• ঢাকা
  • রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যমুনা লাইফের সিইও পদে বিশ্বজিৎ মন্ডলের নিয়োগ প্রস্তাব নামঞ্জুর


নিজস্ব প্রতিবেদক:  এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
যমুনা লাইফের সিইও পদে বিশ্বজিৎ মন্ডলের নিয়োগ প্রস্তাব নামঞ্জুর

ঢাকা: যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের নিয়োগ প্রস্তাব না-মঞ্জুর করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালা ২০১২ এর ধারা ৭(৬) এর ভুল ব্যাখ্যা করে তার আওতায় আইডিআরএ আমার নিয়োগ না-মঞ্জুর করতে পারে না বলে দাবি করেন বিশ্বজিৎ মন্ডল।

গত ০৬ এপ্রিল আইডিআরএ’র পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) উপসচিব আহম্মদ এহসান উল হান্নান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কর্তৃপক্ষের ১৮২তম সভার বরাত দিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

একইসঙ্গে কোম্পানিটিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য নতুন প্রস্তাব পাঠাতে পরিচালনা পর্ষদকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, যেহেতু ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন বিভিন্ন অনিয়ম সাধন, পূর্বসূরীদের অনিয়মের তথ্য গোপন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালনে ব্যর্থতা (বীমা আইন ২০১০ এর ১৩০(ক) ধারা লংঘন), স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য-কর্মে অবহেলা প্রদর্শন তথা ২০১৮ হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হুসেইন ফরহাদ এন্ড কোং কে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অসহযোগিতার (অধিযাচিত তথ্য-উপাত্ত, রেকর্ডপত্র, প্রমাণক, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী সরবরাহ না করা, আত্মপক্ষ সমর্থনে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বক্তব্য প্রদান) মাধ্যমে বীমা আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারামতে পরিচালিত বিশেষ নিরীক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাহত করেছেন।

যেহেতু, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল উপর্যুক্ত কার্যকলাপ ও আচরণের মাধ্যমে বীমা আইন, ২০১০ সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে বীমাকারী ও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করেছেন। এর ফলে কোম্পানি ও বীমাগ্রহীতাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে বিধায় বীমা আইন ২০১০ এর ৫০(১)(খ) ধারা মতে ২১/০৯/২০২৩ তারিখে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (স্মারক নং: ৫৩,০৩,০০০০,০৩৬,০১,০০১,২৩,৩৬; তারিখ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ হতে অপসারণ করা হয়েছে।

যেহেতু, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অপসারণের বিরুদ্ধে ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল, হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নং ১২২০৪/২০২৩ দায়ের করেন যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। উক্ত স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট করণের নিমিত্ত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চেম্বার জজ আদালতে (সিপি) আপীল দায়ের করা হয়। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য পুনরায় হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করেন এবং সংশ্লিষ্ট আদালত কর্তৃক মামলাটি অদ্যাবধি নিষ্পত্তি হয়নি।

যেহেতু, মামলাটি বর্তমানে চলমান এবং শুনানির জন্য অপেক্ষমান বিধায় বিষয়টি বিচারাধীন আছে। সেহেতু, ড. বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলকে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বা অন্য কোন বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা সমীচীন নয় মর্মে কর্তৃপক্ষের ১৮২তম সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে প্রস্তাবটি বীমা কোম্পানি “মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ” প্রবিধানমালা-২০১২ (৭) (৬) অনুযায়ি না-মঞ্জুর করা হলো।

এতদসঙ্গে, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নতুন প্রস্তাব প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এই চিঠির অনুলিপি যমুনা লাইফের চেয়ারম্যান বরাবরও পাঠানো হয়েছে।

নিয়োগ নামঞ্জুর করার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বজিৎ মন্ডল সোনালী নিউজকে বলেন, আমি হোমল্যান্ড লাইফের চাকুরীতে যোগদান করি ২০২২ সালের ২৪ মে তারিখে। আর ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের বিশেষ নিরীক্ষার অনিয়মের দায় আমার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে আইডিআরএ আমাকে বীমা আইন ২০১০ এর ১৩৪ ধারায় কারণ দর্শায়ে ঐ ১৩৪ ধারার কার্যক্রম শেষ না করে ৫০(১)(খ) ধারার আওতায় আমাকে হোমল্যান্ড লাইফের চাকুরী থেকে অপসারণ করে, যা কিনা সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি।  

আইডিআরএ কর্তৃক ৫০(১)(খ) ধারায় আমার অপসারনের বিষয়টি আমি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করলে আদালত ঐ অপসারণ আদেশটি স্থগিত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে আইডিআরএ চেম্বার জজ আদালতে ও আপিল বিভাগে স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট প্রার্থনা চাইলেও তা দেয়নি। বরং মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে মেরিট বেসিসে নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেয় এবং রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত একটি stastasco প্রদান করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, আইন অনুযায়ী কোনো মামলা চলমান থাকলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে দোষী বলা যায় না। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত আমার অপসারণ আদেশ স্থগিত আছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অপসারিত বলার সুযোগ নেই। 

তিনি বলেন, বীমা আইনের ২০১২ সালের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালার ধারা ৭ মোতাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অপসারনের এখতিয়ার বীমা কোম্পানির। এই ধারা মোতাবেক বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণ ক্ষমতা আইডিআরএ'র নেই।

বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন, আমি কোনো বীমা কোম্পানি কর্তৃক কখনও অপসারিত হই নাই। আমি হোমল্যান্ড লাইফ থেকে চুক্তি পত্রের শর্ত মোতাবেক অব্যাহতি নিয়ে চলে আসি। আমি হোমল্যান্ড লাইফ থেকে ক্লবয়ারেন্স নিয়ে এসেছি। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালা ২০১২ এর ধারা ৭(৬) এর ভুল ব্যাখ্যা করে তার আওতায় আইডিআরএ আমার নিয়োগ না-মন্জুর করতে পারে না। আমি অন্য কোনো কোম্পানিতে চাকরী করার কোনো নিষেধাজ্ঞাও আদালত আমার উপর আরোপ করেনি। আইডিআরএ কর্তৃক আমাকে বাংলাদেশের সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমার আবেদন নামঞ্জুর করে আমার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তার জন্য বিগত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আমি তার ন্যায় বিচার চেয়ে আমার আইনজীবীর মাধ্যমে আইডিআরএ বরাবর ন্যায় বিচারের আবেদনের নোটিশ পাঠিয়েছি।

এএইচ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!