• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেই দুঃখিনী রাজবধূর ভাস্কর্য! মৃত্যু আজও রহস্যময়...


হৃদয় আজিজ, নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২, ২০১৭, ০৯:৫৪ পিএম
সেই দুঃখিনী রাজবধূর ভাস্কর্য! মৃত্যু আজও রহস্যময়...

ঢাকা: প্রিন্সেস ডায়না। নামটা শুনলেই স্মৃতির দরজায় করাঘাত পড়ে। দুই দশক আগের বিশ্বমিডিয়ায় ঝড় তোলা সব ঘটনা জট পেকে যায়। অবশ্য আজকের তারুণরা অতোকিছুর খোঁজই রাখেনি। বিশ্বব্যাপী আলোচিত সাবেক ব্রিটিশ এই রাজবধূর মৃত্যু হয়েছিলো অত্যন্ত নাটকীয় ভাবে। তবে এতোবছর পরেও সে নাটকীয় রহস্যের কোনো কূলকিনারা করা যায়নি। তবে রাজপূত্রবধু ডায়নার মৃত্যুর জন্য আংগুল তোলা হয় রাজ পরিবারের দিকেই।

সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো আবারো প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুরহস্যের বিষয় সামনে এনেছে। তারা বলছে, বিয়ের পর থেকেই ‘ভয়ঙ্কর চক্রান্তের’ শিকার হয়েছিলেন এই রাজপুত্রবধূ। যে কারণে প্রিন্স চার্লস ও ডায়নার সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। যে অশান্তি শেষ অবধি ডায়নার বিয়েবিচ্ছেদ আর মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

আর কিছুদিন পরেই প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যুর ২০ বছর পূর্ণ হবে। এই দীর্ঘ সময়েও রহস্যের কুলকিনারা করতে পারেনি লন্ডন কিংবা প্যারিস। তবে ডায়নার বাবা-মা বরাবরই তাদের মেয়েকে হত্যার জন্য রাজ পরিবারকেই দুষে আসছেন।

রাজকীয় বিয়ে

পিপলস রাজকুমারী, প্রিন্সেস ডায়ানার জন্ম ১৯৬১ সালে পহেলা জুলাই। তার বাবার লর্ড স্পেনসর ও মার নাম ফ্রান্সেস স্যান্ডাকিড। মাত্র ২০ বছর বয়সে ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ব্রিটিশ রাজকুমার প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়নার বিয়ে হয়। ১৫ বছর সংসার করার পর ১৯৯৬ সালের ২৮ আগস্ট তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তবে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের আগেই দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারিকে নিয়ে রাজপ্রাসাদ ছাড়েন ডায়না।

প্রিন্স চার্লস আর ডায়ানার প্রেমকাহিনী বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত ছিল। আর হবে নাই বা কেন? রাজপুত্রের প্রেম বলে কথা। তাও আবার এমন একজনের সঙ্গে যার সৌন্দর্যে ঢেউ ওঠে আটলান্টিকউপকূলসহ পুরো বিশ্বে।

সেই ১৯৭৫ সালে নড্রিংহ্যামে থাকার সময়েই প্রিন্স চার্লস আর ডায়নার পরিবার কাছাকাছি হয়। এরপর থেকে একাধিকবার চার্লস-ডায়নার দেখা-সাক্ষাৎ হয়। এখান থেকেই প্রেম জমে ওঠে। তবে খবরটি চাপা থাকেনি। প্রণয় থেকে পরিণয়। প্রিন্স চার্লস আর ডায়ানার বিয়ের খবর ছিল বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমের মুল খোরাক।

উষ্ণতা

তখন কিন্তু রাজপরিবারের ভেতরেই চলছিল নানা কাণ্ড। এমন খবরও চাউর হয়, স্বয়ং রানী এলিজাবেথ তাদের বিয়েতে মত দিচ্ছেন না। তাদের হয়তো মনে হচ্ছিল, কুঁড়েঘরের কন্যাকে বিয়ে করে রাজপরিবারের সম্মান ডুবাচ্ছেন রাজকুমার। তবে শেষ পর্যন্ত রানী এলিজাবেথ বিয়ের অনুমতি দিলে তোড়জোড় শুরু হয়। বিয়ের সময় প্রিন্স চার্লস ৩২ বছরের যুবক আর ডায়না মাত্র ২০ বছরের তরুণী। রাজকীয় বিয়ে বলে কথা। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয় লন্ডনের সেন্ট পল ক্যাথিড্রাল চার্চে; ২৯ জুলাই ১৯৮১।

বিশ্বমিডিয়ায় সরাসারি সম্প্রচার হয় ব্রিটিশ রাজকুমার চার্লেসের বিয়ে। গোটা পৃথিবীর রেডিও ও টেলিভিশনে ফলাও করে প্রচার হয়। হাজার হাজার জনতা আর সাংবাদিক ক্যাথিড্রাল থেকে বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে হাজির হন। বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ টেলিভিশনের সামনে বসে দেখেন রাজকীয় এই বিয়ে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে রাজ পরিবারে বিয়ের উৎসব। রাজকীয় জাহাজ ব্রিটানিয়াতে চড়ে হানিমুন করলেন তারা। এরপর দিন পেরোতে থাকল। কিন্তু সময় চলতে চলতে সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দিল।

