• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরপেক্ষ ইসির দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি বিএনপির


এমএ ইউসুফ নভেম্বর ৬, ২০১৬, ০১:১৫ পিএম
নিরপেক্ষ ইসির দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি বিএনপির

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি অংশ নিচ্ছে, এ বিষয়টি নিশ্চিত। তবে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ করতে তারা চাইছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। দলটির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকলে তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। সাম্প্রতিক সময়ে দলের শীর্ষ নেতাদের দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। আর এই ইস্যুতে চলতি মাসেই রাজনৈতিক মাঠ গরম করতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলের নেতারা বলছেন, একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আদায়ের একমাত্র ভরসা শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন।

একই ইস্যুতে গতকাল শনিবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মহিলা দলের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় ইসি পুনর্গঠন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বেগম খালেদা জিয়া।

ওই সভায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ‘শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হলেই চলবে না। পরবর্তীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই দুটো বিষয় হলেই মনে করি, দেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। যেখানে সকলে ভোট দিতে যেতে পারবে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি আজ্ঞাবহ কমিশন। সরকার যেদিকে মাথা হেলাতে বলে, এটা সেদিকেই মাথা হেলায়। যা করতে বলে সেটাই করে।’ আব্দুর রকিব কমিশনকে খালেদা জিয়া অথর্ব কমিশন বলে মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়া দাবি করেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে একদম পুনর্গঠন করতে হবে। পুনর্বিন্যাস করতে হবে।’

বিএনপি নেতাদের কাছে তথ্য আছে, ক্ষমতাসীন দলের পছন্দের একজন আমলাকে প্রধান নির্বাচন কমিশন হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সরকারের এমন ইচ্ছাকে এবার চ্যালেঞ্জ জানাতে রাজপথেই এর জবাব দিতে চায় বিএনপি। দলের নেতারা বলছেন, এ ইস্যুতে বিএনপি নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি দেশের জনগণকেও সঙ্গে পাবে। তাই বিগত আন্দোলনের মতো জ্বালাও-পোড়াওয়ের কাজে জড়াবে না তারা। একটি পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি নিয়ে গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে রাজপথে নামবে দলটি।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হোক, এটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাইছে না। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং চীনা রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। দুই শক্তিশালী দেশের প্রতিনিধিরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তার কথা শুনেছেন। এ ছাড়া মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের একতরফা গত জাতীয় নির্বাচন মেনে নেয়নি। ওই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবির প্রতি যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান সে সময় জানিয়েছে। অবশেষে আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর হিলারি বাংলাদেশের চ্যাপ্টারটা খুব ভালোভাবেই আমলে নেবেন বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাই মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। এ ছাড়া নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ব্রাসেলসে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের নতুন ইসি গঠনে একটি মতামত দেবে ইইউ। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইইউর পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। এই বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি।

ইতিমধ্যে দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার দেয়া বক্তব্যে যার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট এসব নেতার দাবি, বিগত বেশ কিছু নির্বাচনে নিজেদের ভোট দিতে না পারায় দেশের সাধারণ ভোটাররা বর্তমান সরকারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এ রকম নানা ইতিবাচক বিষয় সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিএনপি আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ তৈরি করেছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ঘোষণা করে রাজপথে নামবে দলটি।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নতুন নির্বাচন প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আভাস মিলেছে। কেননা তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, গত নির্বাচনের মতো লজ্জায় পড়ার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি তিনি চান না। তাই আমরা মনে করি, অতীতে তিনি যে ভুল করেছেন, আগামীতে সে ভুল না করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এগিয়ে যাবেন।’

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম ধাপ হলো সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী উদ্যোগ নেবেন বলে বিএনপি আশা করে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র আরো বলেন, ‘আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা একটি সমাবেশ করতে চাই। আর এ সমাবেশটি হবে গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ের জন্য জোরেশোরে রাজপথে নামার প্রথম সংকট। মূলত এই সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের মাধ্যমে সারা দেশের দলীয় নেতাকর্মীদের আমরা নতুন আন্দোলনের জন্য উজ্জীবিত করতে চাই।’

অন্যদিকে বিএনপির একটি কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে দলটি। এ জন্য দলের দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং একজন কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্যকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবিতে বিএনপি রাজপথে নামলে প্রতিবেশী দেশটির সমর্থন পাওয়া যাবে। কারণ ভারতের নির্বাচন কমিশন দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। নানা কারণে ভারতও এখন বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বর্তমান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপও বাড়াতে চায় বিএনপি। কারণ বিশ্বের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক দেশের দাবি, সবার মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। আর প্রভাবশালী দেশগুলোর এমন চাওয়াকে আরো কার্যকর করার পরিকল্পনা আঁটছে দলটি। এ লক্ষ্যে ওই সব দেশের সঙ্গে নিয়োমিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সম্পর্ক দৃঢ় করতে নভেম্বর মাসেই একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছে।

এদিকে, নতুন নির্বাচন ইস্যুতে জনমত সৃষ্টির জন্য নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে পুরো ডিসেম্বর জুড়ে দেশের বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর জানুয়ারিতে রাজধানী ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা আছে বিএনপির।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!