ করেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম বাণী, যা সর্বকালের মুসলমানদের সার্বিক শান্তি ও কল্যাণের একমাত্র নির্দেশক। তাই এ রাতের ইবাদতকে পরম করুণাময় আল্লাহ সহস্র মাসের রাতের ইবাদতের চেয়েও মর্যাদাশীল করে দিয়েছেন।

আল কোরআনের প্রতি সম্মান জ্ঞাপনসহ এ পরম মর্যদার অধিকারী রাত লাভের উদ্দেশ্যে যে সাধনা, তারই নাম ইতিকাফ। এ ইতিকাফের মাধ্যমেই বান্দা তার প্রভুর নৈকট্য লাভে ব্রতী হয়। এটি মুসলমানদের জন্য বিশ্বপ্রভুর মনোনীত মর্যাদাশীল ইবাদত। সূরা আল বাকারার ১৮৭নং আয়াতে এ মর্যাদার কথা উল্লিখিত আছে।

‘শবেকদর’ অর্থাৎ আল কোরআন নাজিলের সঠিক তারিখ সম্পর্কে মতভেদ আছে। তবে সব বর্ণনাকারী এ ব্যাপারে একমত, মাহে রমজানের ২০ তারিখের পর থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত যে কোনো একটি বেজোড় রাতের মধ্যে ‘শবেকদর’ অন্তর্ভুক্ত। বোখারি ও মুসলিমে রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রমজানের শেষ ১০ রাতের মধ্যে বেজোড় রাতে ‘শবেকদর’ খোঁজ করো।’ 

আবু দাউদ এবং বোখারি শরিফের অন্যত্র রাসুলে করিম (সা.) রমজানের ২৭ রাতকেই ‘শবেকদর’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আল হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনাকারীর বর্ণনা থেকে যা জানা যায়, তাতে ওই ২৭তম রজনীকেই ‘শবেকদর’ হিসেবে ধরা যেতে পারে।

তবে এ সন্দেহ থেকে মুক্ত থাকার জন্যই ইতিকাফের সময়কে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) দীর্ঘ সময় ধরে ইতিকাফ করতেন। তিনি রমজানের শেষ ১০ রজনী ইতিকাফে নিযুূক্ত থাকতেন বলে তিরমিজিতে উল্লেখ আছে। তবু তিনি ২৩তম রজনী থেকে ২৭তম রজনী পর্যন্ত ইতিকাফ করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছেন। নির্দিষ্ট রজনীর আগের দিনের আসরের নামাজের পর থেকে নির্দিষ্ট রজনীর পরবর্তী দিনের আসরের নামাজের পর পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করতে হয়।

ইতিকাফের নিয়ম
পুরুষের জন্য কোনো জামে মসজিদের ভেতর ইতিকাফ করতে হয়। মহিলারা ইতিকাফ করবেন নিজ গৃহ অথবা অন্য কোনো পবিত্র স্থানে।
ইতিকাফকারীকে অবশ্যই রোজাদার হতে হবে।
ইতিকাফকালে সর্বদা তসবিহ-তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন ইবাদতে মশগুল থাকতে হবে। এ সময় কোনো ধরনের পার্থিব বিষয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে।

আল বোখারি, মুসলিম, দাউদ প্রভৃতি হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ইতিকাফকারী রোগী দেখতে যাবে না। জানাজায় উপস্থিত হবে না। স্ত্রী স্পর্শ করবে না। বিশেষ জরুরি কাজ ব্যতীত বাইরে যাবে না।’ 

আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) যখন ইতিকাফ করতেন, মসজিদে বসে আমার দিকে মাথা বাড়িয়ে দিতেন এবং আমি তাঁর কেশ বিন্যাস করে দিতাম।’ (বোখারি)।

 মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে, ‘মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফের সময় পীড়িতকে দেখতে যেতেন এবং নিজ ইচ্ছা মতো চলতেন, কিন্তু কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। বস্তুত শুধু মলমূত্র ত্যাগ ও অজু ব্যতীত ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করে বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। অবশ্য এসব কারণ ছাড়াও জীবন রক্ষার্থে বাইরে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য ইতিকাফের কাজা আদায় করতে হবে। তিরমিজিতে বর্ণিত আছে, রাসুলে পাক (সা.) এক বছর ইতিকাফ করতে পারেননি। পরবর্তী বছর তিনি ২০ রাত ইবাদত করেন।

ইতিকাফের ফজিলত প্রসঙ্গে মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) বলেন, ‘যারা কমপক্ষে একদিন ও এক রাত ইবাদত করবে, কেয়ামতের দিন তাদের ও দোজখের মধ্যে এমন তিনটি খন্দকের ব্যবহার থাকবে, তার প্রতিটির প্রশস্ততা হবে ৫০০ বছরের পথ।’

পবিত্র হাদিস থেকে জানা যায়, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইবাদত মনে করে সওয়াবের নিয়তে ইতিকাফ করে, তার সব সগিরা গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে রেওয়াত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইতিকাফকারী ব্যক্তি যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকে। আর ইতিকাফে লিপ্ত থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি বাইরের কোনো নেক কাজ করার সুযোগ হতে বঞ্চিত থাকলেও ওই নেক কাজগুলোর পূর্ণ নেকি সে লাভ করবে।’ 

কোনো কারণে ইতিকাফ নষ্ট হলে তার কাজাও করা যায়। রাসুল (সা.) জীবনে একবার কাজা ইতিকাফ পালন করেন বলে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। জীবনের শেষ রমজান পর্যন্ত তিনি এ সময়কাল পালন করেছেন। 

বিভিন্ন হাদিসে ইতিকাফের বিভিন্ন সময়সীমা উল্লেখ করা আছে। এর সর্বনিম্ন সময়সীমা এক রাত বলে বোখারি ও মুসলিম শরিফে রেওয়ায়েত আছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ওই হাদিস সমর্থনযোগ্য বলে মনে করেন। তবে ইতিকাফ দীর্ঘ সময় ধরে করা উত্তম। কারণ তাতে শবেকদরের রাতের ইবাদত সম্পর্কে অনেকখানি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

ইতিকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদায়ে কেফায়াহ। মহল্লা বা এলাকার পক্ষ থেকে কোনো একজন পালন করলে সবার জন্য তা পালন হয়ে যায়। কেউ পালন না করলে সব মহল্লা বা এলাকাবাসীই গোনাহগার হবে। এ ব্যাপারে ঈমানদার মুসলমানদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!