দুই রাজকুমার

শুরুর দিকে মানিয়ে চলা, তারপর বাড়ল তিক্ততা। মুখরোচক খবরের অভাব হয় না। কেউ কেউ বলতে থাকল ভালো নেই এই দম্পতি। প্রিন্স চার্লস নাকি ডায়নাকে সময়ই দিচ্ছিলেন না। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে কলহ বাঁধছিল। দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকল। প্রিন্সেস চার্লসের দিকে যখন আঙ্গুল ওঠে তখন ডায়ানাকে জড়িয়েও কথা ওঠে। দুজনেই দুজনকে সন্দেহ করতে থাকলেন। এভাবে কেটে যায় প্রায় সাত বছর। দুই ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম আর হ্যারির জন্মের পর আরো বেশি করে তিক্ততা আসে তাদের সম্পর্কে।

১৯৮৯ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। সাইরিল রিনান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এবং জেন নরগোভ নামে আরেকজন মিলে গোপনে আড়ি পেতে ডায়ানা ও জেমস গিলাবের কথাবার্তা রেকর্ড করেন। গিলাব ছিলেন ডায়ানার বিয়ে-পূর্ব জীবনের বয়ফ্রেন্ড। আর এই কথোপকথনটি ওই সময়ের। ক্যাসেট প্রকাশের পর সারাবিশ্বে আলোড়ন ওঠে। কেঁপে ওঠে রাজপ্রাসাদও।

তবে প্রিন্স চার্লস নিজেও একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা ছিলেন না। তাকে ঘিরেও স্ক্যান্ডাল ছড়ায়। স্ত্রীকে পাশে রেখেই চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছিলেন দীর্ঘদিনের বান্ধবী ক্যামিলা পার্কারের সঙ্গে। বিষয়টি টের পেয়েছিলেন ডায়ানা। ডায়না-গিলাবের সংলাপ ফাঁস হওয়ার দুই সপ্তাহ পরে এমন স্ক্যান্ডাল ছড়ালো। ডায়ানা গিলাবের সংলাপ ছিল প্রেমাকুতিতে ভরা। কিন্তু চার্লস আর ক্যামিলার কথোপকথন ছিল যৌনাবেদনে ভরপুর।

দূরত্ব

এসব নিয়ে সংসার আর চলছিল না। ঘরে অশান্তি, বাইরে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি। সব মিলিয়ে চার্লস-ডায়নার একসঙ্গে সংসার করা কঠিন হয়ে ওঠে। ১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর ডায়ানা ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেন। এরপর আর রাজবধূ থাকলেন না ডায়না।

ব্যক্তি জীবনে প্রেমের খোঁজ হয়তো করেছেন ডায়না। তা নিয়ে মিডিয়ার মাথাব্যথা কম ছিল না। বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটানোর পর ডায়নার সঙ্গে মিসরীয় ধনকুবের দোদি আল ফাহাদের প্রেমের কথা জানাজানি হয়। সাগর উপকূলে ছুটি কাটানোর সময় অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বমিডিয়ায়।

দোদীর সঙ্গে ডায়না

ব্রিটিশ রাজমহল ছেড়ে এসে ডায়না কার সঙ্গে প্রেম করছেন তা নিয়ে কৌতুহলের যেন শেষ নেই। ডায়নার ব্যক্তিগত জীবনের ছবি তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাপারাজ্জির দল। সাগর সৈকতে নতুন প্রেমিকের সঙ্গের ঘনিষ্ট মুহূর্তের ছবি প্রকাশের পর পাপারাজ্জিদের চোখ ফাঁকি দিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার চেষ্টা ছিল ডায়নার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট পাপারাজ্জিদের তাড়া খেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন ব্রিটিশ রাজবধূ ডায়না ও তার ধনকুবের প্রেমিক দোদি। তখন তারা কালো রঙের মার্সিডিজ এস২৮০ গাড়িতে ছিলেন। পালানোর সময় গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রিন্সেস ডায়ানা, তার বন্ধু দোদি ও গাড়িচালক হেনরি পল।

দোদীর সঙ্গে সাগরে

ডায়ানার মৃত্যুর পরই নানা রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধু দোদি আল-ফাহাদসহ তার মৃত্যু হয়েছিল। বিবিসি, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতে আসা কিছু তথ্যের বরাত দিয়ে একে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছিল।

ডায়ানার মৃত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায়নি। মনে করা হয় এ দুর্ঘটনার পেছনে একযোগে কাজ করেছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫ এবং ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ রাজার সৎ বাবা হিসেবে একজন মুসলমানকে মেনে নিতে পারেনি ব্রিটিশ রাজপরিবার। মধ্যযুগে এমন ঘটনা ঘটলে সরাসরি ডায়নার শিরশ্ছেদ করা হতো হয়তো। ডায়না মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোড়ন তুলেছে এ প্রশ্ন। ডায়নার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারে ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ কারণে। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বে ব্রিটিশ রাজপরিবার নিয়ে নানা সংশয় সৃষ্টি করেছে।

ডায়নার সঙ্গে দোদির সম্পর্ক নিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে নানা স্পর্শকাতর কথা বলেছেন তার দোদির বাবা মোহাম্মদ। তিনি মনে করেন, প্রিন্স ফিলিপ কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি যে ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত রাজার সৎপিতা হবেন একজন মুসলমান। রিৎজ হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে দোদি ও ডায়না তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন বলে দাবি করেছেন মোহাম্মাদ। একই সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও ব্যক্ত করেছিলেন তারা।

সেই বিষণ্ণতা

তবে বরাবরই এ অভিযোগকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে রাজ পরিবার। যার কারণে তারা ঘটা করে ডায়নার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে তার মৃত্যু ও জন্মবার্ষিকী পালন করা। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মৃত্যুর ২০ বছর পালন করতে ব্রিটেনে ডায়নার ভাস্কর্য স্থাপন করা হচ্ছে।

সেই প্রিন্সেস ডায়নার কথা মনে আছে?

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!