• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের মাসে বিজয়ের পতাকা উড়ালো বাংলাদেশের মেয়েরা


এম জাফিউল ইসলাম ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৮:১২ পিএম
বিজয়ের মাসে বিজয়ের পতাকা উড়ালো বাংলাদেশের মেয়েরা

ঢাকা: আমরা বীরের জাতি। আমরা পারি, আমরা পেরেছি। ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। অনেক রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই মাসেই বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সর্বভৌম দেশ হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলাদেশ। জাতি যখন বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী উদযাপন করছে, ঠিক সেই সময় আরও একবার লাল সবুজের পতাকা উড়ালো মারিয়া, তহুরা শামসুন্নাহাররা। সাউথ এশিয়ান ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলো বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা।

প্রথমবারের মতো আয়োজিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। বিজয়ের মাসে পাওয়া এমন জয়ে আনন্দে উদ্বেলিত গোটা দেশ। লাল সবুজের বিজয়ী ফুটবল কন্যাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। মাঠে উপস্থিত প্রায় ১২ হাজার দর্শক পতাকা হাতে ভুভুজেলা আর বাদ্য বাজিয়ে খেলার পুরো সময় খেলোয়াড়দের উৎসাহ যুগিয়েছে। প্রাপ্তি হিসাবে খেলা শেষে জয়ের তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরেছে তারা।

এদিন ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণ শানিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। গোলও করেছিল। ভারতীয় গোলরক্ষক মনিকা দেবীর হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বলে টোকা দিয়ে গোল করে আনুচিং মগিনি। আনন্দে মেতে উঠে মারিয়া, তহুরা ও শামসুন্নাহাররা। উল্লাসে মাতে গ্যালারির দর্শকরা। কিন্তু এক নিমিষেই তাদের এই আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। কারণ ভুটানি রেফারি চোকি ওম ফাউলের বাঁশি বাজান।

এতে হতভম্ব হলেও নিরাশ হয়নি বাংলাদেশের মেয়েরা। ৬ষ্ঠ মিনিটের সময় কর্নার পায় বাংলাদেশ। মার্জিয়ার কর্নারে আনুচিংয়ের হেড পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে স্বাগতিকরা। ৩২ মিনিটে বা প্রান্তের ডি-বক্সে দিয়ে একক প্রচেষ্টায় ঢুকে পড়ে তহুরা। ডান পায়ের গড়ানো কৌনিক শট নেয়। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েও বলের নাগাল পায়নি। কিন্তু বল সাইডপোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়।

মনে হচ্ছিলো গোল শুন্য অবস্থায় শেষ হবে ম্যাচের প্রথমার্ধ। কিন্তু না, তা হতে দেননি শামসুন্নাহার। ৪২ মিনিটে বক্সের ভেতর তহুরার কাছ থেকে বল পায় আনুচিং। তার শট প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে কৌশলি শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ডিফেন্ডার (১-০)। অপেক্ষার অবসান ঘটে লাল সবুজের সমর্থকদের।

বিরতির পর ব্যবধান বাড়াতে ঝাপিয়ে পড়ের বাংলাদেশ। আর সমতা ফেরাতে সর্বশক্তি দিয়ে খেলে ভারতীয় মেয়েরা। কিন্তু কোন পক্ষই আর গোল পায়নি। ভারত মাঝে মধ্যে আক্রমণ করেছে ঠিক, তাদের কোন আক্রমণই দানা বাঁধতে দেয়নি বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা।

৫৭ মিনিটে মারিয়া থেকে থ্রু পাস পেয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে আনুচিং। জোরালো শট করে। ভারত গোলরক্ষক কর্নারের বিনিমিয়ে বাঁচায়। ৬০ মিনিটে মারিয়ার কাছ থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে তহুরা। ফাঁকায় পেয়ে যায় গোলরক্ষককে। তাকেও কাটায়। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। সুন্দর আক্রমণ ধূলিসাৎ! ৮৩ মিনিটে মারজিয়ার পরিবর্তে মাঠে নামে ঋতুপর্ণা চাকমা। ৮৫ মিনিটে মনিকার কর্নার। ডিফেন্ডার ফিরিয়ে দেয়। ফিরতি বলে মনিকার উঁচু ক্রস। শামসুন্নাহার পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ। নইলে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতো বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয়ের তৃপ্তি নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। নারীদের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে এ নিয়ে চারবার মুখোমুখিতে চারবারই ভারতের বিপক্ষে জয় পেল বাংলাদেশ।

রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে ভারতকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে গোলাম রব্বানী ছোটননের শিষ্যরা। তার আগে প্রথম ম্যাচে নেপাল এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। মোট চার ম্যাচ ১৩ গোল করা বাংলাদেশেরর কিশোরী ফুটবলাররা এই আসরে এখনো হজম করেনি একটি গোলও।

প্রথমবার আয়োজিত এই আসরে বাংলাদেশের তহুরা ও আনুচিং ৩টি করে, শামসুন্নাহার, মনিকা ও আঁখি ২টি করে, সাজেদা ১টি করে গোল করেছে।

দীর্ঘ সাত বছর ধরে বাংলাদেশের নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন কোচ গোলাম রব্বনী ছোটন। তার অধীনে এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৬) চ্যাম্পিয়ন, একবার এবং এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। তাই ছোটনকে গর্বিত কোচ বলা যেতেই। সামনে হয়তো তার হাত ধরেই আরও সাফল্য পাবে বাংলাদেশ। সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!