• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য

পাহাড় কেটে নির্মাণ হচ্ছে ‘কনডোমিনিয়াম গ্রিন পার্ক’


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১, ১০:০১ পিএম
পাহাড় কেটে নির্মাণ হচ্ছে ‘কনডোমিনিয়াম গ্রিন পার্ক’

ঢাকা : চট্টগ্রামের ষোলশহরে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে ডানকান পাহাড় এলাকায় পাহাড়, গাছ-পালা কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের পরবর্তী সকল কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। তবে প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে ‘গ্রিন পার্ক’ নামে কনডোমিনিয়ামটি তৈরি করে যাচ্ছে। 

হাইকোর্টের দেয়া রুলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া পাহাড় এবং গাছ কেটে চট্টগ্রামের ষোলশহরে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে ডানকান পাহাড় এলাকায় বহুতল নির্মাণ বন্ধে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ পাহাড়কাটা বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, পরিবেশ ও বন সচিব, ভূমি সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক, দ্য স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেডকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কাজী আকতার হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান সাকিল ও মো. গোলাম সারোয়ার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) আইনজীবী মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সজল মল্লিক এ রিটটি করেছেন। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে পাহাড়-গাছ কাটা এবং বহুতল ভবন নির্মাণের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।

জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও চট্টগ্রামের বাসিন্দা সজল মল্লিক গত ২৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে চারটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করেন।

২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর ‘ডানকান হিলে স্যানমারের ২৫ তলার দুই টাওয়ার!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ষোলশহর বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডানকান হিল কেটে ২৫ তলার দুই টাওয়ার নির্মাণের আয়োজন করেছে স্যানমার! নগরীর অন্যতম খ্যাতনামা আবাসন কোম্পানি স্যানমার প্রপার্টিজ এই টাওয়ার নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে শতাধিক গাছ সাবাড় করেছে, আরো গাছ কাটার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে মাটি কেটে চলছে নির্মাণ প্রক্রিয়া। অথচ গাছ কাটার জন্য বন বিভাগ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি এবং পাহাড়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও কোনো ছাড়পত্র নেয়া হয়নি।’

ষোলশহর বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন জীববৈচিত্র্যগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি এলাকাটি এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ডানকান হিলে ২৫ তলা ভবনের অনুমোদন দিয়েছিল নগর উন্নয়ন কমিটি। তবে ২০১৩ সালের দিকে দেওয়া সেই অনুমোদন ইতিমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। অনুমোদনে তিন বছরের মধ্যে কাজ শুরু করার শর্ত থাকে। সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী ও নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব কাজী হাসান বিন শামস জানান, ‘তিন বছরের মধ্যে কাজ শুরু না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদন বাতিল হয়ে যায়।’ কিন্তু পাহাড় চূড়ায় এই ভবন নির্মাণের অনুমোদন কীভাবে পেল এমন প্রশ্নের জবাবে সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘নগর উন্নয়ন কমিটি ২৫ তলার দুই ভবনের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এই দুই ভবনের কারণে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশগত অবস্থা সংকটাপন্ন হবে।

এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘পাহাড়ে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। স্যানমার এখনো সেই ছাড়পত্র পায়নি। আর অনুমোদনের আগে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে না। অপরদিকে গাছ কাটার বিষয়টি বন বিভাগের বিবেচ্য বিষয়।’

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাহাড়ের বুকে বিশাল আকৃতির গর্ত করে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবনের একাধিক কলাম। নগরের বায়েজিদ বোস্তামি আরেফিন নগরে ‘গ্রিন পার্ক’ নামে কনডোমিনিয়ামটি তৈরির কাজ চলছে। এটি স্যানমারের প্রথম কনডোমিনিয়াম। ইতোমধ্যে একটি টাওয়ারের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যটির তিনটি বেইজমেন্ট ঢালাইও শেষ। একটি টাওয়ারের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৪ সালে টাওয়ার-২, ২০২৫ সালে টাওয়ার-৩ ও ২০২৬ সালে টাওয়ার-১ এর কাজ শেষ হবে।

একসঙ্গে তিনটি টাওয়ার সংযুক্ত এই কনডোমিনিয়ামের পাশ ঘেঁষে চলে গেছে ১৮০ ফুট প্রশস্ত বায়েজিদ সংযোগ সড়ক। সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সামনে দিয়ে শহরের সঙ্গে মিলবে। ১২৮ দশমিক ৩৬ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে তিনটি সুবিশাল টাওয়ার। প্রতিটি টাওয়ার ২৬ তলাবিশিষ্ট। যার প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে ছয়টি ইউনিট। 

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!