লালমনিরহাট: আল-নাহিয়ান সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে এক অফিস সহায়কের চাকরি স্থায়ী করণ বাবদ ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী অফিস সহায়ক লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়াও ওই উপ-তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ ও নারীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিম ছিলেন স্থানীয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর ঘনিষ্ঠজন।
জানা গেছে, সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রীর আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় মন্ত্রীর নির্দেশে ২০২০ সালের মে মাসে চাকরিনীতি ভঙ্গ করে সরাসরি উপ-তত্ত্বাবধায়ক পদে ঢাকা মিরপুর সরকারি শিশু পরিবারে নিয়োগ পান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল হাকিম। চাকরিতে ঢুকেই তিনি দূর্নীতিসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পরেন।
সেখানে প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রয়, সিঙ্গার ফ্রীজ কোম্পানিকে প্রতিষ্ঠানের দুইটা রুম ভাড়া দিয়ে টাকা আত্মসাৎ এবং ছাত্রীর এক মাকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলেও মন্ত্রীর ক্ষমতাবলে আজঅব্ধি এর কোন তদন্ত হয়নি।
তবে অভিযোগ হওয়ার পর সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ কৌশলে অভিযুক্ত আব্দুল হাকিমকে রাতারাতি ২০২২ সালে সেখান থেকে লালমনিরহাট আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারে বদলী করেন। পরে লালমনিরহাটে এসে দলীয় ক্ষমতা খাটিয়ে অফিসের কর্মচারিদের উপর তার মনগরা নিয়ম চালাতে থাকেন।
তার কথার বাইরে গেলে অফিসের কর্মচারিরা তার হয়রানির শিকার হতেন। এ বিষয়ে একের পর এক ডিসি অফিসে অভিযোগ করলেও সাবেক ওই মন্ত্রীর কারণে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক অভিযোগের কোন তদন্ত করেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে লালমনিরহাট সরকারি শিশু পরিবারে হত দরিদ্র জমিলা বেগম নামে এক নারী অস্থায়ী অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন। কিন্তু অভিযুক্ত আব্দুল হাকিম ওই জমিলা বেগমের চাকুরী স্থায়ীকরণের কথা বলে ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়। পরে তার চাকরি স্থায়ী না করে কৌশলে অসহায় জলিমা বেগমকে চাকরি থেকে বের করে দিয়ে আরেকজনকে নিয়োগ দেয়। পরে এ বিষয়ে জলিমা বেগম তৎকালীন লালমনিরহাট ডিসি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েও বিচার পাননি।
পরবর্তীতে গত বছর ৫ আগষ্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল হাকিম তার অফিস থেকে রাতারাতি শেখ মুজিবর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেলেন। পরে ভোল্ট পাল্টে শুরু করেন স্থানীয় বিএনপি নেতাদের লেজুড়বৃত্তি।
এখন প্রায়ই দেখা যায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায়। এভাবেই কৌশলী আব্দুল হাকিম আজও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে সম্প্রতি উপ-তত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিমের এক নারীকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়েছে।
এতে তাকে বলতে শোনা যায়, 'রান্না করা মাংস আনছো কেন!!আমি কাঁচা মাংস খেতে ভালোবাসি। তুমিতো জানো আমার বউ প্রেগনেন্ট।
গ্রামের বাড়িতে, তাই তোমার কাছে কি চাই তুমি বোঝ না?' মিরপুর আল নাহিয়ান শিশু পরিবারের নিবাসী মরিয়ম নামে এক ছাত্রীর মা মনোয়ারা মনাকে এ ভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন ২০২০ সালে ঢাকা মিরপুরে তৎকালীন উপ-তত্ত্বাবধায়ক পদে থাকা আব্দুল হাকিম।
এ ব্যাপারে অসহায় ওই নারী পরিচালক আল নাহিয়ান ট্রাষ্ট (বাংলাদেশ) বনানী ঢাকা বরারর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার পাননি। কারণ আব্দুল হাকিম ছিলেন তখন সমাজ কল্যানমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এর অতি আস্থাভাজন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে লালমনিরহাট আল নাহিয়ান শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল হাকিম ঘুষ গ্রহণের অভিযোগটি অস্বীকার করে এই প্রতিবেদককে জানান, তাকে ফাঁসানোর জন্য একটি চক্র পেছনে লেগেছে। যেগুলো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে সবগুলো মিথ্যা বানোয়াট।
এ বিষয়ে আল নাহিয়ান শিশু পরিবারের সভাপতি জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানান, চাকরি স্থায়ীকরণের নামে ঘুষ গ্রহণের লিখিত অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এআর







































