• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ভাষা আন্দোলনের ৭দশক

একুশে পদক পাচ্ছেন রংপুরের মজিবর মাস্টার


একেএম সুমন, রংপুর ব্যুরো ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৯:৪২ এএম
একুশে পদক পাচ্ছেন রংপুরের মজিবর মাস্টার

মজিবর মাস্টার

রংপুর: ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে  অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও ২ প্রতিষ্ঠাকে এ বছর একুশে পদক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

এবছর ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক পাচ্ছেন তিনজন। তাদের মধ্যে একজন রংপুরের গুণী শিক্ষক, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান মাস্টার। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত সেরাজ উদ্দিনের ছেলে। ১৯৩৭ সালে তার জন্ম হয় এই গ্রামে।

গত রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বাবুল মিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। আগামী সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পদকপ্রাপ্তদের হাতে একুশে পদক-২০২৩ তুলে দেওয়া হবে।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন মজিবর রহমান মাষ্টারের বাড়িতে নেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সাথে দেশের স্বাধীনতা রক্ষাসহ সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ভিশনে বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রচেষ্টার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।

এই ভাষা সৈনিক বলেন, ‘১৯৪৮ সালে আমি এখানকার লোকজনের সাথে পাকিস্তানের নেতা কায়েজ আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে দেখতে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের একটি সমাবেশে গিয়েছিলাম। তখন আমি বদরগঞ্জ হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সেই সমাবেশে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইংরেজিতে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষার করার ঘোষণা দেন। বেশিরভাগ মানুষ না বোঝার কারণে তেমন প্রতিবাদ করেনি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানেও একই ঘোষণা দেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। কিন্তু এখানে ছাত্রিরাসহ আমরা নো নো বলে স্লোগান দিয়েছিলাম। ছাত্ররা তীব্র প্রতিবাদ করেন। সেই থেকে আমি ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হই’।

মজিবর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে ফেরার পর ইদ্রিস লোহানী ও ইউনুস লোহানীর বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করি। বদরগঞ্জের তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা জীতেন দত্ত, ইদ্রিস লোহানী ও ইউসুফ লোহানীর অনুপ্রেরণায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হই।  ‘আমাদের এলাকার রামনাথপুর গ্রামের নাসিম ডাক্তারের সাথে পোস্টার লিখতাম ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’।

‘আমরা বিভিন্ন শহর ও গ্রামে স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন করি। যাতে করে ছাত্ররা আন্দোলনমুখী হয়ে উঠে। বুড়িপুকুর, লালদিঘিরহাট, সয়ার খোড়াগাছ, শ্যামপুরে ক্যাম্পেইন করি। এমনকি সাধারণ মানুষও আমাদের আন্দোলনের পক্ষে ছিল। সবাই মাতৃভাষা বাংলা চায়। তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করায় জেলখানায় বন্দি ছিলেন। ওখান থেকে উনি চিরকুট পাঠিয়ে দেয় বাংলা ভাষার জন্য আমরা যেন আন্দোলন করি। আমি ১৯৫২ সালে মেট্রিক পরীক্ষার্থী। ভাষার দাবিতে আন্দোলন করায় আমার নামে ওয়ারেন্টও হয়েছিলো।’

সাহসী এই ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতিতে যুক্ত হবার সুবাদে চষে বেড়ান সবখানে। সেই স্মৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রংপুর মহকুমায় সব জায়গায় আন্দোলন করেছিলাম। ১৯৭০ সালে ভোট ক্যাম্পেইনে রংপুর কালেক্টরেট ময়দানে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তখন আমি শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বঙ্গবন্ধুর ওই সভায় ছাত্র-শিক্ষকসহ অনেককে নিয়ে গিয়েছিলাম। সাথে ওই সভায় ছয়টা রুপার চান্দি (রুপার মুদ্রা) নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করে তুমি এটা করলে কেন? আমি বললাম ৬ দফাকে স্মরণ রাখার জন্য এটা করছি। তখন বঙ্গবন্ধু আমার পিঠে থাপড় দিয়ে বলেন সাবাস সাবাস।

১৯৭১ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণের পর মজিবর রহমান মাস্টার বদরগঞ্জে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। তিনি ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আহ্বায়ক ছিলেন এমএলএ এলাহী বকস্ সরকার। তবে তাকে শ্যামপুর আঞ্চলিক সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়েছিল।

মজিবর রহমান মাস্টার বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু এই তিনটি স্লোগানকে বুকে ধারণ করে ২৮ মার্চ হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষকে সাথে নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন। সে সময় পাক হানাদারের গুলিতে অসংখ্য বাঙালি শহীদ হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

মজিবর রহমান মাস্টারের এক ছেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান মজনু ও আরেক ছেলে মোস্তাকুর রহমান পেশায় প্রকৌশলী। মেয়ে মোনসেফা খানম গৃহিণী। তার একুশে পদক প্রাপ্তির সংবাদে খুশি পরিবার-পরিজনসহ গ্রামবাসী। সোমবার সকালে ভাষা সৈনিক মজিবর রহমান মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন।

উল্লেখ্য, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান মাস্টার স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলায় স্বাক্ষী ছিলেন। একারণে তিনি জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকারও হন। তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বদরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাকশাল গঠনের পর তিনি দীর্ঘদিন রংপুর জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বদরগঞ্জ শাখা টিসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি বদরগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!