লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৬টি প্যাকেজে প্রায় আট কোটি টাকার ওয়াশব্লকের কাজ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও সর্বনিম্ন দরদাতাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি পক্ষের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, কাজটি পেতে বিএনপি নেতারা বিভিন্নভাবে সর্বনিম্ন দরদাতাদের সরে দাঁড়াতে চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও বিএনপি নেতাদের দাবি, তারা কাউকে কোন হুমকি ধমকি দেয়নি। অন্যদের মতো তারাও স্বাভাবিকভাবে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছে।
নাম প্রকাশে ১১ জন ঠিকাদারের অভিযোগ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন ঠিকাদারদের সরাসরি ও মোবাইলফোনে কল করে টেন্ডারে অংশগ্রহণে নিষেধ করে। এতে ভয়ে তারা অংশ নেয়নি। ২৪ অক্টোবর ৫টি প্যাকেজের টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এতে প্রতি প্যাকেজে মাত্র ৩ টি করে প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিএনপি নেতারা যে দুটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টেন্ডারে অংশ নিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে তাদের প্রায় ৫৪ লাখ টাকার ব্যবধান রয়েছে। এখন সর্বনিম্ন দরদাতাদের কাছ থেকে কাজ ভাগিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি নেতারা। ওই সিন্ডিকেটের বার্তা সর্বনিম্ন দরদাতারা আগে জানতেন না। কাজ পাওয়ার পরে এখন তারা হুমকি ধমকিতে ভয়ে আছেন। তারা এখন অফিসেও আসছে না। এভাবে হুমকি ধমকি চলমান থাকলে ভবিষ্যতে সাধারণ ঠিকাদারদের টেন্ডারে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপির কয়েকজন নেতা মেসার্স মুক্তা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স হাফিজ উল্যাহ ভূঁইয়া এন্ড সন্স টেন্ডার কার্যক্রম অংশগ্রহণ করে। তবে তারা সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল। এতে তারা কাজ পায়নি। এখন তারা সর্বনিম্ন দরদাতাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। যদি পায়, তাহলে কাজগুলো বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল ও ছাত্রদল সমন্বয় করে নেবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের এক কর্মকর্তা জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও মেসার্স হাফিজ উল্লাহ ভূঁইয়া এন্ড সন্স ও মেসার্স মক্তা এন্টারপ্রাইজ কাজ করেছে। এ দুই প্রতিষ্ঠানের নামে এখনো ওয়াশব্লকের কাজ চলমান রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা কমিশন নিয়ে এদেরকে কাজ দিতে চাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্র জানায়, ৯ অক্টোবর জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নির্মাণের জন্য প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ প্যাকেজে উম্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ২৪ অক্টোবর ৫টি প্যাকেজের দরপত্র খেলা হয়। এতে চারটি প্যাকেজে তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এক প্যাকেজে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এতে মেসার্স আহমেদ এন্টার প্রায় তিনটি ও মো. শাহনাজ দুটি প্যাকেজের সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছেন। এছাড়া মেসার্স হাফিজ উল্যাহ এন্ড সন্স তিনটি ও মেসার্স মুক্তা এন্টারপ্রাইজ দুটি সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন। পাঁচটি প্যাকেজে প্রায় ছয় কোটি ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯১ টাকা আহ্বান করেন সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ছয় কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৮৭৭ টাকা আহ্বান করেন। সর্বনিম্ন দরদাতার সঙ্গে তাদের প্রার্থক্য প্রায় ৫৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৫ টাকার। অন্য প্যাকেজ ২৯ অক্টোবর খোলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছে। সেখানে আমরাও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করি। আমরা সর্বোচ্চ দরদাতা। সর্বনিম্ন দরদাতাদের আমরা চিনিও না। কাউকে কোন হুমকিও দেওয়া হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু গণমাধ্যমে বলেন, জনস্বাস্থ্যে কে বা কারা টেন্ডার দিয়েছে, তা আমার জানা নেই। সেখানে টেন্ডার নিয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ মিথ্যে।
এ ব্যাপারে জানতে লক্ষ্মীপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিলকিস আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসএস