রাজশাহী: রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার পাহাড়িয়া মহল্লাদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সম্মিলিত ভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
৫৩ বছর ধরে বাস করা পাহাড়িয়া পরিবারগুলোকে কেউ উচ্ছেদ করতে গেলে সম্মিলিতভাবেই প্রতিহত করা হবে মানববন্ধন থেকে ঘোষণা করা হয়।
পাহজাড়িয়াদের উচ্ছেদ চেষ্টার দপ্রতিবাদে শনিবার রাজশাহীতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
সকালে নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি। সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় দিনের আলো হিজড়া সংঘ, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতি।
অংশ নেন ভুক্তভোগী পাহাড়িয়ারাও। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডি। পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়।
মানববন্ধনে পাহাড়িয়া পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন ময়ূরী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এই জমিতে আমাদের দাদারা বাস করেছেন, আমাদের বাবারাও বাস করেছেন। এখন আমরা বাস করছি। দাদাদের কাছে শুনেছি, এই জমির প্রকৃত মালিক ইন্দ্রা ধোপা বহু আগে ভারতে বোনের বাড়ি গিয়ে মারা গেছেন। তিনি কাউকে জমি দিয়ে যাননি। এখন সাজ্জাদ আলী জমির মালিক সেজে আমাদের তুলে দিতে চাচ্ছেন। আমরা কোথাও যেতে চাই না।’
কান্নায় ভেঙে পড়ে ময়ূরী বলেন, ‘আমরা এতই আগে থেকে এখানে বাস করছি যে, তখন পুরো শহরই ছিল প্রায় ফাঁকা। বাপ-দাদাদের আমলে আমাদের মহল্লা থেকেই অনেক দূর দিয়ে যাওয়া ট্রেন দেখা যেত। নদীর জাহাজ দেখা যেত। এতদিন পর সাজ্জাদ কেন জমির মালিকানা দাবি করছেন?’
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সহসভাপতি রাজ কুমার শাও বলেন, ‘সাজ্জাদের দলিল সঠিক নেই। এটা আদিবাসীদেরই জায়গা। এখানে সিটি করপোরেশন তাদের জন্য শৌচাগার নির্মাণ করে দিয়েছে। টিউবওয়েল দিয়েছে। ব্যক্তিগত জায়গায় এসব স্থাপনা হয় না। আদিবাসীর যেহেতু ৫৩ বছর ধরে এখানে বাস করছেন, এ জায়গা তাদের বন্দোবস্তো করে দিতে হবে।’
পাহাড়িয়া মহল্লার সর্দার বাবুল বিশ্বাস বলেন, ‘সাজ্জাদ আলী আমাদের ভয় দেখিয়েছেন। অল্প কিছু টাকা হাতে তুলে দিয়ে বলেছেন, জমি না ছাড়লে অসুবিধা আছে। আমরা ভয়ে চলে যাচ্ছিলাম। এখন সবাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আর কোথাও যেতে চাই না। এই বাড়িতে জন্মেছি, এই বাড়িতেই মরতে চাই। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’
জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, ‘এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিন প্রজন্ম বাস করার পর কাউকে এভাবে ভিটেমাটি থেকে কোনোভাবেই উচ্ছেদ করা যায় না। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, উদীচির সহসভাপতি অজিত কুমার মণ্ডল, আইনজীবী মাহাবুবুর রহমান, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাবেক সভাপতি বাবুল রবিদাস, কোষাধ্যক্ষ সুধির তির্কি, রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ছোটন সরদার, গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সুলতানা আহমেদ সাগরিকা, জুলাই যোদ্ধা ঈষিতা পারভীন ও যুবনেতা উপেন রবিদাস।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের পর ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবার বাড়ি করার সুযোগ পায়। তিন প্রজন্মে এখন বাড়ি হয়েছে ১৬টি। এতদিন পর সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি এই ১৬ কাঠা জমির মালিকানা দাবি করছেন।
তিনি ১৬ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে উচ্ছেদের আয়োজন করেছিলেন। তিনটি পরিবার কয়েকদিন আগেই বাড়ি ছাড়ে। শুক্রবার সেখানে খাসি কেটে খাইয়ে-দাইয়ে তাদের ‘বিদায়ের’ আয়োজন ছিল। রোববার ঘর ছাড়তে বাকিদের। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়। ভেস্তে যায় খাসি ভোজের আয়োজন।
পরদিন বৃহস্পতিবারই পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। শুক্রবার সকালে ওই মহল্লায় যান আদিবাসী সংগঠনের নেতাকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মীরা। সেখানে তারা মানববন্ধন করেন।
খোঁজ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। লন্ডন থেকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ফোন করে বিকেলে ওই মহল্লায় পাঠান।
এআর







































