• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১
কোটা সংস্কার আন্দোলন

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কারাগারে ১৬ বছরের শিক্ষার্থী!


রংপুর প্রতিনিধি আগস্ট ১, ২০২৪, ১২:০৯ পিএম
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কারাগারে ১৬ বছরের শিক্ষার্থী!

রংপুর : রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গুলিতে নিহত ও সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনায় হওয়া মামলায় ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। তার নাম মো. আলফি শাহরিয়ার মাহিম। তাকে গত ১৮ জুলাই গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

এ ঘটনায় বুধবার (৩১ জুলাই) মাহিমের বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

মাহিমের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তার বর্তমান বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। সে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিক্ষোভের সময় বেরোবি ফটকের সামনে গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ওই দিন বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, পুলিশের ছোড়া গুলি আবু সাঈদের বুকে লাগে।

প্রত্যক্ষদর্শীসহ শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেন, পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। কিন্তু এ-সংক্রান্ত মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বা এফআইআরে পুলিশ দাবি করেছে, আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হননি। ১৬ জুলাইয়ের ওই ঘটনায় পরদিন ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’

সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’

মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় একাদশ শ্রেণির ছাত্র মাহিমকে। তাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনা নিয়ে তার বোন সানজানা আক্তার স্নেহা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

ফেসবুকে স্নেহা লেখেন, ‘গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ার শেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না, তখন বাবার কাছে একটা কল আসে।

তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৮ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই।

কিন্তু পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

স্নেহা ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাঈদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বারবার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর; তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেয়া হলে ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দিবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই।’

সানজানা আক্তার বলেছেন, ‘যে ছেলেটা লিগ্যাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু; তাকে তারা কোন হিসাবে এভাবে হ্যারাস (হয়রানি) করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা, তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল। আইডি ছিল। সে পুলিশদের ইনস্টিটিউটেরই ছাত্র।

এ ক্ষেত্রে কি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারও কিছুই করার নাই? আমার ভাইকে কোন লজিকে তারা আটকে রেখেছে, দেখাও করতে দিচ্ছে না!’

মাহিমকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে- তার তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুরের তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমান।

তিনি এ বিষয়ে বুধবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই দিন (১৭ জুলাই) আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে (মাহিম) পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে (মাহিম) বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে আলফি আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিনেও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আইন অনুযায়ী তো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এ কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেওয়া হয়।

যা-ই হোক আজকে (গতকাল) তার বাবা-মাকে পুলিশ কমিশনার স্যার ডেকে আশ্বস্ত করলেন, তার বয়স কম। সম্ভবত কাল তার জামিন হবে। তাকে চার্জশিট থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন স্যার।’

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!