• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৬, ২০২১, ০২:৩৭ পিএম
রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা

ঢাকা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বৈশাখে এবার বিক্রি ছিল না বললেই চলে। ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসাও হাতছাড়া হওয়ার পথে। এর মধ্যে শুধু প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যাচ্ছেন। কঠোর লকডাউনেও রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা দেখছেন আশার আলো। চালু রয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্ট।

উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানও খোলা। শেয়ারবাজারে কদিন ধরে ইতিবাচক অবস্থা দেখা যাচ্ছে। অচিরেই খুলবে দোকানপাট ও বিপণিবিতান। তাই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে কৃষকরা মহামারীতে তুলনামূলকভাবেকম আক্রান্ত হওয়ায় কৃষিপণ্যের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেনি। বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এরই মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত, দরিদ্র, দুস্থদের অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে ধারণা করা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলেই আবার অর্থনীতির চাকা সচল হবে।

রপ্তানি বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স এবং চলমান টিকাদান কর্মসূচির হাত ধরে উন্নতির সম্ভাবনা দেখছে বিশ্বব্যাংক। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট মুভিং ফরোয়ার্ড : কানেকটিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু স্ট্রেংথেন কম্পেটিটিভনেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দাতা সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে এবং প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবার দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। তবে ধাক্কা কাটিয়ে ধারাবাহিকভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে গত ৬ এপ্রিল প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস’ শীর্ষক আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে। ২০২১ সালে হতে পারে ৫ শতাংশ। ২০২২ সালে বেড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশও হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রবাসীরা চলতি এপ্রিলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এই মাসের প্রথম ১৫ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তা গত বছরের পুরো এপ্রিলের চেয়েও বেশি।

প্রবাসীরা এই মাসের প্রথম ১৫ দিনে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১১৫ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। গত বছর এপ্রিলে এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। সেই হিসাবে ১৫ দিনেই পুরো মাসের চেয়ে ৬ কোটি ৩ লাখ ডলার বেশি এসেছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ছে, এটা ভালো। রপ্তানি খাতও গতি পাবে। গতবারের মতো টানা তিন মাস লকডাউন হয়তো দেওয়া লাগবে না। কারণ এবার টিকা এসেছে। তবে পহেলা বৈশাখ, রমজান এবং ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে।

তিনি আরো বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আগের বারের অভিজ্ঞতা থেকে এবার বিজ্ঞানভিত্তিক লকডাউন হয়েছে বলা যায়।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় ঢেউ দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষের আয় কমবে। সবকিছু স্থবির থাকায় স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা ও উৎপাদন কমবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ঢেউয়ের কারণে ইতোমধ্যে অনেকে কর্মহীন হয়েছে। অনেক ছোট কারখানা বন্ধ হয়েছে। সেইসঙ্গে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বলতে গেলে শুধু কৃষি খাতটি এখনো ঠিক আছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের স্বার্থে চলমান নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা ও প্রণোদনা বাস্তবায়নে তদারকি আরো জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, করোনার প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে অর্থনীতির সূচকগুলোর অবস্থা তলানিতে পড়ে যায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও পতন অব্যাহত থাকে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

এতে বলা হয়েছে, করোনার আগে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে তা কমে গেলেও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে এই হারে আবার নিম্নগতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে বাণিজ্য খাতের ঋণ বেড়েছিল ১৩ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুনে তা কমে ৬ শতাংশে নেমে যায়। পরে তা বেড়ে আগের অবস্থানে উঠে আসে। এখন আবার কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রভাবে চাহিদা কমায় গত এপ্রিল ও মে’তে মূল্যস্ফীতির হার কমে গিয়েছিল। সেপ্টেম্বর থেকে চাহিদা কিছুটা বেড়েছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রথম ঢেউয়ে বেসরকারিখাতে কর্মীদের বেতন কমেছে। গত আগস্ট পর্যন্ত কমে তা আবার বাড়তে শুরু করেছিল। নতুন করে তা কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রথম ঢেউয়ের প্রভাবে আমদানি কমায় বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ কমে আসছিল। গত সেপ্টেম্বর থেকে আমদানি বাড়তে থাকে। ফলে এখন আবার বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে শুরু করেছে।

তবে রফতানি আয়, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড় হওয়ায় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বেড়েছে। আমদানি কমায় কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়। এতে চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতির পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে।

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে ঘাটতি ছিল ২১১ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৬ কোটি ডলারে। শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি যেমন কমেছে, তেমনি এলসি খোলার হারও কমেছে।

শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী শিল্পপণ্য আমদানির পরিমাণ কমলেও সম্প্রতি এলসি খোলার প্রবণতা বেড়েছে। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ২ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!