• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বিএনপি-জামায়াতের দুই ভূঁইয়ার মুখোমুখি লড়াই


জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম
বিএনপি-জামায়াতের দুই ভূঁইয়ার মুখোমুখি লড়াই

ছবি: প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘বিএনপির ঘাঁটি’ এবং ‘খালেদা জিয়ার আসন’। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুবারই তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এই আসনে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেন। কেউ কারাগারে, কেউ আত্মগোপনে, আবার কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তিনবারের সাবেক সাংসদ আবুল খায়ের ভূঁইয়া। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত মনোনীত প্রার্থী, জেলা জামায়াতের আমির এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া। স্থানীয়দের ভাষায়, এই আসনে ‘দুই ভূঁইয়ার লড়াই’ এখন নিশ্চিত।

নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার পক্ষেই কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। শোভাযাত্রা, সামাজিক অনুষ্ঠান, সমাবেশ ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁদের। বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে নেতারা সংগঠনকে উজ্জীবিত করছেন এবং ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন।

বিএনপি ও জামায়াতের তৎপরতা দৃশ্যমান হলেও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের কার্যক্রম অনেকটাই নিস্তেজ। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হেলাল উদ্দিন নির্বাচনী মাঠে থাকলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও এবি পার্টির কার্যক্রম এখানে নেই বললেই চলে।

বিএনপির প্রার্থী আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, এলাকার মানুষের সেবায় তিনি সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন। বেকারত্ব দূর করা এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও তাঁর রয়েছে। তিনি দাবি করেন, সাধারণ মানুষ উৎসাহ নিয়ে ধানের শীষে ভোট দিতে প্রস্তুত।

জামায়াত প্রার্থী রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনেই জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। দাঁড়িপাল্লার পক্ষে তরুণদের প্রথম ভোট নিজেদের দিকে আনতে তাঁরা প্রতিদিন মাঠে কাজ করছেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও সদরের ৯টি ইউনিয়নসহ মোট ১৯টি ইউনিয়ন এবং রায়পুর পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৭৭ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ১৫০ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন।

১৯৮৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা হওয়ার পর ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর–২ আসনে ১৩ বার জাতীয় সংসদ ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ছয়বার, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ তিনবার করে এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন।

১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে চৌধুরী খুরশিদ আলম (জাতীয় পার্টি) নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে মোহাম্মদ উল্যাহ এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আবুল খায়ের ভূঁইয়া (বিএনপি) জয়ী হন। জুন ১৯৯৬ নির্বাচনে খালেদা জিয়া জয়ী হয়ে আসন ছেড়ে দিলে সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারুনুর রশিদ নির্বাচিত হন।

২০০১ সালে আবারও খালেদা জিয়া বিজয়ী হন। তিনি আসন ছাড়ার পর উপনির্বাচনে আবুল খায়ের ভূঁইয়া জয়ী হন। ২০০৮ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে দিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন মোহাম্মদ নোমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘টাকার কুমির’খ্যাত শহিদুল ইসলাম পাপুল জয়ী হন; তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সংরক্ষিত আসনে এমপি ছিলেন।

২০২০ সালের ৬ জুন মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হন পাপুল। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা হলে উপনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। তবে শেখ হাসিনার পলায়নের পর থেকে নয়নের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এসএইচ 

Wordbridge School
Link copied!