• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক হাতে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে ইসমাঈল


গাজীপুর প্রতিনিধি মে ২৯, ২০১৬, ০৩:২৪ পিএম
এক হাতে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে ইসমাঈল

যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সেই সংসারের পুরো দায়িত্ব নিতে হয়েছে প্রতিবন্ধী শিশু ইসমাঈল হোসেনের। মাত্র ১০ বছর বয়সি এ শিশুটির এক হাত না থাকায় বাকি এক হাতেই রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

গত এক বছর আগে এক দুর্ঘটনায় তার একটি হাত চলে যায়। সেই থেকে সে শরিরীক প্রতিবন্ধী হিসেবেই পরিচিত। মাদ্রাসায় পড়তো বলে এক সময় তার স্বপ্ন ছিল সে কোরআনের হাফেজ হয়ে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জল করবে।   

ইসমাঈল হোসেন গাইবন্ধা জেলার গোবিন্ধগঞ্জ থানাধীন রড়শ্যাম গ্রামের জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলামের ছেলে।

কথা হয় প্রতিবন্ধী ইসমাঈল হোসেনের সাথে। সে জানায়, এক বছর আগেও সে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন দশনাল জানকুর হাফিজিয়া মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলো। কিন্তু একদিন মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহি টমটম এসে তার উপর দিয়ে উঠে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মিডেকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। চিকিৎসায় তার শরীর থেকে বাঁ হাতটি কেটে ফেলা হয়। সেই থেকে সে এক হাত দিয়েই সমস্ত কাজ কর্ম করে থাকে।

এরপর সে কিছুটা সুস্থ্য হলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ মন্ডলপাড়া এলাকার তার বাবা নজরুল ইসলাম, মা শিল্পী বেগম ও ছোট দুই ভাই ইউসুফ এবং মূসার কাছে চলে আসে।
 
ইসমাঈল জানায়, তার বাবা জন্ম থেকেই পঙ্গু থাকার কারণে তার মা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। কিন্তু দুই বছর আগে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিয়ের কাজ করতে থাকে। ঝিয়ের কাজ করে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলেনা তাদের। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে চান্দরা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা ভাড়া নিয়ে চালাতে থাকে।

রিকশা চালিয়ে তাকে এখন সংসারে পুরো দায়িত্ব পালন করতে হয়। ছোট ভাই ইউসুফ বগুড়ার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। তার খরচও দিতে হয় রিকশা চালানোর টাকা থেকে। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩শ টাকার পায় সে। এ থেকে আবার রিকশার জমা বাবদ ২৫০ টাকা দিতে হয় রিকশার মালিককে। এরপর যা থাকে তাই দিয়ে সংসার চালাতে হয়।

ইসমাঈল আরো জানায়, পড়াশোনা করার ইচ্ছা তার এখনো আছে। সুযোগ পেলে সে পড়াশোনা করবে। এপর্যন্ত ৫/৬ বার কোরআন শরীফ খতম দিয়েছি। হাস্বোজ্জল মুখে সে বলে আবার মাদ্রাসায় পড়তে ইচ্ছে করে।

রিকশা চালিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয় করে আবার সে পড়াশোনায় মনযোগ দিবে বলেও জানায়। তার সবচেয়ে বড় ইচ্ছার কথা জানায়, রিকশা চালিয়ে টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটু জমি কিনে তাতে ঘর করে দিবে তার বাবা-মাকে।

ইসমাঈলের পিতা নজরুল ইসলাম জানায়, জন্মগতভাবে আমি পঙ্গু হওয়ার কারণে ছেলেদের পড়ালেখা করাতে পারিনি। ওর মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলেনা। তাই ছেলে ইসমাঈল বাধ্য হয়ে রিকশা চালাতে যায়। কিন্তু কেউ যদি আমাদের সাহায্য করে তাহলে অবশ্যই ছেলেদের পড়ালেখা করবো।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!