• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বিশ্বের প্রথম ইউটিউব ভিলেজ কুষ্টিয়ায়


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩, ১০:৫৯ এএম
বিশ্বের প্রথম ইউটিউব ভিলেজ কুষ্টিয়ায়

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার খোকসা থানার একটি গ্রাম শিমুলিয়া। এই গ্রামের ২৫/৩০ জন ব্যক্তি মিলে স্থানীয় দেলোয়ার মাস্টারের নেতৃত্বে একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করেন। নিজেদের অসাধারণ কার্যক্রমের কারণে গ্রামটি পৃথিবীজোড়ে ‘ইউটিউব ভিলেজ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরে আসতে পারেন ইউটিউব ভিলেজ থেকে। নামটি শুনে প্রথমেই অবাক লাগতে পারে। কিন্তু অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা শিমুলিয়া গ্রামের একটা অংশকে ইউটিউব ভিলেজ নামে চিহ্নিত করেছে।

বিশেষ এই চ্যানেলটির নাম ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’। এখানে ভিডিওর মাধ্যমে গ্রামীণ জীবন বিশেষত রান্নাবান্নাকে তুলে ধরা হচ্ছে বিশ্ব দরবারে। বেশ আয়োজন করে গ্রাম্য ধারায় শত শত মানুষের জন্য রান্না করা হয়। এ রান্নার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াই শৈল্পিকভাবে ভিডিওতে তুলে ধরা হয়।

জানা যায়, ছোট্ট গ্রামটিতে নারীদের দলবেঁধে রান্না করা, গ্রামের শত শত মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানো, থিমপার্ক, মানুষের ইচ্ছাপূরণ, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করার ভিন্নধর্মী কার্যক্রমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াই ভিডিও করে ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়। সেসব ভিডিও দেশ-বিদেশে ব্যাপক ভাইরাল হয়। এজন্য এই গ্রামটি এখন পৃথিবীর বহু দেশের মানুষের কাছে ‘ইউটিউব ভিলেজ’ নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাই গ্রামটিকে ‘ইউটিউব গ্রাম’ বলে ডাকেন।

রান্নার এই ভিডিওগুলোতে নেই কোনো উপস্থাপনা, নেই কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ভিডিওগুলোর প্রত্যেকটির শুরু থেকে শেষ অব্দি উপভোগ করেন উৎসুক দর্শক। রান্নাকে ঘিরেই যেন উৎসবের আমেজ নামে পুরো গ্রামে। বর্তমানে অ্যারাউন্ড মি বিডির সাবস্ক্রাইবার প্রায় ৪ দশমিক ৫২ মিলিয়ন। আয়োজন করে রান্নার পর গ্রামের শত শত মানুষকে বিনা খরচে সে খাবার খাওয়ানো হয়।

শুধু তা-ই নয়, খোকসার শিমুলিয়ায় বাঁশ-খড়সহ গ্রামীণ জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি থিমপার্ক। এ পার্ক কীভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়েও ভিডিও ছাড়া হয় ইউটিউবে। সহজ, সরল গ্রামীণ জীবনে আনন্দ দিতে গেলে নিজেদের চেষ্টায় যতটা করা সম্ভব, সবই যেন করা হচ্ছে এই ইউটিউব গ্রামে। সেখানকার নয়নাভিরাম দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

এই ইউটিউব ভিলেজের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি বলেন, রান্নার দিন সবাই খুব আনন্দে থাকি। সকাল থেকে রান্না শুরু হয়। বিকেলে গ্রামের শত শত মানুষ একসঙ্গে খাই। আয়োজনে পোলাও, বিরিয়ানি, গরু, খাসি, মুরগির মাংস, বড় মাছ, ছোট মাছ, ডিমসহ বিভিন্ন রকমের খাবার পরিবেশন করা হয়। আজ দুই মণ চাল, এক মণ মুরগি ও দুই মণ বেগুন রান্না করা হয়েছে। ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষকে খাওয়ানো হয়। খরচ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

এসব কাজে সবাইকে সম্মানী দেওয়া হয়। তাছাড়া অসহায় ও বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষদের আমরা সাহায্য করে থাকি। গ্রামের মানুষ মেলার মতো আনন্দের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে। লকডাউনের কারণে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। লকডাউন শেষে আমরা আবার আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আমরা আরও ভালো কাজ করতে চাই। যাতে এলাকা ও এলাকার মানুষের উন্নয়ন ঘটে।

শুধু তাই নয়, গ্রামীণ জিনিসপত্র দিয়ে খোকসার শিমুলিয়াতে তৈরি করা হয়েছে একটি থিমপার্ক। এ পার্ক কীভাবে তৈরি করা হয়েছে তা নিয়েও ভিডিও রয়েছে। সহজ, সরল গ্রামীণ জীবনে আনন্দ দিতে গেলে নিজেদের চেষ্টায় যতটা করা সম্ভব, সবই যেন করা হচ্ছে এই ইউটিউব গ্রামে।

পৃথিবী বিখ্যাত ফুড রিভিওয়ার সানি বছর দুয়েক আগে ইউটিউবে অ্যারাউন্ড মি বিডির খোঁজ পান। সুদূর আমেরিকা থেকে তিনি বাংলাদেশে আসেন তাদের সঙ্গে দেখা করতে। তার আগমন উপলক্ষে মহিষ জবাই করে ৪ হাজার মানুষকে খাওয়ানো হয়। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত ফুড রিভিওয়ার আদনান ফারুক (টেলিভিশন নাটকের নায়ক হিল্লোল) ও আরেক বিখ্যাত ফুডরিভিওয়ার রাফসান দ্য ছোটভাই।

‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ চ্যানেলের মালিক ও অ্যাডমিন সফটওয়্যার প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, পরিকল্পনা ছাড়াই প্রথমে শখের বসে আমি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আপলোড করতাম। পরে ২০১৬ সালে আমার মামা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করে অ্যারাউন্ড মি বিডির কার্যক্রম শুরু করি।

আমি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) পড়াশোনা করেছি। ঢাকায় আমার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও আছে। আমি ঢাকাতেই থাকি। আর আমার মামা গ্রামে থেকে সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। চ্যানেলের জন্য গ্রামে চারজন ফটোগ্রাফার, ঢাকায় চারজন ভিডিও এডিটর কাজ করেন। আমি ভিডিওগুলো আপলোড করি।

ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়ের বিষয়ে তিনি জানান, শুরুর দিকে আয়-উপার্জন ছিল না। পকেটের টাকা ব্যয় করে কার্যক্রম চলত। এখন দেশ-বিদেশে আমাদের চ্যানেল খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ইউটিউব থেকে এখন ভালোই উপার্জন হয়। সেখান থেকে প্রতি মাসে ৫০ জনকে সম্মানি দেওয়া হয়। এখন আমি গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি। পাশাপাশি অসহায় মানুষের মুখে সামান্য খাবার তুলে দিতে পারছি, বেকারকে চাকরি দিতে পেরেছি। এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই।

ভবিষ্যতে আমাদের কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়ানোর স্বপ্ন রয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করা।

সোনালীনিউজ/আরকে/এসআই

Wordbridge School
Link copied!