• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
রোহিঙ্গা নির্যাতন

সু চিকে ইরানের চিঠি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭, ০২:১৬ পিএম
সু চিকে ইরানের চিঠি

ঢাকা : মিয়ানমার সরকারকে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী শাহিনদোখ্‌ত মোল্লাভেরদি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চিকে লেখা এক চিঠিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন।

সু চিকে লেখা চিঠিতে তিনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নৃশংস গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা জানি অতীতে আপনি সরকারের কাছে ‘সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার জন্য আইন প্রণয়নের’ দাবি জানিয়েছেন। আমরা আশা করছি আপনি নিজের সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন। নিজের মানবতাবাদী ভাবমর্যাদাকে প্রমাণ করার জন্য বর্তমানের চেয়ে ভালো সময় আর আপনি পাবেন না।’

অং সান সু চি’কে লেখা চিঠিতে মোল্লাভেরদি আরো বলেছেন, ‘আমি ইরানি প্রেসিডেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ সহকারী হিসেবে আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, চলমান নজিরবিহীন সহিংসতা বন্ধ করতে এবং দুর্গত জনগোষ্ঠীর কাছে আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছে দিতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিন।’

চিঠিতে তিনি মিয়ানমারকে এমন একটি দেশ হিসেবে অভিহিত করেন যার ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ ইতিহাস’ রয়েছে।

সু চি’কে লেখা চিঠিতে ইরানের প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী আরো বলেন, “আমরা আশা করব আপনার একান্ত উদ্যোগে মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলমান সহিংসতার অবসান হবে এবং মিয়ানমার সরকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সেদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। সেইসঙ্গে মিয়ানমার সরকার এই জনগোষ্ঠীকে দেশের অন্যান্য নাগরিকের সমান মর্যাদা দেবে এবং সব ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতা থেকে সরকারই রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষা করার ব্যবস্থা নেবে।”

সু চিকে বিশ্বাসঘাতক বললেন নোবেলজয়ী নারীরা : রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিষয়ে নীরব থেকে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি নোবেল শান্তি পুরস্কারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। শুক্রবার নোবেল জয়ী বেশ কয়েকজন নারী সু চিকে লেখা এক চিঠিতে এ মন্তব্য করেছেন।

চিঠিতে নোবেল জয়ী নারীরা লিখেছেন, ‘যাদের কেউ নেই তাদের রক্ষায় আপনার সোচ্চার হওয়ার জন্য আর কত রোহিঙ্গাকে মরতে হবে, আর কত রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণের শিকার হতে হবে; আর কত সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন হতে হবে।’

চিঠিতে আরো লেখা হয়েছে, আজ আপনার নীরবতা নোবেল শান্তি পুরস্কার ও এর মর্যাদায় একটি কালো ও বিব্রতকর ছায়া ফেলেছে। যে মর্যাদাকে রক্ষা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই চিঠিটি লিখেছেন শান্তিতে পুরস্কার জয়ী মার্কিন নাগরিক জোডি উইলিয়ামস, ইরানের শিরিন এবাদি, লাইবেরিয়ার লেইমাহ বোয়ি এবং আরো চার নোবেল জয়ী নারী।

পাকিস্তানের শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই সাম্প্রতিক এক টুইটার বার্তায় রাখাইন পরিস্থিতিকে হৃদয়বিদারক ও নিন্দনীয় উল্লেখ করে সু চিকে এ ঘটনার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর তাগিদ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমি বারবার তাদের (রোহিঙ্গা) বিরুদ্ধে অমানবিক ও নিন্দনীয় ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে আসছি।’

তিনি লিখেছেন, ‘সু চির কাছেও আমি একই ভূমিকা প্রত্যাশা করি। বিশ্ব তার যথাযথ পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে। অপেক্ষায় রয়েছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা।’

কানাডার দৈনিক দ্য স্টার এক খবরে জানিয়েছে, চার বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় উইলিয়ামস, শিরিন এবাদি ও লিয়েমাহ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অটোয়াভিত্তিক নোবেল উইম্যানস ইনিশিয়েটিভের পরিচালক রেচেল ভিনসেন্টও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির প্রতিক্রিয়া নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ভিনসেন্ট।

শুধু তিনিই নন, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী অন্য নারী নোবেল জয়ীরাও হতাশ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ভিনসেন্ট বলেন, আমাদের মনে হয়েছিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের নিজেদের মধ্যে সোচ্চার হওয়া সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু বৈঠকের পর মনে হয়েছে, আমাদের উদ্বেগ জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজনীয়।

ভিনসেন্ট জানান, মিয়ানমারে যখন সু চি গৃহবন্দী ছিলেন তখন নোবেল জয়ী নারীরা তার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। সামরিক সরকারের অনুমতি নিয়ে মিয়ানমার গিয়ে দেখা পর্যন্ত করেছিলেন উইলিয়ামস।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেন, যখন বিশ্বের মানুষকে তাদের স্বাধীনতাকে তার (সু চি) ও কারাবন্দী গণতান্ত্রিক নেতাদের মুক্তির জন্য কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন তখন তিনি একটি অলিখিত প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছেন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের যারা তাকে সমর্থন করেছিলেন তাদের প্রতি এই আচরণ চপেটাঘাতের মতো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!