• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

সুঁই-সুতায় বদলে যাওয়া শত নারী জীবনের গল্প


নেত্রকোনা প্রতিনিধি আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম
সুঁই-সুতায় বদলে যাওয়া শত নারী জীবনের গল্প

‎‎নেত্রকোনা: শহরের ইসলামপুর এলাকার একটি সাধারণ টিনশেড ঘর। বাইরে থেকে একেবারেই সাদামাটা মনে হলেও ভেতরে প্রতিদিন রচিত হচ্ছে শত শত নারীর নতুন জীবনের গল্প। 

এ ঘরটির নাম ‘স্বপ্নবুনন সেলাই শিখন কেন্দ্র’। একটি সুঁই, সুতা আর কাপড়ের কারুকাজে শুধু পোশাক নয়, গড়ে উঠছে নারীদের আত্মবিশ্বাস, আর্থিক স্বাবলম্বন আর সমাজে নিজস্ব অবস্থান।

উদ্যোগটি ‎তিনজন দিয়ে শুরু হলেও এখন এতে কাজ করছেন শত শত নারী। ২০০৫ সালে ‘স্বপ্নবুনন’ শুরু করেন উদ্যোক্তা তাহমিদা ইসলাম। 

জেলার সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিদা। এই দম্পতির তাসিফুল ইসলাম নামে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে ও তাসনিয়া নুসরাত নামে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ে রয়েছে।

আত্ম প্রত্যয়ী নারী তাহমিদা ইসলাম তার স্বপ্নবুনন সেলাই শিখন কেন্দ্রটির শুরুতে অনেকের ঠাট্টা-বিদ্রুপ সহ্য করতে হলেও থেমে যাননি তিনি। সময়ের সাথে সেই ছোট্ট উদ্যোগ আজ দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ নারীর জীবনের ভরসার জায়গায়। কেউ ঘরে বসেই পোশাক তৈরি করে বিক্রি করছেন, কেউ খুলেছেন নিজস্ব টেইলারিং শপ, আবার কেউ অনলাইনে চালাচ্ছেন হস্তশিল্প ব্যবসা।



‎শহর ছাড়িয়ে 'স্বপ্নবুনন’ এর আলো এখন ছড়িয়ে পড়েছে নেত্রকোনার প্রত্যন্ত গ্রামেও। উদ্যোক্তা তাহমিদা ইসলাম খুঁজে নিচ্ছেন গৃহবধূ, বিধবা, কিংবা স্বামী-পরিত্যক্তা নারীদের। তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন সুঁচ-সুতা। 

শেখাচ্ছেন ব্লাউজ, থ্রি-পিস থেকে শুরু করে শিশুদের জামা তৈরির কৌশল। শুধু সেলাই নয়, জীবনের নতুন বুনন প্রতিদিন ৫০-৬০ জন নারী নিয়মিত আসেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। তাদের মধ্যে কেউ স্কুলপড়ুয়া কিশোরী, কেউ সংসারের হাল ধরা নারী। 

সেলাই শেখার পাশাপাশি তারা খুঁজে পাচ্ছেন আত্মবিশ্বাস, আয়ের পথ এবং পরিবারের ভরসা হয়ে ওঠার সুযোগ। অনেকেই আজ সংসারের প্রধান উপার্জনকারী। চালাচ্ছেন সন্তানদের পড়াশোনা, পরিবারের খরচ ও চিকিৎসার দায়িত্ব।

‎‘স্বপ্নবুনন’ এখন আর কেবল একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নয় এটি হয়ে উঠেছে নারীর ক্ষমতায়নের এক নীরব বিপ্লব। যেসব নারী এক সময় নিজেকে অযোগ্য ভাবতেন, আজ তারাই অন্য নারীদের অনুপ্রেরণার উৎস।

‎তাহমিদা ইসলাম বলেন, আমার স্বপ্ন এই প্রশিক্ষণ শুধু ইসলামপুরে নয়, দেশের প্রতিটি গ্রামের নারীর কাছে পৌঁছাক। স্বাবলম্বী হওয়াই নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন। যারা এক সময় বলতেন এসব শিখে কী হবে, তারাই এখন বলছেন দারুণ কাজ করছেন।

‎তিনি আরো জানান, সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে এ উদ্যোগ জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। ২০২৬ সালে একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করেছেন তিনি, যেখানে আরো বহু নারী কাজের সুযোগ পেয়ে নিজেদের জীবন বদলাতে পারবেন। 'স্বপ্নবুনন’ তাই শুধু কাপড়ের বুনন নয়, নারীর স্বপ্ন ও জীবনের নতুন পথে হাঁটার গল্প। 

এআর

Wordbridge School
Link copied!