• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

চুয়াডাঙ্গায় ৫ বছরের মধ্যে এপ্রিলে সবচেয়ে কম তাপপ্রবাহ


চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি  মে ১, ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম
চুয়াডাঙ্গায় ৫ বছরের মধ্যে এপ্রিলে সবচেয়ে কম তাপপ্রবাহ

চুয়াডাঙ্গা: প্রতিবছর এপ্রিল মাসে গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় তাপপ্রবাহ ‘আপন রূপে’ দেখা দেয়। গত বছরের ৩০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরো এপ্রিলেই তীব্র গরম ভুগিয়েছিলো মানুষকে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, গত বছরের মতো এবছরও এপ্রিলে গরম তীব্র হতে পারে। এ নিয়ে জনমনে শঙ্কাও ছিলো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এবারের এপ্রিলের আচরণ ছিলো অনেকটাই ভিন্ন। গরম থাকলেও ততোটা তীব্র হয়নি। মাসের শেষ দিন ৩০ এপ্রিল সেখানে গতকাল বুধবার বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৭৯ শতাংশ। 

এক বছরের ব্যবধানে এবার একই তারিখ ও সময়ে তাপমাত্রা কমেছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। 

গ্রীষ্মে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জেলা হিসেবে পরিচিত চুয়াডাঙ্গায় ৫ বছরের মধ্যে এবারের এপ্রিলে সবচেয়ে কম তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

পাঁচ বছরের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছর এপ্রিল মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এর মধ্যে ১৪ দিনই ছিলো প্রচন্ড তাপপ্রবাহ; অর্থাৎ মাসটিতে ১৪ দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো। এ ছাড়া ৯ দিন মাঝারি (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং দুই দিন মৃদু (৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছিলো। 

গত বছর ৩০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১২ শতাংশ। ১৯৮৪ সালে জেলায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠার পর ৪০ বছরের ইতিহাসে এটি ছিলো সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে জেলার ওপর দিয়ে ২২ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এর মধ্যে সাত দিন মৃদু, সাত দিন মাঝারি ও আট দিন প্রচন্ড তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল। ওই বছরের ১৯ ও ২০ এপ্রিল পরপর দুই দিন ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। 

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে জেলায় ২১ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়, যার মধ্যে ১১ দিন মৃদু, আট দিন মাঝারি ও দুদিন ছিলো প্রচন্ড তাপপ্রবাহ। বছরটির ২৫ এপ্রিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২২ সালে এপ্রিল মাসের ৩০ দিনের মধ্যে ৯ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায় চুয়াডাঙ্গা ওপর দিয়ে। 

এর মধ্যে পাঁচ দিন মৃদু, দুই দিন মাঝারি ও দুই দিন প্রচন্ড তাপপ্রবাহ ছিলো। ২৪ ও ২৫ এপ্রিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ চলতি বছরে এপ্রিল মাসেও ৯ দিন তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে সাত দিন মৃদু, দুই দিন মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিলো। ২৩ এপ্রিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, এ বছর তাপমাত্রা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বৃষ্টিপাত। জেলার গড় বৃষ্টিপাত (স্বাভাবিক) ৩৯ মিলিমিটার। গত বছর এপ্রিল মাসে যেখানে মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও এ বছর একই মাসে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 

এটা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩১ মিলিমিটার বেশি। চুয়াডাঙ্গার সার্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর ও মধ্যপ্রবেশের সামঞ্জস্য আছে। সেখানেও এ বছর এপ্রিলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাসের বেশির ভাগ সময় আকাশ থাকে মেঘলা। এ কারণে সার্বিক তাপপ্রবাহও কমেছে।

অন্যদিকে, চলতি বছর এপ্রিলের ৩ ও ৪ তারিখ ছাড়া দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই ২৭ দিনে সারাদেশে ৪ হাজার ৮২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মাসটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গত ২৩ এপ্রিল যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে ১৮ দিন। তবে এর মধ্যে তীব্র কিংবা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল না।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, প্রচন্ড গরম অনুভূত হলে তা স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট মেঘের মাধ্যমে বৃষ্টি হলে কমে না। তাপপ্রবাহ বা প্রচন্ড গরমের সময় বড় ধরনের বজ্রঝড় হলে সেটি তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। তাপপ্রবাহের গরম বজ্রঝড়েই কমা সম্ভব। 

এ বছর মৃদু তাপপ্রবাহের মাঝেই বজ্রঝড় হয়েছে। ফলে মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র হয়নি এবং মৃদু তাপপ্রবাহও বেশি দিন দীর্ঘায়িত হয়নি

এআর

Wordbridge School
Link copied!