• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল, আদেশ ১৪ নভেম্বর


আদালত প্রতিবেদক অক্টোবর ৩১, ২০১৭, ০১:৩৪ পিএম
বাঙালি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল, আদেশ ১৪ নভেম্বর

ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের অপরাধে বাঙালি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক সদস্যের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৪ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ দিন ধার্য করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম আযাদসহ প্রসিকিউশনের সদস্যরা।

পরে সংশ্লিষ্ট মামলার প্রসিকিউটর আবুল কালাম আযাদ জানান, ‘কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার আমিরাবাদ গ্রামের আসামি ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছি। আজ বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করা হয়েছে। আগামী ১৪ নভেম্বর তারিখ ধার্য করে দিয়েছেন।’

এর আগে গত ২১ মার্চ এ ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি কোনো সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এটিই প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। আর তদন্ত সংস্থার এটি ৪৯তম প্রতিবেদন। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ায় তার বিষয়ে কোনো রেকর্ড সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে আসামি এখনো এলাকায় ক্যাপ্টেন নামেই পরিচিত।’

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক বলেন, ‘গত বছরের ২৪ জুলাইয়ের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২ আগস্ট এ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওই দিনই কুমিল্লা জেলা পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন অর্থাৎ ৩ আগস্ট আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করলে ট্রাইব্যুনাল তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়। আসামি বর্তমানে করাগারে আছেন।’

২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর এ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চূড়ান্ত করে করে তদন্ত সংস্থা।

তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার আমিরাবাদ গ্রামের আসামি ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (৭৫) মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা সেনানিবাসে পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে কুমিল্লার সেনানিবাসে যোগ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিজ এলাকা দাউদকান্দি সদরে ক্যাম্প স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকাতেই আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।

এ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষি করা হয়েছে ১৯ জনকে। এ ছাড়াও জব্দ তালিকার সাক্ষি করা হয়েছে আরও তিনজনকে। মোট সাক্ষি ২১ জন।

আসামির বিরুদ্ধে ৩ অভিযোগ
অভিযোগ-১

৭ জানুয়ারি ১৯৭১ বিকাল অনুমান ৪টা হতে রাত অনুমান ৮টা পর্যন্ত সময়ে আসামি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ৮/১০ জন সদস্যসহ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন দাউদকান্দি বাজারে হোমিও ওষুধের দোকানে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ডা. হাবিবুর রহমানকে আটক করে পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নির্যাতনপূর্বক দাউদকান্দি ফেরিঘাট সংলগ্ন গোমতি নদীতে নিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

অভিযোগ-২
১৬ জুন ১৯৭১ ফজরের নামাজের পর হতে সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সময়ে আসামি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ৪০/৫০ জন সদস্যসহ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি, গোলাপেরচর গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র ২০ জনকে অন্যায় আটক করে নির্যাতন, ৫টি বাড়ির মালামাল লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করে।

আটককৃত ২০ জনের মধ্যে ৫ জনকে ছেড়ে দিয়ে ১৫ জন নিয়ে মান্নান ফরাজীর বাড়ির সামনে এনে মান্নান ফরাজীর একটি বড় গরু জবাই করে জবাইকৃত গরুর ২ রান নিয়ে আটককৃত ১ জনকে ছেড়ে দেয়। এরপর আটককৃত ১৪ জনকে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নেওয়ার পথে গোলাপেরচর টেকে এনে লাইন করে দাঁড় করায়। লাইন থেকে এক জনকে বের করে ৫০/৬০ হাত দুরে গোমতী নদীর কিনারে নিয়ে আসামি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ তাঁকে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীর কিনারে ফেলে দেয়।

আটককৃত ১৩ জনকে নিয়ে নৌকাযোগে দাউদকান্দি পাকিস্তান দখলদার সেনবাহিনী ক্যাম্পে এনে নির্যাতনপূর্বক মুক্তিযোদ্ধাদের খবরা-খবর দিতে এবং হত্যার ঘটনা কাউকে না জানানোর শর্তে আটককৃতদের সন্ধ্যার পূর্বে ছেড়ে দেয়।

অভিযোগ-৩
২১ জুলাই ১৯৭১ বেলা অনুমান ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সময়ে আসামি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্ পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র ড্রাইভার কালা মিয়াকে আটক করে নির্যাতনপূর্বক পাকসেনাদের গাড়িতে তুলে চান্দিনা থানাধীন চান্দিনা হাসাপাতালের পেছনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!