• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাশ নিয়ে পাওনাদারের বাড়িতে স্বজনরা


পঞ্চগড় প্রতিনিধি আগস্ট ১২, ২০২২, ০৭:১১ পিএম
লাশ নিয়ে পাওনাদারের বাড়িতে স্বজনরা

পঞ্চগড় : ছেলের চাকরি পাওয়ার আশায় প্রায় ১৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও চাকরি মেলেনি। সেই টাকা ফেরতের আশায় দিনের পর দিন পেছনে ঘুরলেও টাকা পাচ্ছিলেন না পঞ্চগড়ের দবিরুল ইসলাম (৫৫)। এই শোকে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

জানা যায়, মাদ্রাসায় ছেলের চাকরির জন্য তৎকালীন পরিচালনা কমিটির সভাপতি জুলফিকার আলী প্রধানকে প্রায় ১৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন বাবা দবিরুল ইসলাম। 

মারা যাওয়ার পর পাওনা টাকা আদায়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাশ নিয়ে জুলফিকারের বাড়িতে হাজির হন দবিরুলের স্বজনরা। প্রায় ৭ ঘণ্টা অবস্থানের পর মধ্যরাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। 

ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধান পাড়া এলাকায়।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকাল ১০টায় প্রধানপাড়া দারুল ফালাহ দাখিল মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দবিরুলের লাশ দাফন করা হয়। দবিরুল ও অভিযুক্ত জুলফিকার একই গ্রামের বাসিন্দা। দবিরুল সম্পর্কে জুলফিকারের মামাশ্বশুর বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে দবিরুলের লাশ জুলফিকারের বাড়িতে নেওয়ার খবর শুনে তিনি ঘরে তালা দিয়ে স্ত্রীসহ বেরিয়ে যান।

দবিরুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, জুলফিকার রেস্তোরাঁর ব্যবসা করেন। দুই বছর আগে তিনি এলাকার দারুল ফালাহ দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তখন মাদ্রাসার সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগের বিষয়ে মামাশ্বশুর দবিরুলকে জানান। পরে দবিরুলের বড় ছেলে জাকিরুল ইসলাম ওই পদে আবেদন করেন।

ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলায় জুলফিকারকে কয়েক ধাপে মোট ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দেন দবিরুল। পরে গ্রন্থাগারিকের সনদ এনে দেওয়ার কথা বলে আরও ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন জুলফিকার। এসব টাকা দিতে দবিরুল দুটি মাইক্রোবাস, একটি ট্রাক্টর এবং কিছু জমি বিক্রি করেছেন।

দবিরুলের ছোট ছেলে আবদুস সবুর প্রধান বলেন, ‘পাওনা টাকা ফেরত পেতে বাবা দীর্ঘদিন জুলফিকারের পেছনে ঘুরেছেন। তবে তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো বাবাকে অপমান করতেন। এর মধ্যে গত ১৩ জুলাই বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য পাওনা টাকা ফেরত চাইলেও তিনি সাড়া দেননি।’

আবদুস সবুর প্রধান আরও বলেন, ‘বাবা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর পাওনা টাকা ফেরত পেতে গত ২ আগস্ট আমি পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এর মধ্যেই বাবা মারা গেলেন।’

এদিকে গতকাল দবিরুলের মৃত্যুর পর তার স্বজনেরা লাশ নিয়ে জুলফিকারের বাড়িতে অবস্থান নিলে সেখানে গ্রামের লোকজন ভিড় করেন। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেন।

সাতমেরা ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দবিরুলের স্বজনরা লাশ নিয়ে জুলফিকারের বাড়িতে অবস্থান নিলে আমরা দুই পক্ষকে নিয়ে বসি। সবার উপস্থিতিতে জুলফিকার মোট ছয় লাখ টাকা ফেরত দিতে চাইলে বিষয়টির সমাধান হয়। এ সময় জুলফিকার নগদ এক লাখ টাকা ও পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে দুই মাসের সময় নেন। এরপর দবিরুলের লাশ তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’ 

এ বিষয়ে জানতে জুলফিকারের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘পাওনা টাকা আদায় নিয়ে প্রধানপাড়া এলাকার বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা সমাধান করেছেন। আজ সকালে মৃত দবিরুলের নামাজে জানাজা সম্পন্ন ও লাশ দাফন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে।’

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!