• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা ফেরত পাচ্ছে না অর্থ


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৮, ২০২১, ১২:৩২ পিএম
প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা ফেরত পাচ্ছে না অর্থ

ঢাকা : ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপে টু ইউ থেকে শুরু করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জের মতো শতাধিক প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রতারণার ঘটনায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও কর্মকর্তাদের।

কিন্তু যাদের সঙ্গে এই প্রতারণা, যাদের টাকায় প্রতারকরা কারাগারে বসেও বিলাসী জীবনযাপন করছেন সেই গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে যেন কারোরই তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কার্যত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার মূল লক্ষ্যটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া যুবক নামের প্রতিষ্ঠানটি ৩ লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপে টু ইউ, ইউনিগেট টু ইউ, গ্লোবাল গেইন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আপনজন, দি ক্লাসিক লাইফ বিডি প্রাইভেট লিমিটেড  কোম্পানি, দেইসান বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, এসএমএন গ্লোবাল লিমিটেড, অ্যাডভান্স বাংলাদেশ লিমিটেড, টিয়ানসি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ড্রিম টুগেদার লিমিটেড, লাইফওয়ে লিমিটেড, রিচ বিজনেস লিমিটেড, লাকজার গ্লোবাল অ্যান্ড লিমিটেড, এমওয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ফরএভার লিভিং প্রোডাক্টস বাংলা লিমিটেডসহ এরকম অসংখ্য এমএলএম কোম্পানি গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর বাইরে সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে অনেক এনজিও গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফেরত পায়নি তাদের কষ্টার্জিত টাকা।

সবশেষ প্রতারণার সেই পালকে যুক্ত হয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম। ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জ, কিউকমসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। লোভনীয় অফারের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের সিইও থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউবা রয়েছেন পলাতক। কিন্তু যথারীতি ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েও ফেরত পাচ্ছেন না তাদের অর্থ।

ডেসটিনি এবং যুবকের গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজানা কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।  ভুক্তভোগীরা অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে ডেসটিনি ও যুবকের গ্রাহকরা গ্রাহকরা আশায় বুক বেঁধে আছেন। অথচ এক টাকাও ফেরত পাননি তারা।

অন্যদিকে, ই-কমার্স প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত পেতে রাস্তায় নামলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তারা বলছেন, সরকার প্রতারকদের অনেককে ধরে জেলে পুরেছে। কিন্তু আমরা যদি আমাদের অর্থই ফেরত না পেলাম তাহলে তাদের ধরে কি হবে।

জানা গেছে, ডেসটিনির অনেক সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। কারখানায় অকেজো পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি।

অন্যান্য সম্পদও বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে, অনেক সম্পদ রয়েছে জবরদখলকারীদের কব্জায়। ডেসটিনির পার্বত্য এলাকায় কোম্পানির অধীনে থাকা গাছ চুরি হচ্ছে হামেশা। বিভিন্ন ব্যাংকে ডেসটিনি গ্রুপের ৫৩৩টি ব্যাংক হিসাবও জব্দ অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় প্রায় ৪৫ লাখ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মাঝখানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শর্ত দিয়েছিল যদি ৬ সপ্তাহের মধ্যে ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অথবা নগদ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরকারের কাছে জমা দিতে তাহলে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন জামিন পাবেন।

সেই নির্দেশনা এখনো বহাল। কিন্তু এক টাকাও জমা হয়নি। আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে ডেসটিনির নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশকে। রাজধানীতে থাকা ডেসটিনির সম্পদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং রাজধানীর বাইরের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা কথিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজেদের নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ কিনেছেন।

এগুলোর মধ্যে বাড়ি, গাড়ি, সিনেমা হল ছাড়াও রয়েছে পাটকল, হিমাগার, টেলিভিশন চ্যানেল ও ধানি জমি। তবে ডেসটিনির সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে ডিএমপির একটি কমিটি রয়েছে। ‘ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ২০০০ লি. নামক কোম্পানির ক্রোককৃত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা ও তদারকি সংক্রান্ত আহ্বায়ক কমিটি।’

একইভাবে, প্রতারণার দায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) গ্রাহকদের অর্থ দেওয়ার কোনো উপায় বের করতে পারেনি সরকার।

সাবেক যুগ্ম-সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে সরকারের গঠিত ‘যুবক কমিশন’ ২০১৩ সালে যুবকের সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের সুপারিশ করে। এরপর একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো উপায় বের হয়নি।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, যুবক ও ডেসটিনির যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তা বিক্রি করলে গ্রাহকদের ৫০-৬০ শতাংশ পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব। গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ডেসটিনি ও যুবকের অনেক সম্পদ রয়েছে। সম্পদগুলোর দামও বেড়েছে অনেক। বাণিজ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী তাকে বলেছেন এটা আদালতের বিষয়। কাউকে (কোনো সংস্থা) দিয়ে সংযুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যেতে পারে। আইন মন্ত্রণালয় এটা নিয়ে কাজ করছে।

তবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কি হবে সে বিষয়ে কেউই কিছু বলছেন না। বিশেষ করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রতারিত গ্রাহকরা এ বিষয়ে নিজেদের হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন। তারা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!