• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

দীর্ঘদিনে অব্যবস্থাপনায় মূলধন ঘাটতিতে ২৩ ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২০, ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
দীর্ঘদিনে অব্যবস্থাপনায় মূলধন ঘাটতিতে ২৩ ব্যাংক

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতির মধ্যে রয়েছে। এই ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত ঘাটতি ১ লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

গত ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে ১৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। মূলত ২৮টি ব্যাংকে ডেফারেল সুবিধা দেওয়ায় ঘাটতির পরিমাণ কমেছে। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ঘাটতি কমলেও ঘাটিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে মার্চ শেষে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে (বিকেবি), যা ১৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি কমে ১২ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিকে অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি ডেফারেল সুবিধা পেলেও বেড়েছে—মার্চে ৫ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ডেফারেল সুবিধা পেয়ে কমে ৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকায়।

বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ডেফারেল সুবিধা পেয়েও বেড়ে ৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ডেফারেল সুবিধা না পেয়ে ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে।

ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি সর্বোচ্চ, মার্চে ১৭ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭ হাজার ৭৯০ কোটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ৬ হাজার ৪৫৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩ হাজার ৯৮১ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৯৮০ কোটি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ১ হাজার ৪৯৯ কোটি এবং এক্সিম ব্যাংক ৫২১ কোটি টাকার ঘাটতিতে রয়েছে।

আইএফআইসি ব্যাংকের ঘাটতি কমে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকেরও ৭ হাজার ৭৯৮ কোটি থেকে ৬ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকায় এসেছে। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ডেফারেল সুবিধা পেলেও ঘাটতি বেড়ে ১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এবি ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ৬৯৩ কোটি, পদ্মা ব্যাংকের ৫ হাজার ১৭১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। নতুনভাবে ঘাটতিতে পড়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক (১ হাজার ১৭১ কোটি), সীমান্ত ব্যাংক (২৬ কোটি), ইউসিবি (৯৫৪ কোটি), সিটিজেন ব্যাংক (৮৬ কোটি) এবং হাবিব ব্যাংক (৩৬ লাখ) টাকা।

মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের মূলধন ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) ৬.৭৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হওয়া উচিত। খেলাপি ঋণও বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডেফারেল সুবিধা সাময়িক চাপ লাঘব করতে পারে, কিন্তু মূল সংকট সারায় না। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যবস্থাপনা না থাকায় ব্যাংক খাতের সমস্যা প্রকট।

গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, "২৩টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের গভীর সংকটকে উন্মোচন করেছে। ডেফারেল সুবিধা সাময়িক সমাধান, স্থায়ী নয়। সিআরএআর ঋণাত্মক হওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। রাষ্ট্রায়ত্ত ও ইসলামি ব্যাংকগুলোতে দুর্বল ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়মই মূল কারণ। দ্রুত সুশাসন, স্বচ্ছতা ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ না হলে পুরো অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।"

ওএফ

Wordbridge School
Link copied!