• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষখেকো মানুষদেরই বংশধর আমরা!


রাশেদ শাওন নভেম্বর ২৩, ২০১৬, ০৭:০৩ পিএম
মানুষখেকো মানুষদেরই বংশধর আমরা!

গরুর একটি ভয়ানক রোগের নাম ‘ম্যাড কাউ’। রোগটি গরুর হলেও মানব দেহে সংক্রমিত হয়ে এটি ধ্বংস করে দিতে পারে পুরো একটি মানব সমাজকে। এখন পর্যন্ত রোগটির তেমন কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসকদের ধারণা, এ রোগের চিকিৎসায় কাজে আসতে পারে মানুষের মগজখেকো একটি আদিবাসী সম্প্রদায়।

মানুষ মানুষের মাংস খাচ্ছে- এমন বিবরণ পাওয়া যায় অনেক দেশের উপকথায়ই। প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি মানুষ মানুষকে খায়, নাকি এর সবই লেখকদের বানানো গল্প। মানুষ খাওয়ার সত্যিকার প্রমাণ আছে কি না? আর খেলে কারা খায়? কেনইবা খায়?

গল্প কাহিনীতে যেমনই লাগুক আফ্রিকার দেশ পাপুয়া নিউগিনির দক্ষিণে ফোর এলাকার লোকেরা পঞ্চশের দশকেও মানুষের মগজ খেতো। অস্ট্রেলিয়ার সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত ওরা ওদের মৃত আত্মীয়দের মগজ খেতো। অনেক সময় আশপাশের গোষ্ঠির সাথে যুদ্ধে শত্রুপক্ষের যারা মারা যেত বা বন্দি হতো তাদের খাওয়ার প্রথা ছিল।

ষাটের দশকে পাপুয়া নিউগিনির এসব লোকের মধ্যে ‘কুরু’ (laughing sickness) নামের একটি রোগ ভীষণভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। এই রোগ হলে আক্রান্তদের প্রথমে নড়াচড়া ও কথা বলায় সমস্যা হতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হাঁটা চলার সামর্থও হারিয়ে ফেলে এবং শেষে মারা যায়।

রোগটার কারণ ঠিক স্পষ্ট ছিল না। তবে বোঝা যাচ্ছিল, যেসব এলাকায় মানুষ খাওয়ার প্রথা আছে সেসব এলাকায় রোগের প্রকোপ বেশি। তাই সত্তরের দশকে এসে অস্ট্রেলীয় সরকার মানুষ খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেয়। এর পরপরই রোগের প্রকোপ বন্ধ হয়ে যায়।

এবারও বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে একই তথ্য। ম্যাড কাউ রোগের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের গবেষক ডা. সিমন খুঁজে পেয়েছেন, ম্যাড কাউ এবং নিউগিনির কুরু রোগের লক্ষণ ও পরিণতিতে মিল আছে। তার গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ম্যাড কাউ রোগাক্রান্ত গরুর মস্তিষ্ক খেলেই ছড়ায় ওই রোগটি।

রোগের চিকিৎসাও খুঁজে পেয়েছেন তিনি। পাপুয়া নিউগিনিতে যখন মানুষখেকো প্রথা ছিল তখন যারা কুরু রোগে আক্রান্ত মৃত মানুষের মগজ খাওয়ার পরও রোগটিতে আক্রান্ত হয় নি এবং এখনো বেঁচে আছে, তাদের জিন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এদের জিনের মধ্যে ম্যাড কাউ রোগের প্রতিষেধক আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়ার কারণেই তাদের মধ্যে এই জিনটি তৈরি হয়েছে।

মজার বিষয় হচ্ছে, শুধু তাদের মধ্যেই নয়, পৃথিবীর সব মানুষের জিনেই এর অস্তিত্ব আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নিউগিনিতে যারা মানুষ খায়, তাদের না হয় এসব জিনের দরকার আছে। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী আমাদের সবার মধ্যে এই জিনের উপস্থিতি কেন? আমরা তো মানুষ খাই না। যেসব জিন ব্যবহার হয় না তারা সাধারণত সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায়। এ গবেষণাটি করতে গিয়েই বেরিয়ে এসেছে আরো অদ্ভূত একটি তথ্য।

আমাদের মধ্যে কেন ম্যাড কাউ প্রতিরোধকারী জিন- বিষয়টি গবেষণা করতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পৃথিবীতে জাতি বর্ণ নির্বিশেষে (কেবল জাপানীরা ছাড়া, তাদের অন্য জিন আছে) সবার মধ্যে কুরু জাতীয় রোগ প্রতিরোধকারী জিনের উপস্থিতির কারণ হতে পারে যে, আমাদের পুর্বপুরুষরা নিকট অতীতেও (১৫ হাজার বছর আগে) মানুষের মাংস খেতো।

মানুষ খাওয়ার চর্চা আমাদের মধ্যেও ভালোভাবেই ছিল। যদিও এখন মেনে নিতে কষ্ট হয়। আসলে আমাদের ভেতরের মানুষখোকো মানুষটা এখনো ঠিক মরে যায় নি। সংস্কার আর সভ্যতার চাপে হয়তো আপাতত লুকিয়ে আছে। তো মানুষখেকো মানুষ কারা? এক অর্থে, সুযোগ পেলে আমরা সবাই।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!