• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাফের প্রেরণা সঙ্গী করেই তাজিকিস্তান যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা


ক্রীড়া প্রতিবেদক অক্টোবর ১৮, ২০১৮, ০৮:৪২ পিএম
সাফের প্রেরণা সঙ্গী করেই তাজিকিস্তান যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা

ছবি: বাফুফের সৌজন্যে

ঢাকা: গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গণে দুইটি চিত্র বিদ্যমান। বিষয়টি অনুধাবন করেই রসিকতার ছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের মেয়েরা গোল দেয়, আর ছেলেরা গোল খায়। অতি সম্প্রতি দেশে পুরুষ ও নারী ফুটবলে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে লাল সবুজের মেয়েরা দুর্দান্ত সাফল্য পেলেও ছেলেরা উল্লেখ করার মতো কিছুই অর্জন করতে পারেনি।  

এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। অপরদিকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে ছেলেদের জাতীয় ফুটবল দল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে কোনও রকমে সেমিফাইনালে উঠলেও আর এগোতে পারেনি জামাল-সুফিলরা।  

দেশের ফুটবল অঙ্গণে ছেলেদের অবস্থা যখন খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে মেয়েরা। গত কয়েকবছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ফুটবলের প্রায় সব সাফল্যই মেয়েরা এনে দিয়েছে। এবার বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ের সেরা একশতে উঠে এসেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। অপরদিকে ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ছেলেদের অবস্থান ১৯৩তম স্থানে।

শুধু তাই নয়, গত অক্টোবর ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ফাইনালে তারা নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই আসরের শিরোপা জিতে নেয় বাংলার বাঘিনীরা। এবার নিজেদের আরও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে।  

আগামী ২৪ অক্টোবর খেলা শুরু হবে তাজিকিস্তানের দুশানবেতে হতে যাচ্ছে এএফসি অনুর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের (ডি গ্রুপ) বাছাই পর্ব। এবার মৌসুমি-মারিয়াদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাদের মোকাবেলা করতে হবে দক্ষিণ কোরিয়া, চাইনিজ তাইপে ও তাজিকিস্তানের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে। তবে লাল সবুজের নারী ফুটবলাররা যে ভাবে খেলে যাচ্ছে, তাতে সাফল্য আসবেই। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জানাচ্ছেন আপাতত ভাল খেলাই লক্ষ্য তার শিষ্যদের

আর সেই লক্ষ্য সামনে রেখে শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) ভোর সোয়া ছয়টায় দুশানবের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশের মেয়েরা। তার আগে বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোচ ছোটন বলেন, ‘ভুটানে সাফ শেষ করেই ১০ অক্টোবর থেকে এই আসরের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছি। ভুটানে আঁখির চোখে এবং শিউলির মাসলে ইনজুরি হয়েছিলো। আশার কথা হলো গতকাল (বুধবার) দুই সেশন খুব ভালোভাবে শেষ করেছি। আল্লাহর রহমতে দলের সবাই এখন সুস্থ আছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ অনেক কঠিন এ কথা সত্য। তবে মৌসুমীরা যদি মনে করে ‘পারবো’ তবে অনেক কিছুই সম্ভব বলে মনে করেন ছোটন। ‘ভুটানে মেয়েরা দৃষ্টিনন্দন ফুটবল উপহার দিয়েছে। এই আসরেও তারা সেই ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’

ছোটন জানান, সাফ অনুর্ধ্ব-১৮ শিরোপাটা হবে মেয়েদের বড় অনুপ্রেরণা। এ প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম সফল এই কোচ বলেন, ‘মেয়েরা প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টই নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে। ভুটানের ম্যাচগুলো মেয়েদের বাড়তি অনুপ্রেরণা যোগাবে।’

অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমি বলতে পারি আমাদের অনুশীলন মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রথমেই যাদের সঙ্গে ম্যাচ তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। বাছাইপর্বে আমাদের প্রতিপক্ষ তিনটি দলই কঠিন। কিছুই করার নেই। আমরা অবশ্যই চাইবো অ-১৯ বাছাইপর্বে কোয়ালিফাই করতে। প্রথম ম্যাচে কোরিয়ার বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলবো। আর বাকি দুই ম্যাচে অবশ্যই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার প্রত্যাশা আমাদের।’

সহ-অধিনায়ক মারিয়া মান্দা বলেন, ‘অনুর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়ন হবার পর একদিন বিশ্রাম নিয়েই আমরা বাছাইপর্বের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলাম। সেখানে তিনটি দলই আমাদের কঠিন প্রতিপক্ষ। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। এবং সেখানে তাদের বিপক্ষে যেভাবে খেলা দরকার সেভাবেই খেলবো।’

তবে কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে মেয়েদের সামনে। সে যাই হোক আপাতত পরবর্তী রাউন্ডেই চোখ রাখছে লাল-সবুজরা। ২০১৯ সালের ২২-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এই আসরের দ্বিতীয় রাউন্ড। তবে ভেন্যু এখনও ঠিক হয়নি। বাছাইপর্বের ৬ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা দুই রানার্সআপ খেলবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। বাংলাদেশ দলকে প্রথম ম্যাচেই মোকাবেলা করতে হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী দল দক্ষিণ কোরিয়াকে।

দ্বিতীয় রাউন্ডে আট দলের সেরা চারটি দল খেলবে তৃতীয় ও চূড়ান্ত রাউন্ডে, ২০২১ সালে। আগেই চূড়ান্ত রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বসে আছে স্বাগতিক থাইল্যান্ড, জাপান, উত্তর কোরিয়া এবং চীন। শেষের তিনটি দল ২০১৭ আসরের শীর্ষ তিনটি দল।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারী ফুটবলের নতুন পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এবং হেড অব কমিউনিকেশন্স এ্যান্ড ব্র্যান্ডিং ডিভিশন খন্দকার আনোয়ার এহতেশাম, ফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!