• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে শতাধিক নবজাতক


কক্সবাজার প্রতিনিধি জানুয়ারি ১, ২০২৩, ০৪:০২ পিএম
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে শতাধিক নবজাতক

ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজার : কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উদ্বেগজনকভাবে নবজাতকের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে জনগোষ্ঠি হিসেবে স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত শিশু জন্মদান স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। একটি রোহিঙ্গা পরিবারে সন্তানের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ জনেরও বেশি। শুধু তা নয়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে শতাধিক নবজাতক।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী তিন মাসে মিয়ানমারে সেনা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নারী গর্ভবতী অবস্থায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই উদ্বাস্তু জীবনেও থেমে নেই তাদের বিয়ে-শাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠান। এর আগে থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত ছিল প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা। নতুন করে প্রবেশের পর গত ৫ বছরে শিবিরগুলোতে জন্ম নিয়েছে প্রায় দেড় লাখ শিশু। তবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাবে সঠিক তথ্য নেই।

কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার ৩৮টি শরণার্থীশিবির ও একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তঃসত্ত্বা মা কতজন আছেন বা গত পাঁচ বছরে কত রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে, তা নিয়ে সরকারের কাছে পূর্ণাঙ্গ হিসাব নেই। তবে শিবিরগুলোতে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সিভিল সার্জন অফিস ইউএনএইচসিআরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে গত ৫ বছরে ১ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জানিয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন নতুন রোহিঙ্গা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার তথ্য মূলত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কাছে থাকার কথা। আমাদের হাতে মূলত এসব তথ্য থাকে না।

কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা শিশু জন্মদানের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জন্ম নেওয়া সাড়ে ৩৪ হাজার শিশুর তথ্য রয়েছে। গত ৫ বছরের মধ্যে সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পরিবার পরিকল্পনার অভাবে অনিয়ন্ত্রিত রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হলেও, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রমে বর্তমানে রোহিঙ্গারা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করার কারণে রোহিঙ্গা শিশু জন্মদান অনেকটা কমে আসবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

বর্তমানেও সন্তান সম্ভাবা রয়েছে হাজারও রোহিঙ্গা নারী। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীরা। তাদের মতে যে হারে রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। যেকোনোভাবে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে অচিরেই প্রাকৃতিক বৈচিত্র, খাদ্য, চোরাচালান, শ্রম বাজার দখলসহ বিভিন্ন সমস্যায় কক্সবাজারে জনবিস্ফোরণ ঘটবে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন গড়ে জন্ম নিচ্ছে শতাধিক শিশু। বিপুল এই জনস্রোতের পরিসেবা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। আর ক্রমাগত অপরাধকার্যে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে নানাভাবে আন্তর্জাতিক পর্যটন স্পট কক্সবাজারে প্রভাব পড়েছে। তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় কক্সবাজারে আতঙ্কে সময় কটছে পর্যটকদের।

২৬ নম্বর ক্যাম্পের মো. হোসেন জানান, তার ১২ জন ছেলে মেয়ে রয়েছে। এসব ছেলে মেয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে। কাসেম নামের আরেক রোহিঙ্গারও একই কথা। তার ৯ ছেলে মেয়ে রয়েছে। সুযোগ-সুবিধা পেলেই আরও সন্তান নিতে পারেন।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন শিশু। এমনিতে তারা শ্রম বাজার দখল করছে, গাছপালা, পাহাড়-বন উজার করেই চলছে। তার ওপর প্রতিদিন নতুন শিশুর আগমনে শঙ্কায় রয়েছে এলাকাবাসী। এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে পর্যটন শহর কক্সবাজারে নানাভাবে প্রভাব পড়বে।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর আস্কারায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা রিলিফের জন্য প্রতিনিয়ত শিশু জন্ম দিয়েই চলছে। চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, মাদক পাচার করছে।

ফলে রোহিঙ্গাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা না গেলে, তা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ নতুন সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!