• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে স্বামী-স্ত্রীসহ সন্তানের মৃত্যু, ঈদ নেই স্বজনদের


শেরপুর প্রতিনিধি এপ্রিল ১২, ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
সড়কে স্বামী-স্ত্রীসহ সন্তানের মৃত্যু, ঈদ নেই স্বজনদের

শেরপুর: ‘বাজান গো আমগোর ঈদ নাই, আমার সোনার ছেলে আমারে থুইয়া (রেখে) চইল্লা গেছে গা। আমার বাবা পরিবার নিয়াই চইল্লা (চলে) গেছে। আমার বাবাডা, আমগোরে বুড়া-বুড়ি (অসুস্থ বাবা-মা) রাইখা চইল্লা গেল গা। এডা বাচ্চারেও (ছেলে) এতিম করে রাইখা গেল। আল্লাহ তুমি আমার পুলাডারে বেহেশত নসীব করো।’

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত লুৎফর রহমানের মা মোছা. হালিমা খাতুন।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের মো. উহির আলীর ছেলে মো. লুৎফর রহমান। তিনি গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি এলাকায় একটি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। প্রতি বছর ঈদের সময় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ স্বজনদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত মঙ্গলবার স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ রওনা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সড়কেই ঘটে দুর্ঘটনা। এতে লুৎফর রহমান (৩০), তার স্ত্রী শাহনাজ (২৫) ও শিশু সন্তান মাহিত (২) সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। লুৎফরের সাড়ে চার বছরের ছেলে মুজাহিদ আহত হয়েছে।

নিহত লুৎফর রহমানের ভাতিজা শামিম ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ল্যাংড়াবাজার এলাকায় টাঙ্গাইলগামী বাসের ধাক্কায় মাহেন্দ্র থ্রি হুইলার দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে আমার চাচাতো ভাই মাহিত এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাচা-চাচি মারা যান। অপর চাচাতো ভাই মুজাহিত আহত হয়। আমার দাদা-দাদি এমনিতে দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। এর মধ্যে এমন ঘটনায় তারাও দুমরে-মুচড়ে গেছে। তাই আমাদের পরিবারে এবার ঈদের আনন্দ নেই। উৎসবের কোনো রঙই ছুঁতে পারে নাই এই পরিবারের সদস্যদের।

ঈদের দিন বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান, সন্তানের স্ত্রী ও নাতি হারানোর শোকে একটি টিনসেড ঘরে আহাজারি করছেন হালিমা খাতুন। পাশে কাঁদছেন স্বজনরাও। বাড়ির পাশেই ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতির কবরের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে নির্বাক তাকিয়ে বসে আছেন লুৎফরের বাবা মো. উহির আলী। কবরস্থানটি বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজ করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

মো. উহির আলী বলেন, আমার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সব ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী-শিশু সন্তানসহ এ পৃথিবী থেকে আল্লাহ নিয়ে গেছে। এই ছেলেই আমার ও আমার স্ত্রীর ভরণপোষণ করত। আল্লাহর কাছে তাদের বেহেস্ত কামনা করি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জহির আলী বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে শ্বাসকষ্টের রোগী। গত মাসে নতুন করে হাঁটুতে ব্যাথা শুরু হয়েছে। লুৎফরকে জানানোর পরে সে ঈদে বাড়িতে এসে আমাকে ডাক্তার দেখাতে চেয়েছিল। আমার ছেলে বাড়িতে ঠিকই আসল, কিন্তু জীবিত নয়, লাশ হয়ে। আমার সব শেষ।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. আব্দুর রকিব বাদশা বলেন, এক দিনে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক। এ ঘটনায় এই পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভয়েজ অব ঝিনাইগাতীর সভাপতি জাহিদুল হক মনির জানান, একটা পরিবারের তিনজন সদস্য একসাথে মারা যাওয়ায় ওই পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। আমরা এ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!