• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খদ্দের সেজে যৌনপল্লী থেকে বোনকে উদ্ধার


নারী ডেস্ক মার্চ ৭, ২০১৮, ১১:৫২ এএম
খদ্দের সেজে যৌনপল্লী থেকে বোনকে উদ্ধার

কলকাতার একটি যৌনপল্লীর দৃশ্য

ঢাকা: মানবের প্রাচীন পেশাগুলোর মধ্যে যৌনবৃত্তি একটি। সেই প্রচীন কাল থেকেই নারীরা শুধু পুরুষকে আনন্দ দেয়ার জন্যই বাধ্য হয়েই এই পেশায় নাম লেখিয়েছে। হাজার হাজার বছর পর পৃথিবী সভ্য হয়েছে, নারীরাও তাদের স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার, কিন্তু তাদের এই পেশার কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

তবে, রহস্যজনক একটি ব্যাপার হলো নারী অধিকারের জন্য কাজ করা তথাকথিত নারীবাদিরাও, নারীদের যৌনবৃত্তির পক্ষেই সাফাই গায়! অথচ এই পেশায় যারা যুক্ত হচ্ছে তারা কিন্তু নিজের ইচ্ছাই নয়, বরং কোনো একটি চক্রের মাধ্যমে সুন্দরী মেয়েরা যৌনপল্লীতে নিয়ে গিয়ে বাধ্য করছে এসব কাজ করতে। 

বেনারস যৌনপল্লী

তেমনি একটি ঘটনার শিকার হয়ে যৌনপল্লীর ওই অন্ধকুপ থেকে ফিরে আসা ভারতের বিহার রাজ্যের শিবহর জেলার প্রতিমা (নাম পরিবর্তিত)। তাকে যৌনপল্লী থেকে নাটকীয় ভাবে উদ্ধার করেছেন তারই সহোদর ভাই। চলুন জেনে নিই সেই ঘটনা-

বিহারের বেগুসরাই জেলার যৌনপল্লী বখরী এলাকায় গিয়ে এক তরুণ দুইশ টাকা তুলে দিয়েছিল এক দালালের হাতে। তারপরেই  ‘পছন্দসই’ যৌনকর্মীর ঘরে যাওয়ার অনুমতি মিলেছিল।

বাংলাদেশের দৌলতদিয়া

মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তরুণটি বেরিয়ে আসে সেই ঘর থেকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবারো সে ফিরে এসেছিল সেই ‘কোঠা’য়, এবারে সঙ্গে পুলিশ। যৌনকর্মীদের মধ্যে থেকে তরুণের ‘পছন্দ’ করা সেই মেয়েটি সামনে এগিয়ে এসেছিল।

ঘটনাটি গত জানুয়ারির। বেগুসরাইয়ের ওই যৌনপল্লীতে যে তরুণ মেয়েটিকে ‘পছন্দ’ করে দালালের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিল, সে আর কেউ না; ওই মেয়েটিরই ভাই!

বছর তিনেক আগে হারিয়ে যাওয়া বোনকে উদ্ধার করতেই ওই তরুণ ‘খদ্দের’ সেজে হাজির হয়েছিল ওই যৌনপল্লীতে। বিহারের পুলিশ সেদিন দু’জন নারীকে দেহব্যবসা থেকে উদ্ধার করেছে।

বয়স বাড়লে খদ্দের কমে

তাদেরই মধ্যে একজন বিহারেরই আরেক জেলা শিবহরের বাসিন্দা প্রতিমা (নাম পরিবর্তিত)।

তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরে জানিয়েছেন, ‘বছর তিনেক আগে অশোক খলিফা নামে এক ব্যক্তি সীতামাড়ী জেলা থেকে আমাকে ফুঁসছিলে বুখরীতে নিয়ে যায়। তারপর থেকেই ওই কাজ করাতে বাধ্য করেছিল সে।’

ছোট ছেলেকে নিয়ে তখন থেকেই বখরীর ওই যৌনপল্লীতে একরকম বন্দী জীবন কাটাতেন ওই নারী। বাইরের জগতের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখতে দেয়া হতো না।

ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় মুম্বাইয়ের কামাতিপাড়া

প্রতিমা আরো বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগে আমার ঘরে এক ফেরিওয়ালা এসেছিল। আমি তাকে দেখেই চিনতে পেরেছিলাম – সে আমার বাপের বাড়ির এলাকার লোক। সে বলেছিল যে আমাকে চিনতে পেরেছে। আমি তার মোবাইল নম্বরটা নিয়ে রেখেছিলাম। মাঝে ফোনে কয়েকবার আলোচনা করেছি তার সঙ্গে যে কীভাবে ওখান থেকে পালানো যায়, তা নিয়ে।’

গ্রামে ফিরে এসে ওই নারীর আত্মীয়-স্বজনকে পুরো ঘটনা জানান ওই ফেরিওয়ালা। বাপের বাড়ির কয়েকজন ওই নারীকে যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করার জন্য বেগুসরাইতে হাজির হন।

নাগপুরে এমন দৃশ্য প্রতিদিনের

প্রতিমার ভাই মনোজ (নাম পরিবর্তিত) বলেন, ‘ফোনেই ওই ফেরিওয়ালা আমার বোনকে জানিয়ে রেখেছিল যে আমি আসছি। সেইমতো আমি অশোক খলিফা নামের ওই দালালের কাছে যাই খদ্দের সেজে। দুশো টাকায় রফা হওয়ার পরে আমার সামনে দুজনকে হাজির করা হয়েছিল। চোখের ইশারা করে দিয়েছিলাম বোনকে। তার ঘরে গিয়ে বলে আসি যে পুলিশ নিয়ে আসছি একটু পরে।’

প্রতিমার বাবা আগেই বখরী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এরপরে ভাই থানায় গিয়ে পুলিশ দল নিয়ে ফিরে আসেন। তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় প্রতিমা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আরেক নারীকে।

তারা সংসারও বাঁধে

বখরী থানার ওসি শরৎ কুমার জানিয়েছেন, ‘প্রতিমাকে উদ্ধার করার পরের দিনই মেডিকেল পরীক্ষা করিয়ে আদালতে পেশ করা হয়। তারপরেই তার বাবা-মায়ের হেপাজতে তুলে দেয়া হয়েছে।’

অভিযোগপত্রে নাম থাকা নাসিমা খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে মূল অভিযুক্ত অশোক খলিফাকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসবের পেছনে শুধু অশোক খলিফা বা নাসিমারা নয়, বড় বড় রাঘোব-বোয়াল জড়িত। যার কারণেই নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়না। এ জন্য অশোক-নাসিমার পাশাপাশি নেপথ্যে যারা কাজ করছে তাদেরও শাস্তি হওয়া জরুরী। বিবিসি অবলম্বনে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!